খেলাঘরখেলাঘর

title image

সন্ধ্যা বেলা হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম। এক ঝলক ঠাণ্ডা হাওয়ার সাথে সাথে একটা হালকা মিষ্টি গন্ধ ভেসে এল। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে চিনে ফেললাম গন্ধটা। এদিক সেদিক খুঁজতেই চোখে পড়ল গাছটা, একটা পাঁচিলের পেছনে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার ছোট্ট ঘুমন্ত ফুলগুলির মনমাতানো সুবাস জানিয়ে দিচ্ছে চুপিচুপি - পুজো এসে গেছে।

মন খুশী খুশী হয়ে গেল। শিউলিফুলের গন্ধটা মনে পড়িয়ে দিল কত ভুলে যাওয়া কথা। ছোটবেলায় পুজো মানেই ছিল বাবা, মা, ভাই আর আমি - সবাই মিলে ট্রেনে চেপে চন্দননগরে দাদুর বাড়ি যাওয়া। সে যে কি আনন্দ সেখান - বাড়ি ভর্তি কাকা পিসির দল - পড়াশোনা বন্ধ, খালি খেলা আর ঠাকুর দেখা, মেলায় যাওয়া আর খেলনা কেনা।বাবার শাসন ও অনেক কমে যেত ঐ কদিন।

পুজো আসার দুই এক মাস আগে থেকে নতুন জামা কেনা হত। মামা আসতেন নতুন জামা কিনে দিতে। মনে সবসময় কি  যেন একটা আনন্দ... এবার ট্রেনে চেপে বেড়াতে যাওয়ার দিন এল। কিন্তু সত্যি সত্যি যে যাচ্ছি, সেটা বুঝতে পারতাম যখন আলমারির মাথা থেকে নামত লাল চামড়ার কিট ব্যাগ; রান্নাঘরের কোণা থেকে বের করে পরিষ্কার করা হত সবুজ কম্বলে মোড়া জলের বোতল -কম্বলে মোড়া থাকত জল ঠাণ্ডা হবে বলে; আর বেরোত বাবার একটা জামা - নীল -কালো ফুটকি ফুটকি ছাপ। বাবা ঐ জামাটা একমাত্র ট্রেনে চেপে বেড়াতে গেলে পরতেন। ইশকুলে পরাতেন তো, তাই সারাবছর গম্ভীর গম্ভীর সাদা, ছাই, হালকা নীল,এইসব একঘেয়ে জামা পরতেন। পুজোর কদিন বাবা মনে হয় ঐ জামাগুলোকেও ছুটি দিতেন।

সব মনে পড়িয়ে দিল সন্ধ্যাবেলার শিউলিফুলের গন্ধ। সেই লাল ব্যাগ টা ছিঁড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। সবুজ জলের বোতলটাতো  একবার ট্রেনে হারিয়ে গেছিল। বাবার সেই ফুটকি ফুটকি জামাটা পরে পরে খারাপ হয়ে গেছে বলে আলমারিতে তুলে রাখা আছে। বাবা ওটা এখন আর পরেন না। আমিও বড়ো হয়ে গেছি। ট্রেনে চাপতে গেলে আনন্দের বদলে ভিড় দেখে বিরক্ত হই। কিন্তু শিউলি গাছকে দেখ একবার !!  ঠিক প্রতি বছর ফুল ফুটিয়ে , সেই ফুল ভোরবেলা ছড়িয়ে জানান দেয় - শরত্‌কাল এসেছে। পুজো এসেছে। ঘরে ফেরার সময় হল।

 

মহাশ্বেতা রায়

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।