খেলাঘরখেলাঘর

ছোট্ট ইডার ফুল গুলি

"আমার সব ফুলগুলো প্রায় মরেই গেল", বলল ছোট্ট ইডা, " গতকাল সন্ধাবেলায় এগুলি কত সুন্দর ছিল, আর এখন, সব পাতাগুলি কেমন ঝুলে পড়েছে। এরকম কেন হয় ..."  সে সোফায় বসে থাকা তার বাবার ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করল। এই ছাত্রকে তার খুব পছন্দ, সে নানারকমের মজার মজার গল্প  বলে, সুন্দর সুন্দর ছবি কেটে দেয়ঃ মেয়েরা নাচছে, দরজা খুলে যাওয়া রাজপ্রাসাদ, ফুল, পাতা; ওকে তার খুব পছন্দ। " আমার ফুলগুলি আজকে এত ফ্যাকাশে লাগছে কেন?" সে আবার জিজ্ঞাসা করল, নিজের হাতের শুকিয়ে যাওয়া ফুলের তোড়াটার দিকে তাকিয়ে।

"তুমি জাননা ওদের কি হয়েছে?" ছাত্রটি বলল, " ফুলগুলি গত রাতে একটা বল নাচের আসরে গেছিল, আর সেই কারণে, খুব স্বাভাবিকভাবেই, ওরা ক্লান্ত।"

"কিন্তু ফুলেরা কি নাচতে পারে?" অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল ছোট্ট ইডা।

"হ্যাঁ , অবশ্যই, ওরা নাচতে পারে, " বলল ছাত্রটা। " যখন অন্ধকার হয়ে যায়, আর সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, ওরা তখন আনন্দে নেচে বেড়ায়, প্রায় প্রতি রাত্রেই।"

" ছোটরা কি এই নাচের আসরে যেতে পারে?"

"হ্যাঁ, " বলল  সেই ছাত্র। " ছোট্ট ছোট্ট ডেইসি আর লিলি অফ দ্য ভ্যালি।"

"এই সুন্দর ফুলগুলি কোথায় নাচতে যায়?" জিজ্ঞেস করল ছোট্ট ইডা।

"তুমি কি শহরের দরজার বাইরে বিরাট প্রাসাদটাকে দেখনি, যেখানে রাজা গ্রীষ্মকালে থাকতে আসেন, আর যেখানে একটা ফুলে ভর্তি দারুণ সুন্দর বাগান আছে? আর যখন রাজহাঁসগুলি তোমার দিকে ভীড় করে এসেছে, তুমি তাদেরকে রুটি খেতে দাওনি? ঐখানেই, ফুলেদের নাচের আসর বসে, বিশ্বাস কর !"

" আমি তো গতকালই মায়ের সাথে ওই বাগানে গেছিলাম, " বলল ইডা, " কিন্তু সব গাছ থেকে পাতা পড়ে গেছিল, আর একটা  ফুল ও ছিল না। ওরা সব কোথায় গেল? আমি গরমকালে কত ফুল দেখেছিলাম।"

" ওরা সবাই রাজপ্রাসাদে ছিল, " বলল সেই ছাত্র, " শোন, যেই রাজা আর তাঁর মন্ত্রী-সান্ত্রীরা রাজপ্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে যান, সব ফুলগুলি তখন বাগান ছেড়ে প্রাসাদে চলে যায়, আর খুব আনন্দে থাকে। সবথেকে সুন্দর দুটো গোলাপফুল সিংহাসনে বসে, তাদেরকে বলা হয় রাজা আর রানী, আর লাল মোরগঝুঁটি ফুলেরা দুই পাশে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ করে, তারা যেন রাজসভার অমাত্য। তারপরে সুন্দর ফুলেরা সবাই সভায় আসে, আর এক বিশাল নাচের আসর বসে। নীলরঙা ভায়োলেটরা হয় নৌসেনা, আর তারা হায়াসিন্থ আর ক্রোকাস্‌দের মত সুন্দরী মেয়ে ফুলেদের সাথে নাচ করে। টিউলিপ আর টাইগার লিলিরা হয় বয়স্ক অভিজাতদের মত, তারা খেয়াল রাখে রাজসভার নাচ নিয়ম কানুন মেনে হচ্ছে কিনা।"

" কিন্তু, " জিজ্ঞেস করল ছোট্ট ইডা, " রাজার প্রাসাদে নাচ করার জন্য কেউ ফুলগুলিকে বকে না?"

"কেউ তো জানতেই পারে না, " বলল সে ছাত্র। "প্রাসাদের বুড়ো প্রহরী, যে কিনা রাতের প্রহরায় থাকে, সে মাঝে মাঝে ভেতরে আসে; কিন্তু তার সঙ্গে থাকে একটা বিশাল বড় চাবির গোছা, আর ফুলেরা যখনই সেই চাবিগুলির ঝন্‌ঝন্‌ শব্দ শুনতে পায়, তারা গিয়ে লম্বা পর্দাগুলির পেছনে লুকিয়ে পড়ে, আর চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, শুধু মাঝেমধ্যে একটু উঁকি মারে। আর বুড়ো প্রহরী বলে, " আমি ফুলের গন্ধ পাচ্ছি..." , কিন্তু কিছুই দেখতে পায় না।"

"ওহ, কি দারুণ ব্যাপার," হাততালি দিয়ে বলল ছোট্ট ইডা, " আমি কি এই ফুল গুলিকে দেখতে পাব?"

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।