খেলাঘরখেলাঘর

ছোট্ট ইডার ফুলগুলি

এই সময়ে  যে ড্রয়ারের ভেতরে ইডা সোফিকে ঢুকিয়ে রেখেছিল। তার ভেতর থেকে জোরে ঠকঠক আওয়াজ শোনা গেল। সেই শুনে কাপড়ের পুতুলটা এক দৌড়ে টেবিলের কোণায় গিয়ে, হুমড়ি খেয়ে পড়ে, ড্রয়ারটাকে টেনে খুলল।

তখন সোফি ভেতর থেকে উঁকি মেরে, চারিদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল, " আজ রাতে মনে হচ্ছে এখানে একটা বল্‌ নাচের আসর বসেছে...আমাকে কেউ বলেনি কেন?"

"তুমি আমার সাথে নাচ করবে?" জিজ্ঞাসা করল কাপড়ের পুতুলটা।

" হ্যাঃ, তোমার সাথে নাচ করি আর কি !" এই বলে সোফি মুখ ঘুরিয়ে পিছু ফিরে বসল।

সে ড্রয়ারের কোনায় পা ঝুলিয়ে বসে ভাবল, কোন একটা ফুল হয়ত তাকে নাচ করতে ডাকবে, কিন্তু কেউ এল না। তখন সে খুক খুক করে একটু কাশল, তা শুনেও কেউ এলনা। ওদিকে কাপড়ের পুতুলটা নিজে নিজেই নাচছে, আর খুব একটা খারাপ নাচ করছে না। যেহেতু কোন ফুলই তার দিকে নজর দিচ্ছে না, তাই সোফি ড্রয়ার থেকে মেঝেতে লাফ দিল, যাতে খুব জোর আওয়াজ হয়। সেই শুনে সব ফুলেরা তার দিকে দৌড়ে এল, আর জিজ্ঞাসা করল, তার কোথাও লেগেছে কিনা - বিশেষ করে সেই ফুলগুলি যারা তার বিছানায় শুয়ে ছিল। কিন্তু তার তো লাগেইনি। আর ইডার ফুলগুলি তার সঙ্গে খুব ভাল করে কথা বলল আর তাকে ধন্যবাস জানাল তার সুন্দর বিছানাটা তাদেরকে ব্যবহার করতে দেওয়ার জন্য। তারা তাকে ঘরের মাঝখানে, যেখানে চাঁদের আলো এসে পড়েছিল, নিয়ে গেল, আর তার সঙ্গে নাচ করল। অন্য সব ফুলেরা তাদের ঘিরে ঘিরে নাচতে থাকল। তখন সোফি খুব খুশি হল, আর তাদেরকে বলল, তারা চাইলে তার বিছানায় আরো বেশি সময় থাকতে পারে, তার ড্রয়ারে থাকতে আপত্তি নেই। কিন্তু ফুলগুলি তাকে অনেক করে ধন্যবাদ জানাল, আর বলল -

"আমরা বেশিদিন তো বেঁচে থাকতে পারব না। আগামি কাল সকালে আমরা আরো শুকিয়ে যাব; আর তুমি ছোট্ট ইডাকে বলে দিও আমাদের যেন বাগানে ক্যানারি পাখির কবরের পাশে মাটি চাপা দিয়ে দেয়,  তাহলে, পরের গ্রীষ্মে, আমরা আরো সুন্দর হয়ে ফুটে উঠব।"

"না, তোমরা মরে যেতে পারবে না, " বলে সোফি ফুলেদের চুমু খেল।

তারপরে ঘরের অন্য দরজাটা খুলে গেল, আর একগাদা ফুল নেচে নেচে ঘরে ঢুকল। ইডা ভেবেই পেল না তারা কোথা থেকে এসেছে, এক যদি না তারা রাজার বাগানের ফুল হয়। প্রথমে এল মাথায় ছোট্ট সোনালি মুকুট পরা দুটি গোলাপ, তারা রাজা আর রানী। তাদের পিছু পিছু এল সুন্দরী স্টক আর কার্নেশনরা, তারা সবাইকে মাথা ঝুঁকিয়ে অভিবাদন জানাল। তাদের সঙ্গে বাজনার ব্যবস্থাও ছিল। বড় বড় পপি আর পিওনিরা বাদামের খোলা দিয়ে বাজনা বানিয়েছিল, আর তাতে ফুঁ দিয়ে দিয়ে নিজেদের মুখ লাল করে ফেলেছিল। নীল হায়াসিন্থ আর সাদা স্নো-ড্রপেরা নিজেদের ঘন্টার মত দেখতে ফুলগুলিকে নাড়িয়েই যাচ্ছিল, যান সেগুলি সত্যিকারের ঘন্টা। তারপরে এল আরো অনেক ফুল ঃ ভায়োলেট, ডেইসি, লিলি অফ দ্য ভ্যালি, আরো অনেকে, আর তারা সবাই একসঙ্গে নাচ করতে থাকল। সে এক দেখার মত দৃশ্য হল বটে!

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।