খেলাঘরখেলাঘর

বোকা রাজহাঁস


এদিকে, রাত হলে দুর্গের মধ্যে একা থাকতে থাকতে ছোট মেয়েটার ভীষন ভয় করতে লাগল। তার মনে হতে লাগল ভাইদের ছাড়া সে থাকতে পারবে না এক মূর্হুতও, আর যেমনি ভাবা তেমনি কাজ, সে রাতেই সে একছুট্টে বনের দিকে বেরিয়ে গেল যেদিকে তার ভাইয়েরা রাজহাঁস হয়ে উড়ে গেছে। সারা রাত ধরে এতটুকু না থেমে ছোট মেয়েটা হাঁটতে থাকল বন পেরিয়ে বড় বড় গাছ পেরিয়ে, এমনকি তার পরেরদিন সারা সকাল ধরেও সে হাঁটতে লাগল বনের ভেতর দিয়ে, যতক্ষন না সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সন্ধ্যে নামার খানিক আগেই বনের ভেতর সে একটা পোড়ো বাড়ি দেখতে পেল। চুপিসারে বাড়িটার কাছাকাছি আসতেই তার চোখে পড়ল ঘরের ভেতর ছটা ছোট ছোট খাট পাতা। এতখানি পথ পেরিয়ে এসে এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল রাজার ছোট মেয়ে যে সে ঐ খাটের ওপরই রাতটা কাটিয়ে দেবার কথা ভাবল কিন্তু কিছুতেই সে খাটের ওপর উঠতে পারল না। শেষমেশ খাটের তলাতেই সে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল; সন্ধ্যে নামার একটু আগেই ডানার ঝটপট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল তার; চোখ খুলতেই সে দেখল ছটা রাজহাঁস কোথা থেকে উড়ে এসে জানলার ধারে বসে একে অন্যের ডানার পালক খুঁটে দিচ্ছে, আর কিচ্ছুক্ষন পরেই তাদের সব ডানা খুলে পড়ে যেতেই ছোট মেয়ে অবাক হয়ে গেল রাজহাঁসের জায়গায় তার ছয় ভাইকে দেখে; ররাজার মেয়ে তো তখন যারপরনাই খুশী তার হারিয়ে যাওয়া ভাইয়েদের পেয়ে; ভাইয়েরাও তাদের একমাত্র বোনকে দেখতে পেয়ে ভীষন খুশী কিন্তু পরক্ষনেই তাদের মন দুঃখে ভরে গেল। তাদের একমাত্র বোনের কথা ভেবে চোখ জলে ভরে এল; তারা তাদের বোন কে বোঝালো যে এই পোড়ো বাড়িটা আসলে একটা ডাকাতদের আড্ডা আর তাই রাত হলেই ডাকাতরা সব চলে এলে তাদের ছোট বোন কে দেখলেই তারা তাকে মেরে দেবে। বোন তো ছোট, সে কি এত বোঝে! সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না যখন তার ছ ছটা ভাই তার সাথেই রয়েছে তাহলে ডাকাতদের ভয় পাওয়ার কি আছে! আসলে তাদের সৎমা মানে সেই ডাইনীর মেয়ের দেওয়া যাদুমন্ত্রে তার ছয় দাদারা সারাদিন রাজহাঁস হয়ে উড়ে উড়ে বেড়াত আর কেবল সন্ধ্যের ওই আধ ঘন্টাই তাদের ডানার পালক খসিয়ে মানুষ হতে পারত;
পুরো ঘটনা জেনে ছোট মেয়েটা কেঁদে উঠল, সে তার দাদাদের বলল তোমরা কি রানীর দেওয়া এই যাদুমন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারোনা?
তখন তার দাদারা বলল, সে ভারি শক্ত উপায়; রাজহাঁস থেকে মুক্ত করার একটাই উপায় আর তা হল ছ বছর ধরে তাদের ছোট বোন কোন কথা বলতে পারবেনা আর হাসতেও পারবে না আর এই ছ বছরে তাদের জন্য সাদা ঘাসের ছটা ছোট ছোট জামা তাকে বানাতে হবে ; জামা বানাতে বানাতে এই ছ বছরের মধ্যে যদি একটাও কথা সে বলে ফেলে কিমবা হেসে ফেলে একটুও তাহলে আবার শুরুর থেকে তাকে জামা বানাতে হবে; এই বলতে বলতে সন্ধ্যের সেই আধ ঘন্টা ফুরিয়ে গেল আর দাদারাও আবার রাজহাঁস হয়ে ওই পোড়ো বাড়ি থেকে উড়ে বনের দিকে ফিরে গেল।
সেই থেকে ছোট বোনও মনকে শক্ত করে প্রতিজ্ঞা করল যে করেই হোক তার নিজের প্রানের বিনিময়েও সে তার দাদাদের উদ্ধার করবে আর এই ভাবতে ভাবতে সেও ওই পোড়ো বাড়ি ছেড়ে বনের দিকে ফিরে গেল; যেতে যেতে যেতে অনেক দূরে একটা বড় গাছের নিচে এসে সে বসে পড়ল আর অনেক সাদা ঘাস এরমধ্যেই সে জোগাড় করেছে বনের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে; সেই ঘাস দিয়ে সে একমনে জামা বানাতে লাগল; ঠিক করল মুখে একটাও শব্দ করবে না আর হাসবেও না ছ বছরের জন্য যতক্ষন না দাদাদের জন্য সে ঘাসের জামা তৈরী করতে পারছে।

More articles from this author