খেলাঘরখেলাঘর


সেই টাকা ব্যয় করে কিছুদিন চলল, কিন্তু যখন সেই টাকা শেষ হয়ে গেল, আহমেদ আর তার বাবা আবার কষ্টে পড়ল। একজন ব্যবসায়ী তার বাবাকে বলল রাজ্যের রাজধানীরে ব্যবসা অনেক ভাল চলে। সেই শুনে তারা রাজধানীর দিকে যাত্রা শুরু করল, যদিও সেই পথ ছিল অনেক দূর আর বিপদে ভরা। "শহরের মধ্যে মরার থেকে মরুভূমিতে মারা যাওয়া অনেক ভাল, " বলল আহমেদ।

তাই তারা তাদের যাত্রা শুরু করল, কখনও পাহাড়ের পাকদন্ডী বেয়ে বেয়ে, কখনও মরুভূমির মধ্যে দিয়ে। তাদের পা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল, ক্ষিদে- তেষ্টায় প্রাণ শুকিয়ে গেল, তার মধ্যে সবসময়ই ছিল ডাকাতের ভয়।

প্রচন্ড গরমে এবং হিংস্র ডাকাতদের ভয়ে তারা রাত্রে পথ চলত। । চাঁদের আলোয় বড় পাথরের ছায়া দেখলেই তাদের মনে হত ঘোড়ায় চড়া এক ডাকাত। দিনের বেলা তারা পথের ধারে ছোট্ট ছোট্ট পান্থশালাগুলিতে ঘুমাত। আহমেদ অন্যান্য পথিক ব্যবসায়ীদের টুকটাক কাজ করে দিত, তার বদলে পেত রুটি অথবা একমুঠো ভাত, অথবা কিছু শুকনো ফল যা দিয়ে তারা পেট ভরাত।

এইরকম চলতে থাকল, তারপর এক রাতে, যখন তারা লবণে ভরা নদী পার হওয়ার জন্য সেতুটা খুঁজছিল, আকাশ হটাত করে কালো মেঘে ঢেকে গেল, ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়তে লাগল, আর দ্রুত নদীর জল ফুলে ফেঁপে উঠল।  চাঁদ ওঠার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া ওদের আর কিচ্ছু করার ছিল না। জোর হাওয়া ওদের আক্রমণ করতে লাগল, বৃষ্টি ওদের ভিজিয়ে দিল। চারিদিকে বন্য জন্তুর ডাক শোনা যেতে লাগল। ওরা পথ হারিয়ে ফেলেছিল।

একবার, যখন বাতাসের তেজ একটু কম হল, অন্ধকারের মধ্যে থেকে একটা গোঙ্গানির আওয়াজ ভেসে এল। সেই শব্দ শুনে আব্দুল্লাহ আহমেদকে বলল, "একদম চুপ করে বসে থাক বাছা, কারণ এটা হল মরুভূমির বুড়োর আওয়াজ।"

এখন, আহমেদ কোন দিন মরুভূমির বুড়োর কথা শোনেনি, তাই তার মনে কোন ভয় ছিল না, তাই তার বাবা তাকে বারণ করা সত্বেও, সে উঠে আওয়াজটা যেদিক থেকে আসছিল সেইদিকে চলল। যখন সে সেইখানে পৌঁছাল, তখন মেঘের পেছন থেকে চাঁদ বেরিয়ে এল, আর আহমেদ দেখতে পেল এক গরীব দরবেশ বালির ওপর পড়ে আছে। তার কাঁধের ওপরে একটা চিতাবাঘের চামড়া ফেলা ছিল। তার পাশে রাখা ছিল বড় বড় পেরেক গাঁথা একটা লাঠি , আর দান গ্রহণ করার জন্য একটা কুমড়োর খোলের পাত্র।"

"আল্লাহর নামে আমাকে একটু জল দাও," সেই দরবেশ আহমেদকে দেখে বল্লেন। আহমেদ তার জলের পাত্র ভরে নদী থেকে জল এনে দিল।

জল পান করে সেই দরবেশের যেন একটু স্বস্তি হল। তিনি বললেন, " আমি আলি, আমাকে সারা পারস্যের সবাই চেনে।  আমি দুই মাস আগে মেশেদ যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলাম। কিন্তু গতকাল থেকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমি  বুঝতে পারছি আমি আর বাঁচব না।
তুমি আমার সঙ্গেথাক। আমি একটু পরেই মারা যাব। আমি মারা গেলে, আমার গলায় ঝুলতে থাকা এই ছোট্ট চামড়ার থলেটা নিয়ে নিও, তার ভেতরে তুমি পাবে একটা ছোট্ট  স্ফটিকের পাণপাত্র, যেটাকে তুমি সঠিক ভাবে ব্যবহার করলে জীবনে অনেক শক্তি আর অর্থ পাবে।

প্রতি সকালে তুমি যখন ঘুম থেকে উঠবে, এই পাত্রের ভেতরে একফোঁটা পরিষ্কার জল ফেলবে, আর খুব ভাল করে তার দিকে লক্ষ্য রাখবে। যদি তোমার বা তোমার প্রিয়জনেদের কোন বিপদ আসে, তাহলে সেটা এই জলের মধ্যে দেখতে পাওয়া যাবে। আর যদি..." বলতে বলতে তাঁর শক্তি ফুরিয়ে এল, তাঁর মাথা হেলে পড়ল, তিনি মারা গেলেন। আহমেদ থলেটা আর স্ফটিকের পাত্রটা খুঁজে পেল, ঠিক যেমন দরবেশ বলেছিলেন, এবং তার বাবার কাছে ফিরে গিয়ে সব কথা খুলে বলল।

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।