খেলাঘরখেলাঘর


দরবেশ যেমন বলেছিলেন, আহমেদ ঠিক সেইরকম প্রতিদিন সকালে করতে থাকল, কিন্তু সে সেই স্ফটিকের পাত্রের ভেতর কিছুই দেখতে পেল না। তখন সে অভ্যাসটা ছেড়ে দিল। তারপরে একদিন এল, যেদিন এক হটাত ধূলোর ঝড়ে দিগবিদিক ছেয়ে গেল। ধূ ধূ বালির ওপর দিয়ে বাতাস উড়ে যেতে লাগল, আকাশ এবং সূর্য ঢেকে গেল, বাতাস ধূলোয় ভরে গেল, আর বাতাসে উড়ে আসা ছোট পাথরের টুকরোগুলি তাদের ক্ষতবিক্ষত করে দিল। চারিদিকে কোন আশ্রয় ছিল না।

ভয়ে আর যন্ত্রণায় তারা এদিক ওদিক  ছোটাছুটি করতে লাগল, আর যখন অনেক ঘন্টা পরে, ঝড় থেমে গেছে, তখন তারা একে অপরকে দেখতে পেল না। তারা সেই নিষ্ঠুর মরুভূমিতে হারিয়ে গেছিল, তাদের কাছে খাদ্য তো দূর, জলই ছিল না। হতাশায় কাঁদতে কাঁদতে, আহমেদ এগিয়ে চলল, ঠিক যেন স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার মত। চলতে চলতে সে পাথর আর কাঁটাঝোপের ওপর পড়ে যেতে থাকল ,কিন্তু তাও সে এগিয়ে চলল। এইভাবে এক সময় এক যখন সে আর এগোতে পারল না, সে বালিতে পড়ে গেল, আর তার মনে হল সে মরেই যাবে।

অনেক্ষণ ধরে সে ঘুমিয়ে ছিল, তারপরে কে যেন তাকে নাড়িয়ে দিয়ে তার ঘুম ভাঙাল। চোখ খুলে , সে দেখতে পেল এক বুড়ো মানুষ তার দিকে তাকিয়ে হাসছে আর বলছে, " আরে, এ তো দেখছি আহমেদ, সাবানওয়ালা আব্দুল্লাহের ছেলে। তুমি আমাকে চেন না আহমেদ? আমি তোমার চাচা। পথ হারিয়ে ফেলেছ বলে কেঁদনা। এস, আমার হাত ধর আর আমরা তোমার বাবাকে খুঁজে বার করব চল।"

আহমেদ ভাবতে লাগল সে কেন কোনদিন এই চাচাকে দেখেনি বা তার আব্বার কাছে এর সম্পর্কে শোনেনি।  তবুও সে আব্বাকে খুঁজে পাওয়ার আশায় সেই বুড়োর সাথে চলল। অনেক অনেক পথ তারা পেরিয়ে গেল, কিন্তু তার আব্বাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। তখন সে কেঁদে ফেলে বসে পড়ল, আর বললঃ"আমি এত ক্লান্ত, আমি আর চলতে পারব না।" আর সেই বুড়ো উত্তর দিলঃ "ঘুমাও বাছা, আমি সব দিকে নজর রাখছি।"

কিন্তু আহমেদ যখনি চোখ বুজতে গেল, সেই বুড়ো পিছু ফিরল, আর আহমেদ দেখল তার পা গুলো ভেড়ার মত সরু সরু। সে ভয়ের চোটে চিৎকার করে উঠল, "ঘুল, ঘুল" । ঘুল ছিল মরুভূমির  রাক্ষস। আহমেদ অজ্ঞান হয়ে যেতে সে আহমেদের রক্ত খাওয়ার জন্য তার ওপর লাফিয়ে পড়ল।

কিন্তু আহমেদের চিতকারের জবাব এল আরেকটা চিতকারে, আর সেখানে এসে উপস্থিত হল এক সুন্দরী মেয়ে, গলায় তার সোনা -রূপোর পুঁতির মালা। সেই মালার দিকে চোখ পড়তেই সেই বুড়ো বিদ্যুতগতিতে উড়ে চলে গেল, কারণ ধাতু দেখলে তার খারাপ ক্ষমতাগুলি সব লুপ্ত হত।

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।