খেলাঘরখেলাঘর

এরপর শুরু হল এক অফুরন্ত সুখের সময়। মা, ছেলে, কুকুর আর বিড়াল - সবাই মনের আনন্দে পেট ভরে খেতে লাগল। সেই ছোট্ট পোকাটাকে দিয়ে তারা  আগে কোনদিন না খাওয়া নানারকমের লোভনীয় খাবার আনাত। মাংসের কালিয়া, বিরিয়ানি, পায়েস আর আরো নানারকমের দারুণ সব খাবার চাইলেই এসে হাজির হত, আর খুব দ্রুত মিং-লির তার সব হারানো শক্তি ফিরে পেল, কিন্তু, মনে হয়, সে একটু অলস হয়ে পড়ল, কারণ তার আর কাজ করার প্রয়োজন ছিল না। আর কুকুর আর বিড়ালটা আরো মোটা হয়ে পড়ল, তাদের গায়ের লোম গুলি লম্বা আর চকচকে হয়ে উঠল।


কিন্তু হায়! যেমন কিনা চীনা প্রবাদে বলে, গর্ব ডেকে নিয়ে আসে দুঃখকে। এই ছোট্ট পরিবার তাদের সৌভাগ্যে এত গর্বিত হয়ে পড়ল যে তারা তাদের বন্ধু এবং আত্মীয়দের ঘনঘন খেতে ডাকতে থাকল নিজেদের ভাল খাবার দেখানোর জন্য। একদিন সুদূর গ্রাম থেকে নিমন্ত্রণ খেতে এল চু পরিবারের কত্তা-গিন্নী। তারা ওয়াংদের বাড়ির অবস্থা দেখে বেশ অবাক হল। তারা ভেবে এসেছিল গরিবের মত খেতে পাবে, কিন্তু তার বদলে পেট পুরে খেয়ে ফিরে গেল।

"এ আমার খাওয়া সেরা ভোজ" , নিজেদের ভাঙ্গা বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে চু কত্তা বলল।

"হ্যাঁ, আর আমি জানি ওগুলি কোথা থেকে এসেছে", তার গিন্নী বলল। "আমি দেখেছি বুড়ি ওয়াং তার রান্নার হাঁড়ি থেকে একটা ছোট্ট সোনার গয়না বার করে একটা দেরাজে তুলে রাখল। ওটা নিশ্চয় জাদুর কিছু হবে, কারণ আমি শুনতে পাচ্ছিলাম আগুন উসকাতে উসকাতে ও পোলাও-কালিয়া নিয়ে কি সব যেন বিড়বিড় করছিল।

"একটা জাদু মন্ত্র, অ্যাঁ? সবসময়ে অন্য লোকেরাই সব সৌভাগ্য পায় কেন? মনে হচ্ছে আমাদের সারা জীবন গরীবই থেকে যেতে হবে।"

"এক কাজ কেন করিনা- ওয়াং বুড়ির জাদুমন্ত্রটাকে আমরা কিছুদিনের জন্য ধার নিই না কেন, যদ্দিন না আমাদেরও গায়ে একটু গত্তি লাগে? এ তো কিছু অন্যায় নয়, আর হ্যাঁ, আমরা ওটাকে কিছুদিন পরে ফেরতও দিয়ে দেব।
"

"ওরা নিশ্চয় জিনিষটাকে খুব যত্নে রাখে। ওদের এখন কোন কাজ করতে হয়না, তাই ওদের বাড়ি ফাঁকা পাবে কখন? আর ওদের বাড়িতে একটা ঘর, সেটাও আমাদের ঘরের মতই, আর তাই ঐ সোনালি জাদুর জিনিষটাকে খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিণ। কথায় বলে, রাজার ঘরে চুরি করার থেকে ভিখিরির ঘরে চুরি করা বেশি শক্ত।

"আমাদের ভাগ্য আমাদের সহায়," হাত চাপড়ে বলে উঠল চু গিন্নী।" ওরা আজকেই মন্দিরের মেলায় যাচ্ছে। আমি শুনেছি ওয়াং গিন্নী তার ছেলেকে বলছে সে যেন মনে করে তাকে দুপুরবেলা নিয়ে যায়। আমি সেই সময়ে ফিরে গিয়ে ওই জাদুর জিনিষটাকে ওর দেরাজ থেকে বার করে নিয়ে আসব।

"তোমার ভুলুকে ভয় নেই?"

"ধুস্‌! ও ব্যাটা এত মোটা হয়েছে যে খালি গড়ায়। যদি বুড়ি হটাত করে ফিরে আসে, আমি তাহলে বলব আমি নিজের বড় চুলের কাঁটাটা খুঁজতে এসেছি, যেটা আমি খেতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছিলাম।"

"বেশ ভাল, তাহলে যাও, কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা জিনিষটা খালি ধার নিচ্ছি, চুরি করছি না, কারন ওয়াংরা আমাদের ভাল বন্ধু, আর তাছাড়াও, আমরা ওদের বাড়ি থেকে সবে খেয়ে ফিরলাম।"

চু গিন্নী গেল আর এক ঘন্টার মধ্যে বাড়ি ফিরে এসে আনন্দে গদগদ হয়ে তার স্বামীকে সেই পুরোহিতের উফার দেখাল। একটা মানুষও তাকে ওয়াংদের বাড়ি ঢুকতে দেখেনি। কুকুরটা সাড়াশব্দ করেনি, আর বিড়ালটা খালি একবার চোখ খুলে দেখে, বাড়িতে অতিথি দেখে একটু অবাক হয়ে আবার তার দিবানিদ্রায় ফিরে গেছে।

ওদিকে মেলা থেকে ফিরে গরমাগরম খাবার খাবে এই ভেবে এসে, ওয়াং বুড়ি তার জাদুপোকা খুঁজে না পেয়ে মহা কান্নাকাটি জুড়ে দিল। সে সত্যিটা বিশ্বাসই করতে চাইছিল না। সে দেরাজের ভেতরে অন্তত দশবার খুঁজল, আর তারা মায়ে-ছেলেতে মিলে ঘরে ভেতর এমন খোঁজা খুঁজল যে মনে হল ঝড় বোয়ে গেছে।

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।