তারপরে এল ক্ষুধার্ত থাকার দিন, যা আরো কষ্টকর হয়ে উঠল, কারণ তারা এ ক'দিনে ভালমন্দ খেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আহা, তাদের যদি এহেন অভ্যাস না হত! আবার সেই খুঁটে খুঁটে খাওয়ার দিনে ফিরে যেতে কি কষ্টই না হল।
কিন্তু, ভাল খাবার না পেয়ে, বুড়ি আর তার ছেলের থেকেও বেশি কষ্ট হল পোষ্য দুটির। তাদের অবস্থা আবার আগের মত হল আর রোজ তাদের রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে থাকা হাড়গোড় খুঁজতে হত, যাঅন্য বড়লোকের বাড়ির কুকুর বিড়ালেরা ছুঁয়েও দেখত না।
এরকম কিছুদিন চলার পরে, একদিন পুষি হটাত উত্তেজনায় ফোঁসফোঁস করে উঠল।
"তোর হলটা কি?" ধমক দিল ভুলু।" তুই কি খিদেয় পাগল হলি, নাকি আবার এটা মাছি ধরেছিস?"
"আমি আমাদের দুরবস্থার কথা ভাবছিলাম, আর এখন আমি বুঝতে পারছি সব সমস্যার কারণ কি।"
"তুই জানিস?" বিদ্রুপের সুরে বলল ভুলু।
"হ্যাঁ, আমি জানি, আর তুই আমাকে তাচ্ছিল্য করার আগে দু'বার ভাব, কারণ তোর ভবিষ্যত আমার হাতের মুঠোয়, সেটা তুই কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারবি।"
"আচ্ছা , আচ্ছা, শুধুমুধু রাগ করিস না। কি এবন অসাধারণ আবিষ্কার তুই করেছিস - যে সব ইঁদুরদের একটা করে লেজ আছে?"
"সবার আগে বল, তুই কি আমাদের পরিবারের সৌভাগ্য ফিরিয়ে আনতে আমাকে সাহায্য করতে চাস?"
"অবশ্যই চাই। বোকার মত কথা বলিস না, " আবার ভালমন্দ খাওয়ার আশায় কুকুরটা লেজ নেড়ে ডেকে উঠল। "নিশ্চয়! নিশ্চয়! যদি তুমি ভাগ্যদেবীকে ফিরিয়ে আনতে পারিস, তাহলে তুই যা বলবি সব করব।"
"ঠিক আছে। তাহলে শোন। আমাদের বাড়িতে চোর ঢুকে গিন্নীর সোনালি পোকাটাকে চুরি করেছে। তোর মনে আছে আমরা কিরকম ভালমন্দ খাবার পেতাম হাঁড়ির থেকে। শোন তাহলে, প্রতি দিন আমি দেখতাম আমাদের গিন্নী ওই দেরাজ থেকে একটা ছোট্ট সোনালি পোকা বার করে হাঁড়িতে ফেলত। একদিন আমার সামনে সেটাকে তুলে ধরে বলেছিল, 'দেখ পুষি, এইটাই আমাদের সব আনন্দের মূলে। তুই নিশ্চই ভাবছিস এটা তোর হলে কেমন হত?' এই বলে হেসে আবার সেটাকে দেরাজে ঢুকিয়ে রাখল।"
"সত্যি বলছিস?" জিজ্ঞাসা করল ভুলু।"কই আমাকে তো এর আগে এটা নিয়ে আমাকে কিছু বলিস নি।
" তোর মনে আছে যেদিন চু কত্তা আর চু গিন্নী এখানে এসেছিল, আর কিভাবে চু গিন্নী আবার ফিরে এসেছিল যখন আমাদের গিন্নীমা আর দাদাবাবু মেলায় গেছিল? আমি ওকে দেখেছিলাম, চোখের কোণ দিয়ে। আমার একটু অবাক লেগেছিল, কিন্তু আমি স্বপ্নেও ভাবিনি ও চোর হবে। হায়! আমি কি ভুল করেছিলাম। ও পোকাটাকে নিয়ে চলে গেল, আর আমি যদি ভুল না করি, এখন ওরা সেইসব ভালমন্দ খাচ্ছে যা আসলে আমাদের।"
" এখনি ওদের ধরি চল," দাঁত কিড়মিড় করে গর্জে উঠল ভুলু।
"সেটা করে লাভ নেই, " পুষি বলল, " কারণ শেষ অবধি ওরাই জিতে যাবে। আমাদের ওই পোকাটাকে দরকার- সেটাই আসল। প্রতিশোধ নিতে হলে মানুষেরা নিক; ওতে আমাদের কোন কাজ নেই।"
"তুই কি করতে বলিস?" ভুলু বলল।" আমি তোর সাথে সবসময়ে আছি।"
"চল আমরা চু দের বাড়িতে গিয়ে পোকাটাকে নিয়ে পালিয়ে আসি।"
"হায়রে, আমি তো বিড়াল নই!" মনের দুঃখে বলল ভুলু। " আমরা ওখাণে গেলে আমি ভেতরে ঢুকতে পারব না, কারণ চোরেরা সব সময়ে তাদের দরজা ভাল করে এঁটে রাখে। তোর মত হলে আমি দেওয়ালে চড়তে পারতাম। জীবনে এই প্রথমবার আমি একটা বিড়ালকে হিংসা করছি।"
"আমরা একসঙ্গে যাব, " বলল পুষি, " নদী পেরোবার সময়ে আমি তোর পিঠে চেপে যাব, আর তুই আমাকে অজানা প্রাণীদের হাত থেকে রখা করবি। যখন আমরা চু দের বাড়িতে পৌঁছাব, আমি দেওয়ালে চড়ে যাব, আর বাকি কাজটা নিজে করব। শুধু তোকে বাইরে অপেক্ষা করতে হবে যাতে আরা পোকাটাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারি।"