কথাবার্তা সব ঠিক হয়ে গেল। দুই সঙ্গীতে মিলে সেই রাতেই অভিযানে বেরোল। পুষির বুদ্ধিমত তারা নদী পেরোল, আর ভুলু সাঁতার কেটে বেশ মজা পেল, কারণ, সে জানাল, তার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। আর পুষির গায়ে এক ফোঁটাও জল লাগল না। মাঝরাতে তারা চু দের বাড়ি পৌঁছাল।
"আমার আসা অবধি অপেক্ষা কর," ভুলুর কানে ফিসফিস করে বলল পুষি।
সজোরে এক লাফ দিয়ে সে মাটির দেওয়ালের ওপরে উঠে পড়ল, আর তারপরে এক লাফে ভেতরের উঠোনে। ছায়ায় দাঁড়িয়ে সে ঠিক করতে লাগল কিভাবে কি করবে, এমন সময়ে অল্প একটু সড়সড় আওয়াজ আর ব্যস! এক বিশাল লাফ দিয়ে, থাবা বাগিয়ে, সে একটা ইঁদুরকে ধরে ফেলল, যে কিনা সবে তার গর্ত থেকে মাঝরাতে একটু হাওয়া খেতে বেরিয়েছিল।
এখন, পুষির এতই খিদে পেয়েছিল, যে সে এই লোভনীয় শিকারকে এখনি কপাত করে গিলে ফেলত, যদি না ইঁদুরটা মুখ খুলে , তাকে অবাক করে দিয়ে, বিড়ালদের ভাষায় কথা বলতে শুরু করত।
" ভাল পুষি, রক্ষে কর, তোমার দাঁত বসিও না! নখ গুলিকে আমার থেকে একটু দূরে রাখ। তুমি কি জাননা এখন নিয়ম হয়েছে বন্দীদের সম্মান জানানোর? আমি কথা দিচ্ছি আমি পালাব না।"
"যাঃ! ইঁদুরের আবার সম্মান কিসের র্যা?"
" এটা ঠিক, যে বেশিরভাগেরই নেই, কিন্তু আমার পরিবার কিনা বেড়ে উঠেছে কনফুসিয়াসের (প্রাচীন চীনের দার্শনিক) ছাদের তলায়, আর সেখানে আমাদের এত জ্ঞান লাভ হয়েছে যে আমরা হলুম গিয়ে নিয়মের মধ্যে ব্যতিক্রম।তুমি যদি আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে সারা জীবন মেনে চলব, আমি তোমার দাস হয়ে থাকব। " তারপরে, দ্রুত এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সে বলল, "দেখ, আমি ছাড়া পেয়ে গেছি, কিন্তু আমার আত্মসম্মান আমাকে এখানে ধরে রেখেছে, তাই আমি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব না।"
"না করলেই ভাল," নিজের শরীরে মোচড় দিয়ে বলল পুষি, জিভ তার ইঁদুরের মাংসের লোভে লকলক করছে। "আমার এখন তোকে কিছু প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছে। প্রথমে, আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দে, আর আমি দেখি তুই সত্যি কথা বলিস কিনা। তোর কত্তা গিন্নী আজকাল কেমন খাবার খাচ্ছে, যে তুই এত মোটাসোটা গোলগাল, আর আমি রোগা শুঁটকে?"
"ওহ, আমাদের এখন ভাগ্য খুব ভাল বলতে হবে। কত্তা-গিন্নী সারা দেশের সব থেকে ভাল ভাল খাবার খাচ্ছে, আর আমরা তার থেকে কুড়িয়ে বাড়িয়ে পাচ্ছি বইকি।"
"কিন্তু এটা একটা পুরোনো ভাঙ্গাচোরা বাড়ি। ওরা কি করে ভাল খাবার পেতে পারে?"
"সে এক বড় রহস্য, কিন্তু আমি তোমাকে সত্যি কথা বলতে বাধ্য, তাই বলছি। আমাদের গিন্নী কোনরকমভাবে একটা মন্ত্রপূত জিনিষ পেয়েছে..."
"সে আমাদের বাড়ি থেকে ওটা চুরি করেছে," ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল পুষি, " আমি ওকে বাগে পেলে ওর চোখ খুবলে ফেলব। আমরা ওই পোকাটাকে ছাড়া না খেয়ে মরতে বসেছি। আর তোর গিন্নী আমাদের বাড়ি নেমন্তন্ন খেয়ে এসেই ওটা চুরি করেছে! এই বিষয়ে তোর কি বলার আছে রে ইঁদুর ব্যাটা? তোর মনিবের পূর্বপুরুষেরাও কি সেই মহাত্মার কথা শুনে চলত?"
"ওহ ওহ ওহ! এতদিনে বুঝলাম!" ইঁদুর চেঁচিয়ে বলল, "আমি অনেকবার ভেবেছি ওরা ওই সোনালি পোকাটাকে কোথায় পেল, যদিও আমি প্রশ্ন করার সাহস পাইনি।"
"সে বেশ করেছিস! কিন্তু এখন শোন, ইঁদুর-বন্ধু - তুই আমাকে সোনালি পোকাটাকে এনে দিবি, আর আমি তোকে নিঃশর্তে ছেড়ে দেব। তুই জানিস, ওটাকে কোথায় লুকিয়ে রাখে?"
"হ্যাঁ, ভাঙ্গা দেওয়ালের গায়ে একটা ফাটলের মধ্যে। আমি সেটাকে এক মূহুর্তের মধ্যে তোমার কাছে নিয়ে আসতে পারি, কিন্তু আমাদের কাছ থেকে ওটা চলে গেলে আমরা বেঁচে থাকব কি করে? আবার খাবারের অভাব হবে , আবার আমাদের ভাগ্যে জুটবে ভিখিরির খাদ্য।"
"নিজের ভাল কাজের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকিস", গরগর করে বলল পুষি। "বুঝলি, একজন সৎ ভিখিরি হয়ে থাকা দারুণ ব্যাপার। এখন যাঃ! আমি তোকে বিশ্বাস করছি কারণ তোরা কনফুসিয়াসের বাড়িতে থাকতিস। আমি এখানে তোর ফেরার জন্য অপেক্ষা করব। আহা!" সে নিজের মনে হাসল," ভাগ্যদেবী মনে হচ্ছে সদয় হচ্ছেন।"