খেলাঘরখেলাঘর

কাঠের ঘোড়া

সে দিন রাত্রে, রাজার গুপ্তচর বাহিনী চুপি চুপি সব লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালালো। সেই বুড়ো লোকটির বাড়িতে গিয়ে রঙ লাগা জামাটি খুঁজে পেল। সঙ্গে সঙ্গে লোকটিকে গ্রেপ্তার করে রাজার কাছে এনে হাজির করল তারা।

লোকটিকে রাজা জিগ্যেস করলেন - জামায় রং লাগল কি করে?

লোকটি বলল - রাস্তায় এটা পড়ে থাকতে দেখে আমি তুলে এনেছিলাম। তখন থেকেই এতে রং লেগে ছিল।

রাজা সেসব কথা বিশ্বাস করলেন না। তাকে ফাঁসির আদেশ দিলেন।

সারা শহরে এই খবর রটে গেল। সবাই মিলে ভীড় করল ফাঁসি দেওয়ার জায়গায়। সবার কৌতুহল কি করে ঐ লোকটি আকাশের মধ্যে তৈরী অট্টালিকাতে যাতায়াত করতো। কিন্তু তারা যখন দেখলো এক বুড়ো মানুষকে ফাঁসি দেওয়ার জন্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন খুব অবাক হল। ঐ বুড়ো লোকটা আসল দোষী বলে বিশ্বাস করতে পারল না। সবাই ভাবল কোথাও একটা বড় ভুল হচ্ছে।

এ পাশে রাজপুত্র দিগ্বিজয়ের কানেও একথা পৌঁছলো। সে তার কাঠের ঘোড়া কাঁধে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেওয়ার জায়গায় এসে উপস্থিত হল। চেঁচিয়ে বলল

-ওকে ফাঁসি দিও না। ও আসল দোষী নয়। আমিই রোজ আকাশে তৈরী ঐ অট্টালিকায় যাই রাজকন্যার সঙ্গে দেখা করতে। ফাঁসি দিতে চাইলে আমাকে ফাঁসি দাও। বুড়ো মানুষটাকে ছেড়ে দাও।

রাজা দূরে বসে সব দেখছিলেন। তিনি আদেশ করলেন

-বুড়ো লোকটিকে ছেড়ে দাও। আর যে ছেলেটি তার নিজের দোষ স্বীকার করেছে তাকে ফাঁসি দাও।

সুতরাং তারা বুড়ো লোকটিকে ছেড়ে দিল। সে মনের আনন্দে বাড়ি চলে গেল। তখন সব লোকজন ও জল্লাদ রাজপুত্রকে ফাঁসি দেবে বলে ধরে নিয়ে যেতে এলো। কিন্তু রাজপুত্র কাঠের ঘোড়ায় চড়ে স্ক্রু আলগা করে সঙ্গে সঙ্গে সবার চোখের সামনে দিয়ে ওখান থেকে উড়ে পালিয়ে গেল। রাজা যখন দেখল তার এত লোকজন এত সেপাই একটা ছেলেকে ধরতে পারল না তখন তিনি রাগে অজ্ঞান হয়ে গেলেন।

রাজপুত্র কাঠের ঘোড়ায় চড়ে সোজা এলো মেঘ-মঞ্জিলে, রাজকন্যার কাছে। বলল

-তোমার বাবা জানতে পেরে গেছেন যে আমি রোজ তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসি। তিনি আমাকে ধরতে পারলে ফাঁসি দিয়ে দেবেন। কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না। তুমি আমার সঙ্গে আমাদের রাজ্যে চলো। আমার বাবা তোমাকে নিশ্চয় পছন্দ করবেন। আমাদের বিয়েও দিয়ে দেবেন।

রাজকন্যা বলল – তুমি যেখানে যাবে আমিও তোমার সঙ্গে যাব।

তারা দুজনে কাঠের ঘোড়ায় চেপে উড়ে পালিয়ে গেল সেই অট্টালিকা থেকে।

অনেক অনেকক্ষন উড়ে চলল তারা। হঠাৎ রাজকন্যা অলকানন্দা কিছু মনে পড়ে যাওয়ায় সে চেঁচিয়ে বলল

-আমি দুটো জিনিষ আনতে ভুলে গেছি। ওগুলো আমার কাছে আমার মায়ের একমাত্র স্মৃতি। ইচ্ছে ছিল আমাদের বিয়ের সময় ঐ পাথর দুটো আমি তোমার বাবা মাকে উপহার দেবো। আমি একবার মেঘ-মঞ্জিলে ফিরে গিয়ে ও গুলো নিয়ে আসতে চাই।

রাজপুত্র দিগ্বিজয় বলল – আমরা মেঘ-মঞ্জিল থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। এখন আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।

কিন্তু রাজকন্যা বার বার অনুরোধ করতে থাকল। তখন রাজপুত্র কাঠের ঘোড়ার স্ক্রুগুলো এঁটে নীচে নেমে পড়ল। বলল – আমি এখানেই তোমার জন্যে অপেক্ষা করছি। তুমি এই কাঠের ঘোড়ায় চড়ে মেঘ-মঞ্জিলে যাও আর কাজ সেরে তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।

রাজকন্যাকে ঘোড়ায় ওড়ার সব নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দিল। রাজকন্যা আবার একটা একটা করে স্ক্রু আলগা করে আকাশে উড়ে চলে গেল।

এপাশে রাজা রাজকন্যাকে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন। মেঘ-মঞ্জিলে কোন আগন্তুক আসছে রোজ রোজ। সে যদি রাজকন্যার কোন ক্ষতি করে তখন কি হবে এই সব ভেবে আজ সকাল সকাল পাড়ি দিয়েছিলেন। এসে দেখলেন ফাঁকা অট্টালিকা। রাজকন্যা নেই। রাজা তো একদম ভেঙ্গে পড়লেন। কি করবেন, কোথায় রাজকন্যাকে খুঁজতে যাবেন। এমন সময় হঠাৎ রাজকন্যা কাঠের ঘোড়ায় চড়ে ফিরে আসে প্রাসাদে। রাজকন্যাকে দেখেই রাজা তার সৈন্যদের নির্দেশ দেয় রাজকন্যাকে বন্দী করার জন্যে। কাঠের ঘোড়াটাকে কি করে ব্যাবহার করা যায় বুঝতে না পেরে রাজা ওটাকে ফেলে রেখে দিলেন একটা ফাঁকা ঘরে।