৮
বিয়ে ভালোয় ভালোয় মিটে গেছে। পরদিন রাজকন্যা ভিনদেশে শ্বশুরবাড়ি যাবে। রাজকন্যাকে বিদায় জানানোর জন্যে সব লোকজন জড়ো হয়েছে। প্রাসাদের বাইরে ভিনদেশের লোকজন শোভাযাত্রা সাজিয়ে প্রস্তুত। এমনসময় রাজকন্যা অলকানন্দা বায়না জুড়ল। কাঠের ঘোড়াটা তার চাই-ই চাই। না হলে সে এক পাও নড়বে না। রাজা রাজকন্যার এই অদ্ভূত বায়না কিছুতেই প্রশ্রয় দিতে রাজি নন। তিনি তীব্রভাবে তার আপত্তি জানালেন। রাজকন্যা তাও শুনল না, বায়না করেই চলেছে। রাজা শেষে ভয়ানক রেগে গিয়ে রাজকন্যাকে ফাঁসিতে চড়ানোর আদেশ দিলেন। কিন্তু রাজকন্যার তাতেও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। জানিয়ে দিল কাঠের ঘোড়া না পেলে সে ফাঁসিতেই মৃত্যু বরন করবে।
রাজা পড়লেন মহা ফাঁপরে। কি করা উচিত কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেন না। এপাশে রাজকন্যার বিদায় শোভাযাত্রা দেখবে বলে বাইরে অসংখ্য লোক প্রতীক্ষা করে রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু গন্যমান্য ব্যক্তি রাজপ্রাসাদের ভেতরে এসে জিগ্যেস করলেন – কিসের জন্যে যাত্রায় এত বিলম্ব হচ্ছে?
রাজা বললেন – রাজকন্যা অলকানন্দা তার পুরানো এক কাঠের ঘোড়া সঙ্গে নিয়ে যেতে চায় বলে আবদার জুড়েছে।
তারা এই শুনে খুব হেসে উঠে বললেন – একটা খেলনার জন্যে এত বায়না করছে তো সেটা দিয়ে দিলেই হয়।
রাজা খুব লজ্জ্বায় পড়ে কাঠের ঘোড়াটাকে বার করে দিতে বাধ্য হলেন। কাঠের ঘোড়া পেয়ে রাজকন্যা খুব খুশি। রাজকন্যা ও রাজপুত্র নিয়ে শোভাযাত্রা ফিরে চলল ভিনদেশের উদ্দেশে।
বেশ কয়েকদিন ঘোড়ায় টানা গাড়িতে করে তারা চলতে থাকল। চলতেই থাকল। প্রহরীরা সারাক্ষন নিশ্ছিদ্র পাহারা দিয়ে ঘিরে রাখত রাজকন্যা অলকনন্দা, রাজপুত্র দিগ্বিজয়কে । ফলে ওরা একটা মিনিটও ফাঁকা পেত না যে কাঠের ঘোড়ার পিঠে চড়ে উড়ে পালিয়ে যাবে। রাজপুত্র আগে থেকেই রাজকন্যাকে শিখিয়ে রাখল
-যখন আমরা ভিনরাজ্যের প্রাসাদে পৌঁছে যাব, তখন তুমি বলবে একমাত্র একটা শর্তেই তুমি গাড়ি থেকে নামবে। সাতটা বড় প্লেটে মোহর ভর্তি করে এনে তোমায় দিতে হবে। মোহর নিয়ে এলে তুমি প্লেট উলটে সব মোহর ফেলে দেবে রাস্তায়।
তারা যখন ভিনরাজ্যে এসে পৌঁছলো, তখন রাজকন্যা সেই পরিকল্পনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করল। লোকেরা রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে মোহর কুড়োতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অমনি রাজপুত্র রাজকন্যাকে নিয়ে চেপে বসল কাঠের ঘোড়ায়। আর খুব তাড়াতাড়ি একের পর এক স্ক্রু আলগা করে চোখের নিমেষে উড়ে চলে গেল। সব লোকজন, অতিথি অভ্যাগত, রাজ্যবাসী শুধু তাকিয়ে দেখতেই থাকল। কেউ কিছুই করতে পারলেন না।
৯
রাজপুত্র দিগ্বিজয় রাজকন্যা অলকানন্দাকে নিয়ে নিরাপদে ফিরে এলো নিজের দেশে।
এপাশে রাজপুত্র কাঠের ঘোড়ায় চড়ে অদৃশ্য হওয়ার পর থেকেই রাজা প্রতাপাদিত্য খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। সারা দিন-রাত রাজপুত্রের কথা ভেবে ভেবে অস্থির হচ্ছিলেন। তার সব রাগ গয়ে পড়েছিল ছুতোর মিস্ত্রীটার ওপর। সে কাঠের ঘোড়াটা না বানালে তো এমন কান্ড হতো না। তাই তিনি ছুতোর মিস্ত্রীকে শাস্তি হিসেবে একটা কাঠের সেতুতে আমৃত্যু বেঁধে রাখার আদেশ দিয়েছিলেন।
রাজপুত্রকে সুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরে আসতে দেখে রাজার তো আনন্দ আর ধরে না। রাজপুত্র এসেই ছুতোরের তৈরী কাঠের ঘোড়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বলল
-এই কাঠের ঘোড়াটা এত কাজের যে এই কদিনেই আমি পৃথিবীর অনেকগুলো নতুন দেশ দেখে এসেছি। এমনকি এমন সুন্দর এক রাজকন্যাকে খুঁজে বিয়েও করে এনেছি। তারপর দেশে নিরাপদে ফিরে আসতে পেরেছি। তুমি ছুতোর মিস্ত্রিকে খুব ভাল পুরস্কার দিও।
তখন রাজা তার কৃতকর্মের জন্যে খুব লজ্জিত হলেন। সঙ্গে সঙ্গে লোক পাঠালেন ছুতোর মিস্ত্রীকে আনার জন্যে। রাজার লোকেরা সেতুর কাছে গিয়ে দেখল ছুতোর মিস্ত্রী তখনও বেঁচে আছে। তাকে সব বাঁধন মুক্ত করে নিয়ে এলো রাজপ্রাসাদে। রাজা তাকে অনেক অর্থ ও মনিমুক্ত দিয়ে পুরস্কৃত করলেন এবং রাজসভায় ভালো পদে নিযুক্ত করে সম্মানিত করলেন।
তারপর রাজ্যে বিশাল জাঁকজমক করে রাজপুত্র আর রাজকন্যার আরও একবার বিয়ে দেওয়া হল।
রুচিরা
বেইজিং, চীন