খেলাঘরখেলাঘর

আজকে তোমার কাছে আমার একটা খুব ভাললাগা ছবি নিয়ে গল্প করব। ১৯৯৭ সালে ইরানে তৈরি এই ছবিটার নাম 'চিলড্রেন অফ হেভেন'/' বাচেহা এ আসেমান'। বাংলা করলে বলা যেতে পারে 'স্বর্গের শিশুরা'। ছবিটি তৈরি করছেন ইরানের বিখ্যাত পরিচালক মাজিদ মাজিদি। এবার গল্পটা বলি।

ছোট্ট ছেলে আলি তার বোনের প্রিয় গোলাপি রঙের জুতোজোড়া মুচির কাছ থেকে সারিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। ফেরার পথে  আলি ঢুকল সব্জির দোকান থেকে কিছু আলু নিতে। হাতের জিনিষগুলো রেখে গেল দোকানের বাইরে। এমন সময় সেই ফেরিওয়ালা, যে কিনা পুরোনো জিনিষ কেনাবেচা করে, সে এসে দাড়াঁল দোকানের সামনে। দোকানদারের ফেলে দেওয়া জিনিষপত্রের সাথে সে তুলে নিয়ে চলে গেল আলির জুতোর ঠোঙ্গাটাকেও। আলু নিয়ে বেরিয়ে এসে আলি তো আর জুতোজোড়া খুঁজে পায়না। মুখভার করে বাড়ি ফিরে এল সে। তার ছোট বোন জোহরেকে সে সত্যি কথাটা খুলে বলল। দুঃখের চোটে জোহরের তো চোখ ফেটে জল এসে গেল। আলি জোহরে কে কথা দিল জুতোজোড়া খুঁজে এনে দেবে। যতদিন না পাচ্ছে, জোহরে তার নিজের জুতোজোড়া পড়েই নাহয় স্কুলে যাক। মা- বাবাকে যেন এক্ষুনি নালিশ না করে দেয় বোন আবার... আলি নাহয় বোনকে তার নিজের পেনটাই দিয়ে দেবে...


আলি
 
জোহরে

আলি-জোহরের বাবা খুব সামান্য কাজ করেন। তাঁর পক্ষে হটাত করে একজোড়া নতুন জুতো কিনে আনা সম্ভব নয়। তাই বাবা- মা টের পাওয়ার আগেই জোহরের গোলাপি রঙের জুতোজোড়া খুঁজে পাওয়াটা যে খুব জরুরি দুই ভাই বোনের কাছে!

কিন্তু সে জুতো কি আর খুঁজে পাওয়া যায় নাকি? জোহরে আর কি করে, দাদার ছেঁড়া, ময়লা জুতোজোড়া পায়ে দিয়ে সকালবেলা স্কুলে যায়। স্কুল ছুটি হলে দৌড়ে দৌড়ে বাড়ি ফেরে। গলির মুখে দাঁড়িয়ে থাকে তার দাদা। জুতো পালটিয়ে নিয়ে সে আরো জোরে ছুট লাগায় তার স্কুলের দিকে। মাঝে মাঝে দেরিও হয়ে যায়। বকাও খায় খুব।

এর মধ্যে আবার জোহরে একদিন দেখে তার সেই হারিয়ে যাওয়া জুতোজোড়া পরে আরেকটি মেয়ে স্কুলে আসছে। দেখে তো সে অবাক। মেয়েটির পেছন পেছন গিয়ে তার বাড়ি চিনে আসে সে। দাদাকে নিয়ে গিয়ে দেখায়ও। কিন্তু কি করে মেয়েটার কাছে যে ওই জুতোজোড়া গেল, ভেবেই পায় না দুজনে। আসলে ওরা জানবে কি করে, ঐ মেয়েটার বাবা সেই ফেরিওয়ালার কাছ থেকে ওই জুতোজোড়া কিনেছেন! জোহরে স্কুলে মেয়েটির সাথে কথাও বলে, কিন্তু মুখ ফুটে আর বলতে পারেনা যে আসলে ওই জুতোজোড়া ওর নিজের।


দুই ভাই- বোন যাচ্ছে জুতো খূঁজতে

তারপর একদিন আলি স্কুলে জানতে পারল যে অঞ্চলের সব স্কুলের ছেলেদের মধ্যে এক দূরপাল্লার দৌড় প্রতিযোগিতা হবে। আর তার তৃতীয় পুরষ্কার হল এক জোড়া নতুন স্নিকার!! ছোট্ট দাদা আলি তার ছোট্ট বোন জোহরেকে কথা দিল সে দৌড়ে তৃতীয় হবে আর স্নিকার জোড়া এনে সেদুটির বদলে বোনকে নতুন একজোড়া মনের মতন জুতো কিনে দেবে।


আলি তো গেল দৌড়াতে। কিন্তু সে কি তৃতীয় হলে পারল? বোনকে কি নতুন জুতো এনে দিতে পারল?  ছবিটা দেখতে দেখতে সবার মত তুমিও কিন্তু আলির সাথে খুঁজতে শুরু করবে জোহরের জুতোজোড়া। আর মনে মনে চাইবে আলি যেন দৌড়ে তৃতীয়ই হয়, প্রথম যেন না হয়।

শেষটুকুন আর বলব না। বরং বাড়ির বড়দের বলে দেখ তো এনে দিতে পারেন কিনা এই ছবিটির সিডি বা ডিভিডি। আলি আর জোহরের চরিত্রে অভিনয় করেছে যে দুটি ছোট ছেলে মেয়ে - আমির ফারুখ হাশেমিয়ান আর বাহারে সিদ্দিকি, তাদের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে পড়ে ছোট -বড় সবাই। আর আমরা সবাই ধন্যবাদ জানাই পরিচালক মাজিদ মাজিদিকে, ছোটদের নিয়ে এত সুন্দর একটা ছবি আমাদের দেওয়ার জন্য।



মহাশ্বেতা রায়
পাটুলী, কলকাতা

 

ছবিঃ সিনেমাজিদি

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।