খেলাঘরখেলাঘর

হীরের আঙটি
মহালয়ার দিন ভোরবেলা, যখন আকাশবানীর "মহিষাসুরমর্দিনী" প্রায় শেষ হওয়ার মুখে, তখন মায়ের ডাকে বিছানা ছেড়ে উঠতে বাধ্য হল হাবুল।  এই ক'টা দিন হাবুলের খুব মজা। বাড়িতে দুর্গাপুজো হবে, নাটমন্দিরে ঠাকুর গড়া হচ্ছে।

ঠাকূর গড়া হচ্ছে
ঠাকুর গড়া হচ্ছে
 
বাবা আর কাকু সক্কালবেলায় বেরিয়ে গেলেন ঠাকুরের সাজ-সজ্জা কিনতে। ঢাকিরাও এসে গেলো ঢ্যাম কুর কুর বাজনা বাজাতে বাজাতে। হাবুলের অনেক কাজ- দাদু দায়িত্ব দিয়েছেন নাটমন্দির সাজাতে। ওদিকে আবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে সপ্তমীর বদলে মহালয়ার সকালেই আমেরিকা থেকে হাজির  মেজোকাকু, কাকী আর তিন্নি। এইরকম জমজমাট অবস্থার মধ্যে বাড়িতে এসে উপস্থিত হল এক নতুন অতিথি। সুন্দর, হাসিখুশি, সুবেশ এই মানুষটি, যার নাম কিনা গন্ধর্বকুমার, যে কিনা কোন এক দূর দেশের রাজপুত্র, তাকে বেশ পছন্দ হয়ে গেলো হাবুলের। হবে না? কি দারুণ ঢাক বাজাতে পারে, কি অনায়াসে সব রঙিন কাগজ কেটে এক মুহূর্তে হাবুলকে নাটমন্দির সাজানোর জন্য পাখি, রথ বানিয়ে দিলো! আবার ঘোড়ায়ও চড়তে পারে, এমনকি ম্যাজিক ও জানে! কিছুক্ষণের মধ্যেই তো গন্ধর্বকুমার হয়ে গেলো হাবুলের গেনুদা।
 
গেনুদা আর হাবুল
গেনুদা আর হাবুল
 
তিন্নি আর হাবুল
তিন্নি আর হাবুল

এদিকে গন্ধর্বকুমারের আসার খবর পেয়েই দাদু খুব গম্ভীর হয়ে গিয়ে তাকে নিয়ে ঘরের ভেতর খিল দিলেন। কি কথাবার্তা হলো কে জানে! আর ওদিকে আবার ষষ্ঠী চোর আর গুপী স্যাকরা দুজনে মিলে মতলব আঁটছে গন্ধর্বকুমারের হাতের হীরের আঙটিটাকে হাতাবার; ষষ্ঠীর অনেকদিনের শখ একটা ডাকাতের দল খুলবে, ওই আঙটি একবার হাতাতে পারলেই কেল্লা ফতে!
 
স্যাকরা আর চোর
 গুপী স্যাকরা আর ষষ্ঠী চোর
 
ডাকাত দল খোলার ফর্দ
ডাকাত দল খোলার ফর্দ

সন্ধ্যাবেলা বেড়িয়ে ফিরে এসে হাবুল আর তিন্নি দেখল নাটমন্দিরে আলো নেভানো। দাদু পুজো বন্ধ করে দিতে বলেছেন!কিন্তু কেন? গন্ধর্বকুমার কে? বাড়ির সবাই এতো গম্ভীর কেনো? রাতের অন্ধকারে দাদুর সঙ্গে কে দেখা করতে এলো?
 
দাদু আর পাঁচুদা
দাদু আর পাঁচুদা

গল্পের শেষটা জানতে হলে দেখতে হবে চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটির প্রযোজনায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর লেখা রহস্যের জমজমাট গল্প নিয়ে ১৯৯২ সালে তৈরি ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি "হীরের আঙটি"। এই ছবির পটভূমিকায় রয়েছে দুর্গাপুজো - বর্ষা শেষের নীল আকাশ, কচি ধানে ভরা সবুজ মাঠ, শাপলা ভরা বিল, নাটমন্দিরে মাটির মূর্তির গায়ে তুলির টান, ঢাকের বাদ্যি... আর ছবির শুরুতে "মহিষাসুরমর্দিনী"র  মনভোলানো গানের সুর। সাথে অনবদ্য অভিনয় বসন্ত চৌধুরি, সুমন্ত মুখার্জী, সুনীল মুখার্জী ,জ্ঞ্যানেশ মুখার্জী, দুলাল লাহিড়ী আর অয়ন ব্যানার্জী সহ অন্যান্য আরো শিল্পীদের। আর সন্দীপন মজুমদার (হাবুল), অঞ্চিতা দত্ত (তিন্নি) আর শুভ্রদীপ দে (ঢাকির ছেলে) তো দারুণ অভিনয় করেইছে। পুজোর ছুটির মধ্যে একদিন সময় করে না হয় দেখেই ফেলো এই ছবিটা।


মহাশ্বেতা রায়
পাটুলী, কলকাতা
 
মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।