খেলাঘরখেলাঘর

রাস্তার ধকলের জন্য শরীর ক্লান্ত থাকায় বেশ চমৎকার ঘুম হল রাতে। সকালে আমার তাঁবুর পাশেই পাখীদের কিচিরমিচির আওয়াজে ঘুম ভাঙল। আমার প্রতিদিনের কর্কশ আর নিষ্ঠুর অ্যালার্মের আওয়াজের থেকে এটা যে কত গুণ মধুর সেটা বলে বোঝাতে পারব না। পাউরুটির সাথে নিজেদের মৌচাকে তৈরী মধু আর কফি দিয়ে সকালের জলখাবার সারা হল। এরপর কিছুক্ষণ কার্ক আর ক্যারোলিন বাড়ির কিছু কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ক্যারোলিন করছিল বাগানের গাছপালার পরিচর্যা আর কার্ক "রূট সেলার" তৈরীর কাজ। "রূট সেলার" হল মাটিতে গর্ত করে আর তার চারিপাশে তাপের অপরিবাহী পদার্থ দিয়ে ঘিরে তৈরী একটা ঘরের মত। শীতের সময় যাতে খাবার জোগাড় জমা করে রাখা যায় তার জন্য এই ব্যবস্থা। আমিও কার্ক-কে খানিকক্ষণ সাহায্য করলাম মাটি কোপানো আর চারিপাশের ঘিরে রাখা রাবারের টায়ারে মাটি ভর্তি করার কাজে। আর মুগ্ধ হচ্ছিলাম ওদের দুজনের এই সব কাজে পরিশ্রম আর উদ্যোগ দেখে।

এরপর একটু বেলার দিকে আমরা দুপুরের কিছু খাবার প্যাকেটে ভরে আর ওদের দুটো কুকুরকে সাথে করে গেলাম একটা পাহাড়ে চড়তে। বেশ অনেকটা হাঁটলাম আমরা - প্রায় ২৫০০ ফুট উঠলাম একটা পাহাড়ের উপরে আর ওঠানামা মিলিয়ে হাঁটলাম প্রায় ৬ মাইল পথ। পাহাড়ের একদম উপর থেকে শহরটা, তার ইউনিভার্সিটি, আশেপাশের অন্য পাহাড়গুলো আর তার মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটা দেখতে বেশ চমৎকার লাগে। পাহাড়ের মাথাতেই বসে একটু হালকা খাবার খেয়ে নেওয়া হল। যখন আমরা পাহাড়ের নীচে নেমে এলাম তখন বেলা প্রায় পড়ে এসেছে।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেল। ক্যারোলিন বাগানের সবজি, আর বাজার থেকে কিনে আনা ভুট্টা আর মাংস দিয়ে রাতের খাবারের বন্দোবস্ত শুরু করল। আমরাও অল্পস্বল্প সাহায্য করলাম হাতের কাজে। অদের আরেক বন্ধুও এসেছিল আমাদের সাথে ডিনার করার জন্য। খাবার পর অনেকক্ষণ আড্ডার পর সারাদিনের হাঁটাহাঁটি আর পরিশ্রমে বেশ তাড়াতাড়িই ঘুম পেয়ে গেল।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। আজই আমার ফিরে আশার পালা। ওদের দুজনকে বিদায় জানাতে বেশ খারাপ লাগছিল - কিন্তু উপায় তো আর নেই। লম্বা রাস্তায় আমার যাতে অসুবিধে না হয় সেজন্য ক্যারোলিন বেশ কিছু গাজর একটা প্যাকেটে আমার জন্য রেখে দিয়েছিল। এইভাবেই ক্যারোলিন, কার্ক, পাহাড়, জঙ্গল আর মিসোউলাকে বিদায় জানিয়ে আমি বাড়ি ফিরে এলাম। এই ক'দিনের টাটকা খাবার আর টাটকা হাওয়ায় শরীরটা এতটাই ঝরঝরে হয়ে গিয়েছিল যে ৯ ঘন্টা যাত্রার পরেও খুব বেশী ক্লান্ত লাগছিল না।

দূরত্বটা অনেক বেশী। তাই জানিনা আবার কবে ওদের সাথে দেখা হবে। কিন্তু সেটা যবেই হোক, ওদের বন্ধুত্বটা চিরকাল মনে গেঁথে থাকবে।
 



লেখা ও ছবিঃ
পাভেল ঘোষ
হিলস্‌বোরো, ওরেগন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র

পাভেল ঘোষ পোর্টল্যান্ড, ওরেগন এর বাসিন্দা। কম্পিউটার এর খুঁটিনাটি নিয়ে পড়াশোনা ও কাজকর্ম করার ফাঁকে ফাঁকে দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন; আর্সেনাল ক্লাব-এর একনিষ্ঠ ভক্ত।