খেলাঘরখেলাঘর

এই শহরে ২০২৭ টা ব্রিজ, অসংখ নদীর তলা দিয়ে রাস্তা (Tunnel), এটা একটা পোতাশ্রয়। পশ্চিমে হাডসন নদী, পূর্ব দিকে ইষ্ট নদী, উত্তরে হারলেম নদী। ৪৮৬ ট্রেন স্টেশন্‌, ২৪ ঘন্টা ট্রেন চলাচল করে, যেখানে আছে হাওড়া ব্রীজের মত ব্রীজ, বিদ্যাসাগর সেতুর মত ব্রীজ, ঘাড় ব্যাথা হয়ে যায় বহুতল স্কাইস্ক্রেপার, আকাশছোঁয়া বাড়ি দেখতে দেখতে – বোধ হয় বুঝতে পেরেছো এবারে আমরা যাব নিউ ইয়র্ক শহরে। আমেরিকা  যুক্ত্ররাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক রাজ্যে।

এই শহর টাকে জানতে হলে আমাদের যেতে হবে ১৬১৪ সালে। যখন ডাচ বাবস্যায়ীরা এই দ্বীপ এ আসে ফারের ব্যাবসা করবে বোলে। ডাচরা বুঝতে পারে যে ব্যাবসা ভাল করতে গেলে এই দ্বীপ টা দখলে রাখতে হবে। ডাচরা  আমেরিকান ইন্ডিয়ান থেকে কিনে নিয়ে নাম দিলেন নিউ আমস্টারডাম। ডাচদের ব্যাবসা রমরমা হল।

সাল ১৬৬৪। ইংরেজের ও ডাচদের যুদ্ধে ইংরেজরা জিতছে। ইংরেজরা দখল নিল নিউ আমস্টারডাম শহরের। নাম বদলে নতুন নাম দিল নিউ ইয়র্ক। ইংরেজরা ব্যাবসা রম রমা করে চলে পরের ১০০ বছর ধরে।

সাল ১৭৮৯ - এরপর শুরু হল আমেরিকান – ইংরেজ যুদ্ধ। আমেরিকানরা দখল নিল নিউ ইয়র্ক এর। যুদ্ধে জয়ের পর নিউ ইয়র্ক শহরকে রাজধানী বলে ঘোষণা করল আমেরিকা। নিউ ইয়র্ক শহর ব্যাবসা ও রাজনীতির কেন্দ্র হয়ে উঠলো। আইরিশ, স্কটিশ অনাবাসীরা সবাই নিউ ইয়র্ক আসতে লাগলো। নিউ ইয়র্ক সব কিছুর কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠল।

সাল ১৯০৪ - নিউ ইয়র্ক শহরে ট্রেন ব্যাবস্থা সুরু হল। একদিকে জাহাজ এর বন্দর,  অন্য দিকে ট্রেন, গোটা পৃথিবী থেকে ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করলো নিউ  ইয়র্কে। নিউ ইয়র্কের আধুনিকীকরন শুরু হল। আজ নিউ ইয়র্ক আমেরিকার সবচেয়ে জনবহুল শহর। শহরে ঘুরলে দেখা যায় পুরোনো ও নতুনের সহাবস্থান।

বাস

শহর ঘুরে দেখার সবচেয়ে সহজ উপায় হল দোতলা বাসে করে ঘোরা। এই বাসের মাথার ওপরটা খোলা। 
পিউ আর আমি ঠিক করলাম – আমরা নিজেরা হেঁটে হেঁটে আর ট্রেনে ঘুরবো। প্রথম জায়গা দেখার মত হল – গ্রান্ড সেন্ট্রাল টারমিনাল। ১৯১৩ সালে তৈরী। ৭৫ টা ট্রেন লাইন আর ৪৮টা প্লাটফর্ম এক জায়গায়। ভাবা যায়!

গ্রান্ড সেন্ট্রাল টারমিনাল



গ্রান্ড সেন্ট্রাল টারমিনাল – গোটা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী সংখক ট্রেন প্লাটফর্ম  আছে যে স্টেশনে। রোজ ৭৫০,০০০ থেকে ১,০০০,০০০ লোক যাতায়াত করে এই ট্রেন স্টেশন দিয়ে। স্টেশনের মেঝেটা ঝকঝকে তকতকে। স্টেশনের ছাদে অনেক কারুকার্য করা।

স্টেশনের ছাদে অনেক কারুকার্য করা


গ্রান্ড সেন্ট্রাল টারমিনাল থেকে বাইরে বেরীয়ে তাকালে দেখা যায় ক্রাইসলার বিল্ডিং (Chrysler Building),  ১০৪৭ ফুট উঁচু। সারা পৃথিবীতে প্রথম মানুষের তৈরী বাড়ি যেটা ১০০০ ফুটের বেশি লম্বা। ১৯৩০ সালে ১১ মাসের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বাড়ি। ২০ মাসের মধ্যে বাড়িটা তৈরী হয়েছিল।

 

ক্রাইসলার বিল্ডিং

এরপর গন্ত্যবস্থল হল সেইন্ট প্যাট্রিক ক্যাথেড্রাল। ১৫০ বছরের এর বেশী পুরোনো ক্যাথেড্রাল। ভেতর ঢুকলে কারুকার্য্য দেখে অবাক হতে হয়। স্পাইডার ম্যান চলচ্চিত্রে এই কাথেড্রাল দেখিয়ে ছিল।

সেইন্ট প্যাট্রিক ক্যাথেড্রাল

এত ঘুরতে ঘুরতে আমাদের খিদে পেয়ে গেল। বলোতো কি খেলাম আমরা। এগ রোল!! নিউ ইয়র্ক শহরে হেন দেশের খাবার নেই যা পাওয়া যায় না। লোভ লাগছে নাকি এগ রোলের ছবিটা দেখে! লোভ দিয়ে লাভ নেই – সব হজম হয়ে গেছে!!

এগ রোল

খেয়ে দেয়ে আবার যাত্রা শুরু। এবার আসলাম ইউনাইটেড নেশন্‌স্‌ এর সামনে। দেখলেই বোঝা যায় – সামনে সব দেশের জাতীয় পতাকা আছে।

ইউনাইটেড নেশ্‌ন্‌স্‌

তারপর আমরা চলে গেলাম একদম দক্ষিন প্রান্তে। ওয়াল স্ট্রীট। সেখানেই আছে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ (NYSE)। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী শেয়ার কেনাবেচা হয় এখানে – নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ-এ।

নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ

এখানে ব্যবসা চলছে ১৭৯২ সাল থেকে। ওখানেই আছে একটা ষাঁড়ের (Bull) মূর্তি। শেয়ারের দাম বাড়লে বলে 'ষাঁড় দৌড়চ্ছে'।

ষাঁড়ের (Bull) মূর্তি

তার কাছাকাছি ছিল – ওয়র্ল্ড ট্রেড সেন্টার (World Trade center)। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ১১০ তলা উঁচু দুটি বাড়ি। সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমনে নষ্ট হয়ে গেছে বাড়ি দুটো আজ থেকে নয় বছর আগে। গোটা পৃথিবী জানে সে কথা। প্রার্থনা করি আর কোথাও কোনো দিন সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তী না হয়। মৃতদের শ্রদ্ধা জানাতে আজ বাড়ি গুলোর জায়গায় স্মৃতির ফলক।

ওয়র্ল্ড ট্রেড সেন্টার (World Trade center)

দেখতে দেখতে দিন শেষ হল। রাতের নিউ ইয়র্ক অন্য চেহারা। বিল বোর্ড, নিয়ন বাতির আলোয় টাইমস্‌ স্কোয়ার। পথচারীদের জায়গা। মজার জায়গা। বিল বোর্ড, লোক দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে রাত কেটে যায় বোঝাই যায় না।

টাইমস্‌ স্কোয়ার