খেলাঘরখেলাঘর

অ্যান্ড্রু ব্যারন মারে, বা সংক্ষেপে অ্যান্ডি মারে। এই নামটা নিশ্চয়ই তোমার কাছে আর অপরিচিত নয়। গরমের ছুটিতে তুমি নিশ্চয়ই উইম্বলডনের খেলা দেখেছ আর খবর রেখেছ। আর ফাইনাল ম্যাচটা তো কোনভাবেই ভুলে যাওনি। সেই ফাইনালে গ্রেট ব্রিটেনের স্কটিশ খেলোয়াড় অ্যান্ডি মারে দারুণ টেনিস খেলে হারিয়ে দিলেন বিশ্বের এক নম্বর তারকা সার্বিয়ার নোভাক দিয়োকোভিচকে।

প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যে টেনিস টুর্নামেন্টগুলো হয় তার মধ্যে চারটে হল সম্মানের দিক দিয়ে সবার উপরে - এই টুর্নামেন্টগুলোকে বলা হয় গ্র্যান্ড স্লাম - অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন আর ইউ এস ওপেন। এর মধ্যে একমাত্র উইম্বলডন আয়োজিত হয় ব্রিটেনে, লন্ডনে। প্রাচীনতম টেনিস টুর্নামেন্ট বলে সম্মান আর ঐতিহ্যের দিক দিয়ে উইম্বলডনকেই সবার উপরে রাখা হয়। তাই সব তারকারই স্বপ্ন থাকে জীবনে একবার উইম্বলডন জেতার। ব্রিটিশদের ঘরের মাটিতে সেই স্বপ্নপূরণ হতে তাদের অপেক্ষা করতে হল ৭৭ টা দীর্ঘ বছর। ১৯৩৬ সালে ফ্রেড পেরী উইম্বলডন জেতার পর এই প্রথমবার কোন ব্রিটিশ এই শিরোপা অর্জন করলেন। সেই জন্যই আরও বেশী করে ভেঙ্গে পড়ল ব্রিটিশদের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাস।

কিন্তু যদি শেষ এক বছর, বা হয়তো কয়েক বছরের দিকে ফিরে তাকাও ব্রিটিশ সন্তান অ্যান্ডির এই সাফল্য মোটেই অবাক হওয়ার মত নয়। এর আগে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল, ফাইনাল অবধি গিয়ে আন্ডি মারে শেষ মুহূর্তে হেরে যাচ্ছিলেন রজার ফেডেরার, নোভাক দিয়োকোভিচ, রাফায়েল নাদাল-দের কাছে। টেনিসের ইতিহাসে এদের প্রত্যেকের রেকর্ডই ঈর্ষণীয়। কিন্তু মারে যে এদের সাথে লড়াই করার জন্য পুরোদস্তুর প্রস্তুত সেটা পুরোপুরি বোঝা গেল শেষ বছরের ইউ এস ওপেন আর ওলিম্পিকের পর। ইউ এস ওপেনের ফাইনালে পাঁচ সেটের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে অ্যান্ডি মারে জিতে নিলেন জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্লামের শিরোপা - সেই বারেও নোভাক দিয়োকোভিচকে হারিয়ে। সেই বছরের অন্য বড় সম্মান এল যখন আন্ডি মারে ওলিম্পিক ফাইনালে হারিয়ে দিলেন রজার ফেডেরারকে, যিনি অনেকের মতেই টেনিসের ইতিহাসে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়।

অনেকেই হয়তো বলবেন যে প্রথম আর দ্বিতীয় রাউন্ডে যথাক্রমে নাদাল আর ফেডেরার অপ্রত্যাশিত ভাবে হেরে যাওয়া অ্যান্ডির কাজটা অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিল। কিন্তু এটাও ঠিক যে বিশ্বের এক নম্বর তারকা দিয়োকোভিচ ফাইনাল অবধি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। সকলেই একপ্রকার ধরে নিয়েছিলেন যে আবার তীরে এসে তরী ডুববে অ্যান্ডি মারের। উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে ঘরের ছেলের সমর্থনের জন্য যদিও বিন্দুমাত্র অভাব ছিলনা। আর মারেও এইবার তাদের প্রত্যাশা আর ভালবাসার যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে জিতে নিলেন উইম্বলডনের শিরোপা। ফাইনালে দিয়োকোভিচকে একটিও সেট জিততে না দিয়ে - স্কোরবোর্ড দেখাল ৬-৪, ৭-৫, ৬-৪।

১৯৩৬ সালের পর প্রথম ব্রিটিশ আর ১৮৯৬ সালের পর প্রথম স্কটিশ অর্জন করলেন এই সম্মান। দীর্ঘ অপেক্ষার সমাপ্তি হল। আবেগ চেপে রাখতে পারলেন না অ্যান্ডি মারে। স্টেডিয়ামে উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন আপনজনদের।


পাভেল ঘোষ পোর্টল্যান্ড, ওরেগন এর বাসিন্দা। কম্পিউটার এর খুঁটিনাটি নিয়ে পড়াশোনা ও কাজকর্ম করার ফাঁকে ফাঁকে দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন; আর্সেনাল ক্লাব-এর একনিষ্ঠ ভক্ত।