খেলাঘরখেলাঘর

গরমের ছুটি


২.
এবার রুনিদের স্কুলের গরমের ছুটি পড়তে পড়তে অনেক দেরী হয়ে গেছে জ্যৈষ্ঠের শেষের দিকে পৌঁছে ওর ছুটি শুরু হয়েছে। ভুবনপুরের দাদুর বাড়িতে এই ছুটি কাটাবার জন্য প্ল্যানটা প্রথমে ছিল রুনির বাবার পরে মা’ও রাজী হয়ে গেলেন। রুনির দাদু দিদা তো শহরেই থাকেন কিন্তু মুকু দাদু অর্থাৎ মা যে দাদুকে মামা বলে ডাকে্ন সেই মুকেশ দাদুর অল্প কিছুদিন আগে নিজের গ্রামের বাড়িতে এই ভুবনপুর গ্রামে ফিরেছেন।এখন অবশ্য রুনির দিদা গ্রামে নেই, তিনি গেছেন তিনমাসের জন্য তাঁর ছোট ছেলের কাছে লন্ডনে। দাদু একা বলেই বাবা আর মা মিলে এই প্ল্যানটা এমন করেছেন যাতে বাড়িতে অল্পকিছুদিন রুনিরা থাকলেও বাড়ি ভরে থাকবে দাদুরও একা লাগবে না। রুনিদের দাদুর বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বাবা আবার শহরে ফিরে গেছে্ন। রুনির দিনগুলো এখন কী যে আনন্দে কাটছে সে বলে বোঝানো যাবে না কাউকে। ভোরের আলো ফুটলেই রুনির ঘুম ভেঙে যায়। ঘর থেকে ও তখন আলোগোছে দরজা খুলে উঠোনে এসে দাঁড়ায়। ও দাঁড়াতেই ওর গায়ে হাওয়া এসে মিষ্টি পরশ বুলিয়ে দেয়। আলতো পায়ে কখনও উঠোনের পুব দিকের পায়রার খোপের কাছে এসে দাঁড়ায় কখনও আবার পেয়ারাতলায় যায়। মা ঘুম ভেঙে রুনিকে একদিনও বিছানায় দেখতে পান না। ক’দিন আগে এ নিয়ে খুব রেগে গেছিলেন মা, ওকে বলেছিলেন, কাউকে না বলে অত ভোরবেলা ঘরের বাইরে বেরোতে নেই। পুকুরঘাটেও একা একা যেতে মা নিষেধ করেছে্ন, তাই রুনি পুকুরঘাটে যায়না ঠিকই কিন্তু সকালবেলার এই উঠোনে না বেরিয়ে ও পারে না। ও উঠোনে এসে দাঁড়াবার একটু পরেই মুকু দাদু উঠে পড়েন ঘুম থেকে, খড়ম পায়ে দাদু ওর পাশে এসে দাঁড়া্ন। তারপর খোপ খুলে দিয়ে পায়রাগুলোকে রুনি আর দাদু মিলে খাবার দেয়। ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ে খুঁটে খুঁটে সব খাবার খেয়ে বাড়ির ওপর দিয়ে উড়তে থাকে গোল হয়ে। তারপর সবগুলো পায়রা আরও ওপরে উঠতে উঠতে ছোট হয়ে যায়, একসময় চোখের বাইরে চলে যায়।
পায়রাগুলো উড়ে গেলে রুনি আর দাদু পুকুরঘাটে গিয়ে বসে। ঘাটের পাশেই একটা লেবুর ঝোপ আছে, ওখান থেকে লেবুফুলের গন্ধ ভেসে আসে। রোদের আলো এসে পুকুরের জলে পড়ে কেমন চিকচিক করতে থাকে রুনি তা মুগ্ধ হয়ে দেখে।

More articles from this author