৩.
বেলা বাড়লে রুনির সাথে খেলার সঙ্গী জুটে যায় পাশের বাড়ির বিজন, রেশমা আর আরেকজন সঙ্গী। ওর নাম ভুলু। চারজনে মিলে হৈ হৈ করে খেলায় মেতে ওঠে। বিজন রেশমা গাছের পাতা বুনো ফুল আর লাল পোড়া মাটি দিয়ে রান্নাবাটি খেলে। মাঝে মাঝে পুতুল নিয়েও বসে ওরা। আম গাছের নিচে দাদুর বানিয়ে দেওয়া দোলনাতে দোল খেতে খেতে কখন যেন দুপুর এসে যায়।তখন মা রুনিকে স্নানে নিয়ে যান। আর বিজনরা যে যার বাড়ি। ভুলু লেজ নাড়াতে নাড়াতে তখন ছায়ায় গিয়ে বসে।
রুনির খুব ইচ্ছে অন্যদের মত জলে সাঁতরে পুকুরে স্নান করার। কেমন সুন্দর সবাই ঝুপ ঝুপ ঝুপ্পুস করে জলে লাফিয়ে পড়ে, ওরও তেমন ইচ্ছে করে। মাকে রুনির ইচ্ছের কথা জানাতেই মা ‘না’ বলে দে্ন। আজও রুনি মা’কে বলছিল, মা আমিও ওদের মত করে স্নান করব। ঠিক পারব দেখো। মা কিছুতেই ওকে নামতে দেবেন না। এসময় কোথা থেকে যেন মুকু দাদু সেখানে এসে দাঁড়ালেন। বললেন, সুনু মা কি হয়েছে। রুনির কি চাই?
রুনির মা দাদুকে দেখে নরম গলায় জবাব দিলেন, মামা দেখুন না ও সাঁতার জানে না তবু জেদ করছে জলে নামবে বলে।
দাদু হেসে বললেন, তো কি আছে! এখন এই ছুটিতে ও তো সাঁতার শিখে ফেলতে পারে। তুই কেন বাধা দিচ্ছিস?
রুনি দাদুর কথা শুনে খুশিতে হাততালি দিয়ে উঠল। আর রুনিকে ঠেকায় কে। এবার ও ঝুপ্পুস করে জলে লাফ দিতে পারবে। মা’র হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য রুনি আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু মা ওকে ছাড়লে তো। ওর হাত ধরে থেকে রুনিকে মা বললেন, চল থেকে তোকে আমি সাঁতার শেখাব,তার আগে এই ঘাটে তুই চুপটি করে একটু বস। রুনিকে মা ঘাটে বসিয়ে রেখে নেমে গেলেন জলে।রুনি দেখল, প্রথমে মা ডুব দিলেন একটা তারপর আবার উঠলেন, আবার টুপ করে ডুব দিলেন। ও মা! মাকে রুনি আর দেখতেই পাচ্ছে না যে.. ও মা কোথায় তুমি? রুনি এদিক ওদিক তাকিয়েও মাকে আর খুজেঁ পাচ্ছে না।মা কি ডুবে গেলেন না কি! ঠিক তক্ষুণি হুশ করে মা ভেসে উঠলেন আবার।
তারপর রুনিকে মা জলে নামিয়ে দিলেন। প্রথমবারেই রুনি হুটোপাটিতে জলে প্রায় ডুবে যাবার অবস্থা কিন্তু মা তো সাথে আছেন, অমন সাঁতারু সাথে থাকলে রুনি আর ডোবে কি করে। কদিনের মধ্যেই রুনি সাঁতার শিখে ফেলল।