খেলাঘরখেলাঘর

গরমের ছুটি


৫.
রুনি এখন সাঁতার কাটে বন্ধুদের সাথে পাল্লা দিয়ে। একটু একটু করে গাছে চড়তেও শিখেছে ও। মুকু দাদুর সাথে মাঝে একদিন গিয়ে মেলা আর সার্কাস দেখে এসেছে।কিন্তু এত আনন্দের দিনগুলো সব ফুরুৎ করে পালিয়ে যাচ্ছে বলে ওর মনে হয়। মা বলেছেন, আর মাত্র সাতদিন এখানে থাকা হবে তারপর আবার নিজেদের সেই শহরে ফিরতে হবে।
আজ সকাল সকাল রুনি ঘুম থেকে উঠে শুনল খুব কাছ থেকে একটা পাখি ডাকছে টুন টুন করে। কতরকমের শব্দের সাথে যে রুনির পরিচয় হল এই কদিনে, ভাবতেই ওর ভালো লাগে। মুকু দাদু উঠোনে এসে দাঁড়ালে রুনি দাদুকে জিগ্যেস করল, ওটা কি পাখি! দাদু বললেন, টুনটুনি দিদিভাই।রুনির মনে হল পাখিটা যেন ওকেই ডাকছে রুন রুন করে। ভুলু এসে ওর কাছে দাঁড়িয়েছে এর মধ্যে। হঠাত তখন পাশের বাড়ি থেকে শোরগোল ভেসে এল। মুকু দাদুকে পিছনে ফেলে রুনি দৌড়ে গেল সেই শোরগোল শুনে। ওর সাথে পাল্লা দিয়ে ভুলুও দৌড়াচ্ছে। দুটো বাড়ি পরেই যেখান থেকে চিৎকার ভেসে আসছে সেখানে ঢুকে রুনি শুনতে পেল ওদের দুবছরের ছেলেটাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
রুনি দেখল, বাড়ির সকলে খোঁজাখুজির বদলে কান্নাকাটি আর হুলুস্খুলই বেশী করছে। রুনি এদিক সেদিক শিশুটিকে খুঁজতে শুরু করল। ঘর উঠোন পেরিয়ে পিছনদিকের পুকুরঘাটের কাছে এসে দাঁড়িয়ে জলের দিকে চোখ রাখতেই দেখতে পেল পুকুরের যেদিকটা জংলামত সে জায়গাটার কাছ ঘেঁসে একটা লাল কাপড়ের সামান্য অংশ যেন দেখা যাচ্ছে । রুনি কোনো কথা না বলে ঝাঁপিয়ে পড়ল জলে।সাঁতরে কাছে পৌঁছে দেখে যা ভেবেছিল তাই, ওই শিশুটিই জলে ডুবে গেছে। তবে এদিকটা জংলা বলে ওর গায়ের কাপড়টা আটকে গেছে ঝোপের সাথে, ওর শরীরটাও গভীর জলে তাই ডুবতে পারেনি তখনও কিন্তু অনেকটা জল পড়ে যাবার সাথে সাথে পেটে ঢুকে গেছে বলে ও কাঁদতেও পারেনি। ততক্ষণে ভুলোও সাঁতরে চলে এসেছে ওর কাছে। দুজনে মিলে শিশুটির কাছে গিয়ে তখন জোরে জোরে সবাইকে ডাকাডাকি করতে শুরু করেছে। সাথে সাথেই এদিক ওদিক থেকে দু একজন এসে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই শিশুটিকে উদ্ধার করল। তারপর ওরা্ সোজা শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে চলে গেল। রুনিও ওদের পিছে পিছে হাসপাতালের দিকে দৌড়াতে লাগল। ঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয়েছিল বলে শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হল।
রুনি আর ভুলু বাড়ি ঢুকতেই মা দৌড়ে এসে রুনিকে জড়িয়ে ধরলেন।ততক্ষণে বিজন রেশমাও এসে গেছে।  মুকু দাদুও ওদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। উনি বললেন, সুনু তোমার মেয়ে আজ যে বুদ্ধিমত্তার সাথে সাহসী কাজটি করে দেখাল তাতে করে সবার একটা শিক্ষা হয়ে গেল।
৬.
ছুটি শেষ। এবার ফেরার পালা।
রুনিদের নিয়ে যেতে বাবা এসে গেছেন আগের রাতেই। সব গোছগাছ হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরই ওরা বেরিয়ে পড়বে। মুকু দাদু রুনিকে বুকে জড়িয়ে ধরে আছেন। পাশে এসে দাড়িয়েছে বিজন রেশমা আর ভুলু।বাবাকে মা বোধহয় বলে দিয়েছিলেন, বাবা রেশমা আর বিজনের জন্য খুব সুন্দর সুন্দর বই,চকলেট আর জামাকাপড় এনেছে্ন। রেশমা আর বিজনকে রুনি সেই জিনিসগুলো দিল।
রিক্সা ভ্যান এসে দাঁড়াল। বাবা মা আর রুনি মুকুদাদুকে প্রণাম করে উঠে দাঁড়ালেন। মুকু দাদু রুনিকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আবার এসো দিদিভাই। রুনির খুব মন খারাপ হচ্ছে। রেশমা আর বিজনও মন খারাপ করে আছে। ভুলু মুকু দাদুর পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে ঘনঘন লেজ নাড়িয়ে যাচ্ছে।রিক্সায় উঠে রুনি ওদের দিকে ফিরে তাকাল… চোখ ভিজে গেল রুনির। 
সবাইকে ছেড়ে রুনির একটুও বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছে না।  

 

 

মেঘ অদিতি
ঢাকা, বাংলাদেশ

More articles from this author