খেলাঘরখেলাঘর

মাঁসিয়ার প্যাঁরি

 

মাঁসিয়ার প্যাঁরি

ন'মামা পল্টু বা পরিমল সরকার আমার থেকে বছর চারেকের বড় হলেও আমরা ভীষণ বন্ধু। ন'মামার একটাই দোষ হলো যেটা পছন্দ হয় বা মাথায় ঢোকে সেটা নিয়ে প্রচণ্ড মেতে ওঠে – বাবা মাঝে মাঝে হাসতে হাসতে বলেন,
‘পল্টুটার মাথায় গুবরে পোকা আছে আর সেটা নড়ে উঠলেই বিপত্তি – তখন খালি পালটি খেতে থাকে।’

মামা মাসিদের মধ্যে মা সবার বড় বলে সব থেকে ছোট ভাই পল্টুকে ভীষণ ভালোবাসেন – বলতে গেলে ন'মামা মার হাতেই মানুষ। পড়াশুনার সুবিধা হবে বলে বাবা ন'মামাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন – ধীরে ধীরে স্কুল শেষ করে ন'মামা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ভালো কোম্পানিতে চাকরিও পেয়ে যায়। হঠাৎই খবর এলো অফিসের কাজে ওকে দিন দশেকের মধ্যে দুই সপ্তাহের জন্য প্যারিস যেতে হবে। ন'মামা তো ভীষণ নার্ভাস – সুট করাতে হবে, টাই আর শু পরতে হবে। জীবনে সুট টাই পরে নি আর অফিসে পোষাকের তেমন বাধ্য বাধকতা না থাকায় বরাবরই প্যান্টের উপর বুস সার্ট আর কাবলি জুতো পরেই চালিয়ে এসেছে – এখন কি হবে? বাবা ওকে এসপ্লেনেডে নিয়ে ভালো দোকানে সুটের মাপ দিয়ে এলেন আর বাটা থেকে শু কেনা হলো সেই সাথে বাড়িতে বাবার গোটা কয়েক টাই নিয়ে তাতে নট দেওয়া আর নতুন জুতো পরে হাঁটার প্র্যাকটিস শুরু – বাড়িতে সবাই ন'মামাকে নিয়েই ব্যতিব্যস্ত। যাই হোক দিন দশেকের মধ্যে ন'মামাকে রেডি করে প্লেনে তুলে দেওয়া হলো। মা তো ভগবানের নাম জপছেন,
‘ছেলেটা একা এত দূর দেশে গেলো – কোনদিন কলকাতার বাইরেই যায় নি। কোথায় থাকবে? কি যে খাওয়া দাওয়া করবে? ওখানে তো আমাদের খাবারও পাবে না – সঙ্গে একজন বয়স্ক লোক থাকলেও হতো।’     
বাবা বোঝালেন, ‘এত বড় ছেলে – তিন বছরের উপর চাকরি করছে – তোমার এত ভয় পাওয়ার তো কোন কারণ নেই। আর কত দিন আঁচলের তলায় রাখবে? পল্টুকে তো নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে। দ্যাখো, ও ঠিক ম্যানেজ করে নেবে। ফিরে আসুক, তারপর দেখবে তোমার পল্টু কত পালটে গিয়েছে।’