খেলাঘরখেলাঘর

পিন্টু ও একটি গাছ




পুষ্প প্রদর্শনীর এক একটা গাছ যেন মাথায় ছবির মত বসে গেছে। দুই বন্ধু অনেকদিনই ভাবে কিছু একটা হবি থাকলে ভালো হয়। এবার দুজনেই মেতে উঠল বাগান করতে। পিন্টুর বাড়ির সামনেই খানিক বাগান করার মত জায়গা ছিল। সেখানে কিছু বিফল পরীক্ষা নিরীক্ষার পর অবশেষে একটা ঢিবির উপর ছড়িয়ে দেওয়া ভিজানো ছোলা থেকে লকলকিয়ে বেড়ে উঠল ছোলার গাছ। যবে থেকে বিজ্ঞান বইয়ে অঙ্কুরোদ্গম পড়েছিল, তবে থেকেই এটা হাতে নাতে করে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল দুজনের। ছোলা মটর ভিজিয়ে রাখলে কল বেরোয় এটা তো জানা, কিন্তু তাই থেকে যে দিব্যি গাছ হতে পারে এটা দেখে দারুন লাগছিল। একদিন যখন ইস্কুল থেকে ফিরে পিন্টু দেখল যে ছোট ছোট গাছগুলোতে আবার ফল ধরেছে, তখন আর আনন্দে থাকতে পারল না সে। কাউকে জিজ্ঞেস না করেই একটা ছিঁড়ে মুখে পুরে দিল। আহা সে কি স্বাদ!
এই কয়েক মাসে দুজনেই গাছ সম্পর্কে বিস্তর জেনে ফেলেছে। এমনকি সব গাছের চারা যে বীজ থেকে হয় না, কলম করা কাকে বলে এইসবও। টুবলু প্রথমে একটু গাম্ভীর্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছিল, বিশেষ করে সে নিজেই যখন প্রথম আইডিয়াটা দিয়েছে, তখন একটু তো কায়দা রাখতেই হবে।  কিন্তু পিন্টুর উৎসাহ দেখে সেও সমান তালে ঝাঁপিয়ে পড়ল। টুবলুর বাড়িতে বাগান করার মত সেরকম জায়গা নেই। তাই সে তার বাগান শুরু করল ছাতে টব নিয়ে।
দুজনকেই যে চিন্তাটা ভিতর ভিতর জালাচ্ছিল, তা হল বনসাই। প্রদর্শনীর এক প্রান্তে রাখা ছিল ঐ গাছগুলো। ছোট চ্যাপ্টা মাটির টবে। কোনটা বট, অশ্বত্থ বা পাকুড়। নিচে লেবল করে লেখা ছিল কোন গাছের কত বয়স - সাত বছর, দশ বছর, পনেরো বছর। অত বয়স যদি হবে তাহলে গাছগুলো এত ছোট কেন? আশ্চর্য ছোট হলে কি হবে দেখতে ওগুলোকে এক্কেবারে হুবহু বড় গাছের মতই, সেরকম খুদে গুঁড়ি, মোটা শেকড় উঠে এসেছে, ঝুরি নামছে।
এই নিয়ে ভাবতে ভাবতে অবশেষে পিন্টু একদিন ধরল ওর পিসতুতো দাদা মান্টিকে। মান্টি তখন ডাক্তারি পড়ছে, ছোটদের যে কোন বিষয়ে কিছু বলতে পারলে সে খুশিই হয়। একদিন সে পিন্টু আর টুবলুকে ধরে বনসাই করা বোঝাতে শুরু করল।
“তোরা বিজ্ঞানে পড়েছিস গাছের শেকড় কিরকম হয়?”
“পড়েছি বৈকী। শেকড় দুরকম। একটা প্রধান মূল আর বাকিগুলো শাখা আর প্রশাখা মূল”
“ভেরি গুড। বড় বড় গাছের ওপরে যতটুকু থাকে তার দ্বিগুন বা তিনগুন থাকে মাটির তলায়। তা এইরকম একটি ছোট গাছের প্রধান মূলটা কেটে দিয়ে যদি চ্যাপ্টা কোন টবে বসিয়ে দেওয়া যায়, তবে গাছের প্রধান মূল আর বাড়ে না, কিন্তু খাদ্যের জন্য শাখা আর প্রশাখা মূল বাড়তে থাকে। তবে গাছের যে পূর্ণ বৃদ্ধি হত, সেটা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বছরের পর বছর গাছগুলো দিব্যি থাকতে পারে টবের মধ্যেই”
দুজনে হাঁ করে শুনছিল। ব্যাপারটা খুব বোধগম্য না হলেও পিন্টু বলে বসল, “আচ্ছা, আমরা চাইলে বনসাই করতে পারি?”
“কেন পারবি না? কেবল একটা বট বা অশ্বত্থের চারা যোগাড় করতে হবে। সেটা যে কোন পুরনো বাড়ি বা পাঁচিলের গায়েই পেয়ে যাবি। তারপর যেরকম করে বললাম, সেরকম করে একটা টবে বসিয়ে দিলেই হবে। আমার এক বন্ধু যা বনসাই করেছিল না শুনলে তাক লেগে যাবে।”
“বলো, বলো-”, দুজনেই বায়না ধরল।
“সে কোথাও থেকে ছোট ছোট এই আঙুলের সাইজের ইট বানিয়ে এনেছিল অর্ডার দিয়ে। তারপর মাটি দিয়ে গেঁথে তার ওপরে বসিয়েছিল একটা বটের চারা। ফলে বটের শেকড় বাকড় সেই ইঁটের ফাঁক দিয়ে জায়গা করে নিল। ব্যাপারটা দেখতে হল যেন পোড়ো বাড়ির চাতালে বট”
দুই বন্ধু গুনমুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগল সেইসব গল্প। গল্প শুনতে শুনতে যে কতরকম দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল মাথায় তার ঠিক নেই।