খেলাঘরখেলাঘর

পিন্টু ও একটি গাছ





এরপর মাঝে মাঝেই তাদের খেলার মাঠেও কম দেখা যেতে লাগল। যে সময়টা খেলে কাটাত সেই সময়টায় দুজনে মোটামুটি চষে ফেলল মফঃস্বল শহরটা।
এমনিতেই যেভাবে বাড়ি গজিয়ে উঠছে এখানে ওখানে, তাতে খেলার মাঠই আছে হাতে গোনা। সেখানে আর পোড়ো বাড়িই বা তারা খুঁজে পাবে কোথায়। একদিন তো একটা অচেনা রাস্তায় চলতে চলতে প্রায় পুকরে পড়ার উপক্রম হয়েছিল - একটা ঢালু রাস্তার ওপ্রান্তে যে পুকুর আছে সেটাই তারা জানতো না।  তবে ঘুরতে ঘুরতে একটা উপকার হয়েছিল। একদিকে পাড়ার সব রাস্তা , অলিগলি, আর অন্যদিকে যত রকমের গাছপালা চোখে পড়ে, তা সবকিছুই জানা হয়ে গেল দুজনের।
কিন্তু সমস্যাটা তখনও মেটেনি। বট বা অশ্বত্থের চারা সেরকমভাবে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খুঁজে পেতে একটা মাঠের ধারে প্রকান্ড এক বট খুঁজে পাওয়া গেছিল বটে, কিন্তু চারা আর পাওয়া যায় নি।
টুবলু একবার বলেছিল যে বটের বীজ থেকে চারা করে নিলে কেমন হয়? কিন্তু সেই প্রস্তাব পিন্টুর খুব একটা মনে ধরেনি। এমনকি বটগাছটাই তার খুব একটা পছন্দের নয়। যদিও বটের গুঁড়ি হয়, আর অশ্বত্থের হয় না। তবু বটের পাতাগুলো যেন কেমন। এরকমভাবে খোঁজাখুজি করতে করতে একদিন দুজনেই মনের মত চারা খুঁজে পেল। টুবলুর বটের চারাটি ওপড়াতে গিয়ে শেকড়টা অনেকটা ছিঁড়ে গেলেও, টবের মাটিতে জল আর যত্ন আত্তি পেয়ে সে বেশ সামলে নিয়ে দাঁড়াল। আর পিন্টুও অশ্বত্থ চারা ওপড়াতে গিয়ে টের পেল যে ঐটুকু গাছের শেকড় কত লম্বা। তবে শেষ পর্যন্ত যখন কাটতেই হবে, তখন আর বেশী কষ্ট না করে একরম কেটেই ফেলেছিল সে। সেই গাছও দাঁড়িয়ে গেল টবে।
প্রথম প্রথম খুব একটা পার্থক্য বোঝা যাচ্ছিল না। কারন প্রদর্শনীতে দেখা গাছগুলো পাতা ছিল ছোট ছোট - যেন বড় গাছের একটি ক্ষুদে সংষ্করন। এদিকে পিন্টু বা টুবলু কারো বনসাইতেই পাতাগুলো দেখে তা মনে হচ্ছিল না। মানে দু একটা যে পাতা ছিল, তা একেবারে বড় গাছের মতই। আর বনসাই করতে গেলে সাত বছর অপেক্ষা করতে হবে এই ভেবেই দুজনে একটু দিশেহারা হয়ে যাচ্ছিল। এই সময়ে তাদের সবচেয়ে বেশী করে দরকার ছিল মান্টি’দাকে। কিন্তু মান্টি’দা অল্প কদিনের ছুটি ছাটা পেলে তবেই আসে, আবার হস্টেলে ফিরে যায়। সে সময়টা তার সাথে যোগাযোগ করাই মুশকিল।
একবার টুবলু এসে বলল, “আমার মনে হয় সার দিতে হবে।”
“সার? সার জিনিসটা ঠিক কি?”
“ওরে বোকা সার জানিস না? ওটা হল গাছেদের খাবার। গাছের গোড়ায় সাদা সাদা গুঁড়ো মত ছড়িয়ে দেয় দেখিসনি কখনও?”
পিন্টু সত্যিই দেখেনি। তাও সে ঘাড় নাড়ল। টুবলুটা এক এক সময় এমন একটা জিনিস ঝাড়ে যে সে স্রেফ ভ্যাবলা হয়ে যায়। কিন্তু তাই বলে আর প্রেস্টিজ খোয়ালে তো আর চলবে না। তাই কোনরকমে সামলে নিয়ে বললে, “ তা নয় হল, কিন্তু এখন সার আমরা কোথায় পাব?”
“হুমম। ভাবছি। মনে হচ্ছে বড়দের কারো কাছে জিজ্ঞেস করে দেখতে হবে।”
কপাল ভালো সেই শনিবারেই পিন্টুর রাঙাদাদু এলেন ওদের বাড়িতে। পিন্টু দাদুর খুব প্রিয়। প্রত্যেকবার দাদু এসে খবর নেন সে কেমন পড়াশুনো করছে। তারপর মাকে লুকিয়ে একটা ক্যাডবেরী দেন। কিন্তু এবারে পিন্টুর আনন্দ আর দেখে কে। সে মায়ের কাছে শুনেছিল যে দাদুর খুব গাছের শখ। একসময়ে একটা বড় বাগান করেছিলেন, এখন বয়স হয়ে গেছে বলে আর নিজে থেকে সামলাতে পারেন না। তবে গাছ খুব ভালোবাসেন। পিন্টু দাদুকে টানতে টানতে বাগানে এসে বলল, “জান দাদু, এবারে আমরা কি করেছি? এই দ্যাখো - একটা বনসাই বানাচ্ছি।”
পিন্টুর দাদু ভুরু কুঁচকে বললেন, “বনসাই?”