খেলাঘরখেলাঘর

পিন্টু ও একটি গাছ






“কেন ভালো হয়নি?”
“নাহ”
পিন্টুর মুখ ভার হয়ে গেল। সে অপেক্ষা করেছিল দাদুকে বনসাইয়ের কথা বলে তাক লাগিয়ে দেবে। কিন্তু দাদু যে এরকম বলবেন সে ভাবতেই পারেনি। অভিমান ভরা গলায় সে বলল, “কেন দাদু, ভালো হয়নি কেন?”
“বলছি। তার আগে তুমি আমায় বলো তো, যে আগের বছর যে জামা যে জুতো পরতে - এবছর কি সেগুলো পরো?”
পিন্টু একটু ভেবে মাথা নাড়ল।
দাদু হেসে বললেন, “কেন বলো তো? জামাপ্যান্ট তো খারাপ হয়ে যায়নি। জুতোটাও তো ঠিকই আছে। তবে?”
“তবে আবার কি? আমি তো বড় হয়ে যাচ্ছি দাদু। এখন তো আমার পায়ে এক সাইজের বড় জুতো লাগে।”
“একদম ঠিক কথা। তোমার বাবা মা, বড়রা সবাই চাইবেন যে তুমি আস্তে আস্তে বড় হও। ভালো করে পড়াশুনো কর, অনেক উন্নতি কর, তাই না?”
ঠিকই। দাদু কিছু ভুল বলছেন না।
“তাহলেই ভাবো প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে বড় হওয়া। তোমার আশে পাশে সব ছেলেমেয়েকে দেখো। তারা সব্বাই বাড়ছে। তাই না? তোমার মা তোমাকে রোজ দুধ খেতে, মাছ খেতে বলেন কেন? যাতে তুমি বড় হও, ঠিক মত পুষ্টি পাও।”
পিন্টু মাথা নাড়ল।
“এবার মনে করো, আমি তোমাকে খাবার দিলাম না। দিনে একবার খেতে দিলাম। পা দুটো দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখলাম, যাতে তুমি বাড়তে না পারো? তাহলে? তোমার কি কষ্ট হবে না? আর তোমাকে ঐরকম দেখে কি আমাদের ভালো লাগবে?”
পিন্টু একটু ভয়ে শিউরেই উঠল। এমনটা খুব সাংঘাতিক হবে তাতে সন্দেহ নেই।
“তাহলেই বুঝে দেখো দাদুভাই। একটা মানুষের যদি এরকম করলে কষ্ট হয়, তাহলে গাছেদেরই বা কষ্ট হবে না কেন? ঐ যে গাছটাকে তুমি টবে রেখেছো ওর কত বড় হওয়ার কথা, কিন্তু তুমি ওর শেকড় কেটেছো, ওকে সেরকম খাবার দিচ্ছো না। ওর কি খুব ভালো লাগছে? ভেবে দেখো তো একবার। শুধু তোমার দেখতে ভালো লেগেছে বলে একটা গাছকে এত যন্ত্রনা দেবে?”
পিন্টু আস্তে আস্তে বলল, “না”
“গুড বয়। আর গাছ নিয়ে আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস কি আবিষ্কার করেছিলেন মনে আছে তো?”
“গাছেরও প্রাণ আছে।”
“উঁহু, তা তো আছেই। তবে সেটা জগদীশচন্দ্র প্রমাণ করেননি। উনি বলে গেছিলেন যে গাছও উত্তেজনায় সাড়া দেয়। অর্থাৎ তুমি যে এরকম করছো ঐ গাছটার সাথে, তাতে ওরও খুব কষ্ট হচ্ছে, ও তোমাকে বলছেও। কেবল তুমি শুনতে পাচ্ছো না। বুঝলে দাদুভাই?”
পিন্টু মাথা নাড়ল।
“কিন্তু গাছটাকে কি ফিরিয়ে দেওয়া যাবে, দাদু?”
দাদু হাসলেন। “ফিরিয়ে হয়তো দেওয়া যাবে না। তবে তুমি ওকে মাটিতে ফিরিয়ে দাও। ও ঠিক নিজের মত বাড়বে। ”



দু মাস কেটে গেছে। বনসাই আর করা হয়নি। তবে তার বদলে বসেছে অনেকগুলো জবা গাছ। শুধু একরকম নয় - বিভিন্ন রঙের। আর ওদিকে টুবলু টবে বসিয়েছে ফিলোড্রেনডন। সেও পুরোদস্তুর শিল্পীর মত একটা লাঠির ওপর রীতিমত ছোবড়া দিয়ে মুড়ে একটা অবলম্বন তৈরি করে ফেলেছে যাতে গাছটার শেকড়গুলো ছোবড়ার মধ্যে দিয়ে ঢুকে গাছটাকে সোজা বাড়তে দিতে পারে। 
পিন্টুর জন্মদিনে একটা গাছ উপহার দিয়েছেন রাঙাদাদু। দেখতে অনেকটা বনসাইয়ের মতই। মানে বড় গাছের মত গুঁড়ি তার, তবে খুবই ছোট্ট। দাদুকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিল পিন্টু - ওটার বয়স কত?
দাদু হেসে বলেছিলেন, “তিনমাস। তবে আরেকটু বাড়লে ওটাকে বড় টবে দিও”
পিন্টু মাঝে মাঝেই ছোট্ট টবটাকে একটা ট্রেতে করে পড়ার টেবিলে এনে রাখে। ওর সাথে গাছটাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কিনা সেটা নজরে রাখতে হবে তো!




অভ্র পাল
কলকাতা