খেলাঘরখেলাঘর

শিবমের কথা

শিবমের কথা


কুউ কুউ- কুউঃ,ভর দুপুরে কোকিল ডাকছে।তাও যদি বসন্ত কাল হত। চৈত্রের খরা চারি দিকে-- বাইরে লু চলছে।বেশী সময় বাইরে ঘুরলে তো কথাই নেই,নির্ঘাত শরীরে জল কমে যাবে, আর ডিহাইড্রেশন হয়ে  যাবে।

এত বড় কথা লকু বোঝে না,সে গ্রামে থাকে,সকাল নেই, দুপুর নেই,শীত নেই,গ্রীষ্ম নেই,সব সময় সব জাগায় টো টোকরে বেড়াচ্ছে।

শিবম গ্রামে বেড়াতে এসেছে,মাসির বাড়িতে।ও থাকে বড় শহর খরকপুরে।খরকপুর বেশ বড় ও  পুরনো শহর।
--লু কাকে বলে জানিস তুই?শিবম জিজ্ঞেস করল লকুকে।
--কে জানে!হবে গরমের কিছু,লকু বলে।
শিবম বলে,লু মানে গরম হাওয়া--গরমের সময় যখন গরম হাওয়া বইতে থাকে তাকে বলে লু!
লকু হাসে,লু--ল্যাংড়া,লুলা!

শিবম পন্ডিতের মত বুঝিয়ে চলে,হ্যাঁ,তাই,ওই গরম হাওয়া যদি শরীরে কিছুক্ষণ লেগে যায়,আমাদের শরীরের মধ্যে যে জল থাকে তা শুকিয়ে যায়।আর শরীরে জল কম হলেই ডিহাইড্রেশন হয়ে যায়। মানুষ তখন ওই তোর কথার মত ল্যাংড়া লুলার মত হয়ে যায়। শিবম খুব সিরিয়াস এ সব ব্যাপারে।

লকু হাসে,যেন এসব সে গ্রাহ্যই করে না,কত গরমে তো ঘুরে বেড়াচ্ছে ও,কত গরম হাওয়া শরীরে উপর দিয়ে  বয়ে গেল--কোথায় লু--কোনো দিন কিছু তো হয়নি ওর!--ফুঃ,ওসব কিছু না,ওসব শহরের ব্যাপার!লকু বলে ওঠে,ও সব লু এখানে ফুঃ রে!গ্রামে ওসব কিছু নেই। যাবি নাকি আম কুড়াতে?এইয়া বড় বড় আম,হিমসাগর,ল্যাংড়া আর কাঁচা মিঠা--যাবি তো চল।

শিবমের ইচ্ছা তো করে ঘুরে বেড়াতে,আম কুড়াতে যেতে,নদীতে ছিপ নিয়ে মাছ ধরতে যেতে,কিন্তু  ওই ভয়--লু ...ক্লাসের টিচার লুয়ে এমন ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন যে দুপুর রোদ্দুরে কোথাও বেরোতে ভয় হয় শিবমের।

গ্রীষ্মের অবকাশ চলছে এখন।টানা এক মাস ছুটি চলবে।গরমের দিনে গ্রামের দিকগুলি একটু ঠান্ডা  থাকে বলে শিবমের মা বাবা শিবমকে নিয়ে এসেছেন তার মাসি মেসোর বাড়ি নতুন গ্রামে।নতুন গ্রাম, রানাঘাট থেকে বেশী দূর না,মাত্র একটা স্টেশন,রানাঘাট--তারপরে কালীনারায়ণপুর--ধরতে গেলে কত- আট দশ কিলোমিটার হবে।কালী নারায়ণপুর স্টেশনে নেমে তিন কিলোমিটার রিক্সায় যেতে হয়,বাস টাস
কিছুই যায় না গ্রাম পর্যন্ত।

প্রায় বছরে একবার শিবম ওরা চলে আসে নতুন গ্রাম ,মাসির বাড়ি।গরমের সময় এলে দুপুরে বের হতে পারে না শিবম।আর ওরই মাসতুতো ভাই লকু কেমন দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে পল্টু খেদু ওদের সঙ্গে নিয়ে!ঝড়ে আম পাড়ছে,কুড়চ্ছে,ছিপ নিয়ে ভর দুপুরে মাছ ধরতে যাচ্ছে।শিবমের মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় মাসি মেসোর ওপর। লকুকে কিছু বলেন না ওঁরা।যখন তখন যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে লকুটা।
--মাসি ও মাসি দেখো,লকু এখন আম কুড়োতে চলে গেলো। লকুকে থামাবার চেষ্টায় শিবম মাসিকে নালিশ করে।
মাসিও হাত পা ছড়িয়ে বলে ওঠেন,ও আমার কথা শোনে নাকি!পড়াশুনা তো নাই রাত দিন টো টো আর টো টো,ব্যাস হয়ে গেল মাসির শাসন।যার আম কুড়াতে যাবার কথা সে কি মার কথা শোনার জন্য বসে আছে!

তাপস কিরণ রায় অর্থশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্কুলে শিক্ষকতা করেন বেশ কিছু বছর। পরে আয়কর বিভাগে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি মধ্য প্রদেশের জবলপুর শহরে বাস করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন। ছোটদের এবং বড়দের জন্য লেখা তাঁর অনেকগুলি বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।