খেলাঘরখেলাঘর

শিবমের কথা



শিবম বলল তোদের সবার গামছা আছে ,আমার তো গামছা নেই!
লকু বলল,তুই তো স্নান করবি না,মাসি মেসো বলেছে।
মাঝ খান থেকে পল্টু বলে উঠলো,আমাদের তো গামছা আছে,দরকার হলে নিয়ে নিবি!নদীতে যাবি আর স্নান করবি না,এটা হয় কি করে?

গল্পে গল্পে,হাঁটতে হাঁটতে,ছুটতে ছুটতে তিন কিলোমিটার পথ বিশ পঁচিশ মিনিটে পৌঁছে গেলো। চুর্নী নদী,খরস্রোতা,চৌওড়া বেশী নয়,তবু নিয়মিত ঘাট পারাপারের নৌকো আছে।ও পারে যেতে গেলে মাথা পিছু আট আনা পয়সা লেগে যায়।

নির্জন জাগা দেখে,সেখানে ছিপ পাতবে বলে ঠিক করল ওরা।গোনাগুন্তি চার জনের চারটা ছিপ।বেশি ছিপ লকু মনে করে শিবমের জন্য নিয়ে এসেছে। এবার বড়শিতে  মাছ ধরার জন্য কেঁচো গাঁথার পালা, শিবমের হাতে কেঁচো বড়শিতে গাঁথার জন্যে দেওয়া হলো।কেঁচো হাতে নিয়ে তার শিহরণ জেগে উঠলো শরীরে!ওগুলো কেমন যেন হাতের মধ্যে দিয়ে বাইতে থাকে!গা শিরশির করে ওঠে শিবমের। অনেক চেষ্টা করেও গাঁথতে পারে না.অগত্যা কেঁচো গাঁথায় ওস্তাদ খেদু শিবমের বড়শিতে কেঁচ গেঁথে দিলো।ছিপ পাতা হলো। শিবমের ছিপে মাছ ধরার অভিজ্ঞাতা নেই,তাই লকু কি করে ছিপ টেনে মাছ ধরতে হবে বুঝিয়ে দিতে লাগলো-
--দেখ,এই ভেসে আছে ফাতনা,মাছে খেলে ওটা নড়তে থাকে,আর বেশী নড়ে উঠলে বা ডুবে গেলে ভাববি এবার মাছে আধার খেয়েছে,বুঝলি!

ইতিমধ্যে পল্টু একটা মাছ ধরে ফেলেছে,পুঁটি মাছ.ছিপ ছেড়ে মাছ দেখতে গেলো শিবম।বড়শির কাঁটা মাছের গলায় আটকে আছে।পল্টু মাছের গলা থেকে বড়শি খুলে আধারের কেঁচো ঠিকঠাক গেঁথে আবার ছিপ ফেলল।

ওরা বেশকিছু মাছ ধরে ফেললো,লকু প্রায় একশ গ্রামের একটা বেলে ধরে ফেলেছে।শিবমের ছিপের ফাতনা বেশ ক' বার জলে ডুবলো,ছিপ ধরে ও এত জোরে টান মারছে যে কিছুই ধরা পড়ছে না.একবার একটা মাছ জলের উপর পর্যন্ত উঠে আবার ছিটকে জলে পড়ে গেলো। পল্টু শিবমকে বলল,ছিপ অত জোরে টানলে হবে না,এদিক ওদিক করে হেঁচকা টানতে হবে।

অনেক সময় কেটে গেলো,নিরাশ শিবমের আর ছিপ ধরে বসে থাকতে ভালো লাগলো না।লকু,খেদু ,পল্টু সবাই স্নানের জন্যে নদীতে নেমে পড়েছে,ওরা লাফাচ্ছে,ডুব দিচ্ছে,মাঝে মাঝে জলের মধ্যে ডোবাডুবি  করে ছোঁয়া-ছুই খেলছে। শিবমের বেশ মজা লাগছে.কিন্তু মজার সঙ্গে খুব কথাটা যোগ করতে পারছে না।কারণ,ও নিজে ওদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠতে পারছে না.শুধু মাত্র দর্শক হয়ে,যতটুকু আনন্দ উপভোগ করা যায় ততটুকু সে উপভোগ করছে।

এমনি সময় ঘটনাটা ঘটল।শিবম দেখল তার ছিপের ফাতনা বারবার ডুবছে আর ভাসছে,তার মানে ছিপ এবার তাকে হেঁচকা টানতে হবে।ছুটে ছিপ ধরে হেঁচকা টান মারলো শিবম।আর সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো কোনো বড় মাছ বড়শিতে লেগে গেলো।সে ছিপ ধরে টানতে লাগলো,অন্য দিকে বড় মাছ বেশ টানছে তাকে।

তাপস কিরণ রায় অর্থশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্কুলে শিক্ষকতা করেন বেশ কিছু বছর। পরে আয়কর বিভাগে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি মধ্য প্রদেশের জবলপুর শহরে বাস করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন। ছোটদের এবং বড়দের জন্য লেখা তাঁর অনেকগুলি বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।