খেলাঘরখেলাঘর

শিবমের কথা



চেঁচিয়ে উঠলো শিবম,বেশ বড় মাছ হবে,শিবমের জোরে কুলোচ্ছে না,কোনো মতই ছিপ টেনে তুলতে পারছে না।চেঁচিয়ে সবাইকে ডেকে উঠলো শিবম,ইতিমধ্যে শিবম দেখল তার ছিপের সুতোয় লাগা একটা সাপের গলার মত গলা একবার ভেসে আবার ডুব দিলো জলে।ভয় পেয়ে গেলো শিবম,ও চীত্কার করে উঠলো,ওরে বাবা,সাপ লেগেছে ছিপে,ভয়ে হাত থেকে ছিপ ছুটে গেলো,এবার ছিপ শুদ্ধু টেনে নিয়ে যেতে
লাগলো আপাতত আনুমানিক দেখা সাপটা।

ডাঙায় ছুটে এলো সবাই,ওদের মধ্যে হই চই লেগে গেলো,ছিপ ধরার জন্য খেদু আর পল্টু ঝাপ দিলো জলে.ছিপ ক্রমশঃ গভীর জলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি সাঁতরে গিয়ে খেদু ছিপ টেনে ধরলো। জলের মধ্যে তাই জলজ প্রাণীর জোর কম নয়,খেদু সাঁতার কেটে জলের মধ্যে দিয়ে ছিপ টেনে আনতে পারছে না।অবস্থা দেখে পল্টু খেদুর এক হাত ধরে টানতে লাগলো।এবার আস্তে আস্তে পারের দিকে
আসছে ওরা।

পারের ওপর থেকে উত্তেজিত শিবম সমানে চীত্কার করে যাচ্ছে,সাবধান সাপ হলে তোদের কামড়ে দেবে,সাপ আছে, ছিপ তোরা ছেড়ে দে,কে কার কথা শোনে,সাপ টাপের অত ভয় গ্রামের ছেলেদের কোথায়! ওরা জানে সাধারণ ভাবে জলের মধ্যে বিষধর সাপ থাকে না।আর থাকলেও সে সাপ মাছের মত ডুব দিয়ে আধার খেতে যাবে না।

ছিপ নিয়ে পারে উঠলো খেদু আর পল্টু,এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি,--ছিপে যেটা বেঁধেছে,সেটা মাছ,সাপ না অন্য কিছু!কারণ সেটাকে এখনো জলের উপর ওঠানো হয়নি.শিবমের উত্তেজনা বেড়েই চলেছে,মুখ দিয়ে বারবার একি কথা বের হোয়ে আসছে,সাবধান,সাবধান...

এবার লকু ডাঙ্গা থেকে ছিপ ধরে নিল আর গায়ের জোরে টানতে থাকলো।জন্তুটা সামান্য ভেসে আবার ডুবলো।সবাই একমাত্র শিবম ছাড়া,চীত্কার করে উঠলো,কচ্ছপ,কচ্ছপ,বড় কচ্ছপ লেগেছে।কচ্ছপের উল্টো দিকের চেহারা দেখে শিবম আরও ভয় পেয়ে গেলো।টেনে তোলার আগে কচ্ছপ পালাবার জন্যে খোলের ভিতর থেকে তার হাত পা মুখ ছটফটাচ্ছে।জলের মোধ্যে কচ্ছপের ওই ধরণের হাত পা মুখ ছড়িয়ে লাফ ঝাপ দেখলে সত্যি শহরের ছেলেরা ভয়ে আঁতকে উঠবে,এটা স্বাভাবিক।

সারা রাস্তা আনন্দে ছিপের সুতোয় লাগা কচ্ছপ ঝুলিয়ে চার শিকারী ঘরে ফিরল.কচ্ছপের মাংস নাকি সুস্বাদু হয়,শিবম জানে না,ও কোনো দিন কচ্ছপের মাংস খায় নি। বরং ওর চেহারা ছবি দেখে ভয়ই লেগেছে,খাবার কথা চিন্তা করতে পারে না। কচ্ছপের মাংস রান্না অবশ্য লকুর মা,শিবমের মাসি করলেন।পল্টু আর খেদুকে খেতে বলা হলো।বাড়ির সবাই মিলে কচ্ছপের মাংস খেলো,কেবল শিবম খেলো না, আর ওর মাও খেলেন না।

যাই হোক,এবার ছুটিতে এসে শিবমের কচ্ছপ ধরার অ্যাডভেঞ্চার  ভালই লাগলো।স্মরনীয় একটা ঘটনা বটে।কিন্তু তখন শিবম চিন্তা করতে পারেনি যে তার জীবনে আরও অ্যাডভেনচার বাকি ছিলো!

 

 

তাপস কিরণ রায় অর্থশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্কুলে শিক্ষকতা করেন বেশ কিছু বছর। পরে আয়কর বিভাগে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি মধ্য প্রদেশের জবলপুর শহরে বাস করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন। ছোটদের এবং বড়দের জন্য লেখা তাঁর অনেকগুলি বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।