খেলাঘরখেলাঘর

শিবমের কথা



সে ঘটনা বলে ফেলা যাক এবার।
বাড়ি ফিরতে আর তিনদিন বাকী আছে,গরমের ছুটি, এসময় তো গাছের আমগুলি বড় বড়,ডাঁসার কাছাকাছি,ওজনেও বেশ ভারী থাকে।আর গরম কালেই মাঝে মধ্যে ওঠে ঝড়,ধুপ ধাপ একের পর এক আম পড়তে থাকে গাছ তলায়.গাঁয়ের ছেলেরা কি তখন ঘরের মধ্যে ঝড়ের ভয়ে বসে
থাকতে পারে!

অবশ্য শিবমের ব্যাপার আলাদা,ওর মনের দিক থেকে এলার্জি আছে বলতে হবে.স্কুলের টিচার লুর ব্যাপার তার মনের ভিতর এমনি গেঁথে দিয়েছে যে সে গরমের দিনে রোদ্দুরে কোথাও বেরোতে চায় না।তবু সময় সুযোগ মূহুর্ত আমাদের প্রবল অনিচ্ছাকেও স্বেচ্ছায় বরণ করে নিতে প্ররোচিত করে।

এমনি এক ঝড়ের দিন ছিলো।বিকেল হয় হয় করছে,দু চার মিনিট আগেও রোদ ছিলো বেশ,এর মধ্যেই হাওয়া চলতে লাগলো,কোত্থেকে কালো মেঘের দল আকাশে মারামারি শুরু করে দিলো,ফলে বিদ্যূত চমকের সঙ্গে সঙ্গে হালকা বৃষ্টি শুরু হলো সে সঙ্গে দমকা হাওয়া চলতে লাগলো.
হাতে বেগ নিয়ে ছুটে আসলো লকু। শিবমকে বলল,চল আম কুড়াতে,সর্দারের আম বাগানে যাবো,চল, তাড়াতাড়ি চল।

শিবম একটু থমকালো,বাইরেটা দেখল,না রোদ নেই,মেঘের ফাঁক দিয়ে সামান্য রোদের ঝিলিক আছে। কিন্তু সেটুকু রোদ যেন হালকা বর্ষায় ভিজে যাচ্ছে। গরম অনেক কমে গেছে। পরক্ষণেই তার মন দোলা খেলে গেলো,সে দিনের মাছ ধরতে যাবার আনন্দ,রোমাঞ্চ,তার মনকে দুলিয়ে দিল। ঝড় বৃষ্টি, গ্রামের মাঠ ঘাট,ছুটে চলা মেঠো পথ যেন হাত ছানি দিয়ে তাকে ডেকে উঠলো। সে যেন ঝড়ে আম গাছের দুলুনি দেখতে পেল--ওরা যেন বলছে,আয়,আয়,আর ধুপ ধাপ আম গুলি মাটিতে পড়তে লাগলো!আয়,আয়,আজ আমরা সবাই আনন্দে মাতি!

লকু,হাতে টান দিয়ে,চল শিগগিরই,বলে শিবমকে টেনে নিয়ে চলল সর্দারের আম বাগানের দিকে। ঘর থেকে বের হবার পর শিবমকে আর টেনে নিয়ে যেতে হলো না,প্রকৃতির উত্ফুল্ল আনন্দে সেও মেতে  উঠলো,ওরা ছুটতে ছুটতে লাফাতে লাফাতে,কখনো দু হাত তুলে হই হই করতে করতে পৌঁছে গেলো সর্দারের আম বাগানে।

পল্টু খেদু আরও দু একটা ছেলে আগে থেকেই সেখানে হাজির ছিলো।শিবম,লকু পৌঁছতেই তাদের দিকে তাকিয়ে সবাই আনন্দের সামান্য হাসি ছড়িয়ে দিলো। ঝড়ের ঝাপটা এসে গাছ নাড়িয়ে দিয়ে গেলো,ধুপ ধাপ সমানে আম পড়ে যেতে লাগলো,লাফিয়ে লাফিয়ে ওরা সবাই আম কুড়োতে লাগলো। এখান থেকে ওখানে,এদিক থেকে ওদিকে ছোটা ছুটি করে এক সময় দেখল সবার আমের সব ব্যাগ ভরে গেছে।

এদিকে অন্ধকার ছুঁই ছুঁই করছে,ফিরছে ওরা,শিবমের হাতে আম ভরা ব্যাগ।চলতে চলতে শিবমের চোখে পড়ল,একটা পাখির ছানা। বড় একটা গাছের গোড়ায় গুটিয়ে শুটিয়ে পড়ে আছে।
--দাঁড়া ,একটা পাখির ছানা,লকুকে বলে,পাখীর বাচ্চাকে হাতে তুলে নিল শিবম,জ্যান্ত আছে ওটা, শরীর ভিজে কুঁকড়ে গেছে। শালিকের বাচ্চা,গাছের দিকে তাকালো শিবম,দুটো শালিক বসে আছে মনে হোলো,ও দুটোরই বাচ্চা হবে মনে হলো।পাখি দুতো শিবমের দিকে তাকিয়ে কিচ কিচ করে উঠল,লক্ষ্য করে দেখল,গাছের পাঁচ সাত হাত উপরেই পাখীর বাসা,একটা খোঁদল মত আছে,তাতে খড়কুটোয় ভর্তি।
--লকু, আয় এদিকে,পাখীর বাচ্চা পেয়েছি!শিবম বলে ওঠে।

তাপস কিরণ রায় অর্থশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্কুলে শিক্ষকতা করেন বেশ কিছু বছর। পরে আয়কর বিভাগে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি মধ্য প্রদেশের জবলপুর শহরে বাস করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন। ছোটদের এবং বড়দের জন্য লেখা তাঁর অনেকগুলি বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।