খেলাঘরখেলাঘর

ভূত বন্ধু

‘তুমি শুধু শুধু ভাবছো – কথায় আছে না ‘ঘ্রানেনঃ অর্ধ ভোজনং’ – রান্নার গন্ধেই আমি খুশি। আজ তো ওই মহিলার রান্না মুড়ি ঘন্টের গন্ধেই যেন আমার পেটটা ভরে আছে। এখন রোজ ওই মহিলার রান্না নজর দিয়ে দেখবো তাহলে তোমাকে অনেক রকমের রান্না শেখাতে পারবো আর আমারও বেশ গন্ধ শোঁকা হবে।’

পরদিন বিকেলে বাড়ি ফিরতে ভূত বন্ধু পাড়ার আর এক বাড়ির গল্প শুরু করলো। আমি হেসে ফেললাম,
‘তুমি তো দেখছি বুড়ি পিসীমার মত পাড়া-বেড়ানি হয়ে গেলে – সবার হাঁড়ির খবর নিতে শুরু করেছো।’
ভূত বন্ধু মনে হলো একটু লজ্জাই পেয়েছে,
“যাঃ, তুমি যা ভাবছো তা মোটেই নয়। এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে যা নজরে পড়ে তাই তোমাকে বলি। ওই মহিলা না ভীষণ ছুঁচিবাই গ্রস্ত তার উপর আবার হাড় কেপ্পন – সারা দিনে তিন চারবার সমস্ত বাড়িটা ধোয়া পোঁছা করেন ফলে রান্না করার দায়িত্ব বেচারি কর্তার ওপর - শুধু পাতলা করে মুগের ডাল আর ভাত তার সাথে কাঁচা লঙ্কা – ছেলে মেয়ে দুজনের তো হেনস্তার শেষ নেই। এদিকে সারাদিন জল ঘেঁটে ঘেঁটে ভদ্রমহিলার হাতে পায়ে হাজা হয়ে গিয়েছে – সত্যিই সংসারে কত রকমের লোকই না হয়।’
বেশ চলছিলো আমাদের সংসার – ভূত বন্ধুর দৌলতে অনেক রকম ভালো ভালো রান্না শিখে গিয়েছি আর ওর সব থেকে বড় গুণ ছিলো গন্ধ শুঁকে বলে দিতো রান্নাতে কি গোলমাল হয়েছে। আমের দিনে প্রায় রোজই একটা দুটো ভালো ল্যাংড়া আম চলে আসতো বাগান থেকে। আমি বারণ করলে ভূত বন্ধু হাসতো,
‘আরে মিছি মিছি ঘাবড়াচ্ছো কেন। বাগানে হাজার হাজার আম থেকে একটা দুটো গেলে কে ধরতে পারবে? বাদুড়ে তো অনেক বেশী আম নষ্ট করে।’
কয়েকদিন ধরেই মনে হচ্ছিলো ভূত বন্ধু একটু আনমনা, সেদিন দেখি কথা বলতে বলতে হঠাৎই চুপ হয়ে কি যেন ভাবছে - সাধারণতঃ ও খুবই বাক্যবাগীশ তাই জিজ্ঞেস করলাম,
‘কী হলো? আজ মনে হচ্ছে তোমার গল্প করতে ভালো লাগছে না – কী ব্যাপার?’
‘না মানে – এই আর কি।’
একটু অভিমান দেখিয়েই বললাম,
‘ঠিক আছে, আমাকে বলতে না চাইলে বলো না।’
‘না না – তা নয়। কদিন ধরেই ভাবছি তোমাকে বলবো তবে ঠিক ভরসা পাচ্ছি না।’
‘তা বলতে এত দোনামনা কেন?’
‘না - - মানে - - একটু লজ্জাই করছে।’
‘সে কি? আমাকে বলতে লজ্জা করছে?’
তারপর ওর মুখের টুকরো ঘটনা থেকে জানতে পারলাম, সপ্তাহ খানেক আগে ওই আম বাগানে হঠাৎই এক পেত্নী মানে মেয়ে ভূতের সাথে ওর দেখা হয় – সে বেচারি অনেক জায়গা থেকে তাড়া খেয়ে ঘুরতে ঘুরতে এই আম বাগানে এসে হাজির হয়েছে। প্রথম দেখাতেই দুজনের দুজনকে পছন্দ হয়ে গিয়েছে। এখন আমার বন্ধুটি একেবারে হাবুডুবু খাচ্ছেন – ইচ্ছে দুজনে বিয়ে করে বরাবরের মত ওই আম বাগানে বাসা বাঁধে।
‘আরেঃ, এই কথা বলতে তোমার এত লজ্জা। এত খুবই ভালো কথা – তোমার যদি উপযুক্ত সঙ্গিনী জোটে তবে আমিই সব থেকে বেশী আনন্দিত হবো। তা একদিন নিয়ে এসো না আলাপ করাতে – অবশ্য দেখতে তো পাবো না তবে কথা বলতে আপত্তি কিসের।’
‘না - - মানে - - ও তো খুবই লাজুক। আজ অবশ্য এক রকম জোর করেই নিয়ে এসেছি – ঐ তো ঘরের কোনার মোড়াতে বসে আছে।’
আমি তো পেত্নীকে দেখতে পাচ্ছি না তাই মোড়ার দিকে হাত তুলে নমস্কার করে বললাম,
‘আমার এই বন্ধুর মত ভূত আপনি আর পাবেন না। প্রার্থনা করি আপনারা সুখে শান্তিতে সংসার করুন। আমি যতদিন এখানে আছি এই বাড়ির দরজা আপনাদের জন্য খোলা রইলো। মাঝে মাঝে নিশ্চয়ই দেখা হবে।’
খুব আস্তে একটু চাপা গলা ভেসে এলো,
‘আপনার কথা ওর কাছে অনেক শুনেছি। আপনাদের বন্ধুত্বের তুলনা হয় না – আমরা মাঝে মাঝে নিশ্চয়ই আসবো এখানে গল্প টল্প করতে।’
‘ঠিক আছে বন্ধু – এবার তাহলে বিদায়।’


 

অঞ্জন নাথ
ব্যাঙ্গালোর, কর্ণাটক