খেলাঘরখেলাঘর

মান্তুর জাদু ছক্কা
শেষ অবধি মানতুর স্বপ্ন পূরণের মুহূর্ত এলো। এই প্রথম সে প্লেনে চড়ছে। জানালার পাশের সিটে বসে সে বাইরের সমস্ত দৃশ্য দু’চোখ ভ’রে দেখতে লাগলো। প্লেন রানওয়ের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলার পর সাঁ করে আকাশে উঠে পড়লো। নীচের দ্রুত বিলীয়মান ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট দেখতে দেখতে হঠাৎ মানতুর বুকটা ধক করে উঠলো।
নীচের দৃশ্যাবলীর মধ্যে কোথাও এক আগুনের রেখা ফুটে উঠেছে। এত বড় সে আগুন যে এত উঁচু থেকেও মানতুর অনভিজ্ঞ চোখে তা ধরা পড়ে গেছে। আটকে পড়া অসহায় মানুষ, যাদের এখান থেকে প্রায় পিঁপড়ের মতো দেখাচ্ছে, তারা বৃথাই এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে মরছে। মানতুর যেন মনে হলো সেই মানুষের ভীড়ে কিছু নারী ও শিশুও আছে।
কয়েকটি অনিশ্চিত মুহূর্ত, তারপর মানতু তার কর্তব্য স্থির করে ফেললো। সে যাদু ছক্কাটিকে শক্ত করে হাতে ধরে ধীরে ধীরে উচ্চারণ করলো, “হে উপকারী বন্ধু, এবার সেই সময় এসেছে। নীচের অসহায় মানুষের দুর্দশা আমি আর দেখতে পারছি না। কিন্তু তাদের সাহায্য করার জন্য যে মেহনত দেবো, তার কোনো উপায়ই আমার এখন নেই। তাই আমি ঐ ভয়াবহ আগুন নেভানোর জন্য তোমার যাদুশক্তির সহায়তা প্রার্থনা করছি। এর ফল যে কী হবে, তা আমি ভালো করেই জানি।”
মানতু যখন এই কথা বলছিলো, সে খেয়াল করেনি কখন আকাশে বিরাট একখণ্ড কালো মেঘ জমা হয়েছে। তার কথা শেষ হতে না হতেই সেই মেঘ প্রবল বর্ষণের রূপ নিয়ে ঝ’রে পড়লো মাটির বুকে। দেখতে না দেখতে সেই ভয়াবহ আগুন শান্ত হলো, মানুষ পেলো স্বস্তি।
কিন্তু প্লেনটা সেই মুহূর্তে ঝোড়ো বাতাসের পাল্লায় পড়ে এক বিরাট ঝাঁকুনি খেলো। ভেতরের সবকিছু যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য বেসামাল। তারপর যখন আবার সব ঠিক হয়ে গিয়েছে, মানতু দেখলো যাদু ছক্কাটি তার হাত থেকে ছিটকে পড়ে কোথায় চলে গেছে। মানতু বুঝতে পারলো, সেটা চিরদিনের মতোই হারিয়ে গেছে!
“তবে তার জন্যে দুঃখ নেই।” সে নিজের মনে বলে, “হে অদেখা বন্ধু, সঙ্কটের মুহূর্তে আমাকে মদত দেওয়ার ও শক্তি জোগাবার জন্যে তোমাদের অজস্র ধন্যবাদ। তোমাদের সহায়তা আর পাবো না। কিন্তু এতদিনে আমি নিজের মেহনতে ও হিম্মতে পৃথিবীর বুকে উঠে দাঁড়াবার মতো শক্তি অর্জন করেছি।”

 

 

অনিরুদ্ধ সেন
থানে, মহারাষ্ট্র

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনীয়ার ও মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অনিরুদ্ধ সেন কলকাতা-মুম্বইয়ের বিভিন্ন সাময়িকপত্র ও ওয়েব ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখক। তাঁর লেখা ও অনুবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, এবং সংকলিত বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে।