খেলাঘরখেলাঘর

রামায়ণ

নন্দীনগর পাড়ায় এক নাট্য প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়েছে। এ পাড়ার ছেলেরা যে নাটকটি মঞ্চস্থ করতে চলেছে তার নাম " কলিযুগের রামায়্ণ " ,বর্তমান সমাজের চিত্রপটে আঁকা এক অনবদ্য কাহিনী। এতে রাবণ সীতাকে হরণের পর রামের কাছে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দাবী করে মুক্তি পণের জন্য । দরিদ্র বনবাসী রাম চিন্তায় পাথর, ভাই ভরতকে টাকাটা জোগাড় করতে বলায় সে রামকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে রাজকোষে অত টাকা নেই, মন্দার বাজার, প্রজারা সময় মতো খাজনাও দেয় না । বনের ফল মূল খেয়ে কোনোমতে তারা দিন কাটায় এ হেন অবস্থায় পঞ্চাশ লক্ষ !! হনুমান এক যুক্তি দেয়, গন্ধমদন পর্বতের গায়ে নাকি একরকম গাছ পাওয়া যায় যার পাতার রস ছিটিয়ে দিলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়, রাবণপুত্র ইন্দ্রজিতকে যদি ঐভাবে অজ্ঞান করে নিয়ে আসা যায় তাহলে মুক্তিপণ হিসাবে সীতা ও আরও পঞ্চাশ লক্ষ টাকা চাইলে দারিদ্রও ঘোচে আর সীতাকেও ফিরে পাওয়া যায় । এইরকম এক পালার জন্য ভীড় হবারই কথা । এ পাড়া, ও পাড়া, সব পাড়ার লোক মিলে সে যেনো এক জনসমুদ্র। রাবণের ভূমিকায় পাড়ার নাম করা বদরাগী বিশ্বনাথ কুন্ডু, হনুমানের ভূমিকায় পাড়ার কুস্তি চ্যাম্পিয়ন বীরেশ্বর মোদক আর রামের ভূমিকায় পাড়ার শুটকো অচিন সামন্ত , যাকে এক চড় মারলে আর এক চড় মারার আর জায়গা থাকে না। পালা শুরু হল। বেশ ভালোই চলছিল সব কিছু , কিন্তু হনুমান এক কাণ্ড করে বসল । রাবণ ও ইন্দ্রজিত একটা ঘরে ঘুমোচ্ছে , স্টেজের আলো নেভানো, হনুমান ইন্দ্রজিতের জায়গায় রাবণকে তুলে নিয়ে এলো রাম ও লক্ষণের কাছে। বিশ্বনাথ কুন্ডুর তখন রাগে সর্বশরীর জ্বলছে । সে নাটক ফাটক সব ভুলে এক বিরাশি শিক্কার চড় মারতে গেল হনুমানকে, আর সেই চড় পিছলে এসে পড়ল রামের গালে। শুটকো অচিন সামন্ত ওখানেই ধরাশায়ী, অজ্ঞান, কলিযুগের রামায়ণের ওখানেই যবনিকা পতন। এরপর শুটকো অচিনকে নিয়ে হাসপাতাল... প্রায় যমে মানুষে টানাটানি, তবে যমরাজ কোনো ঝামেলা করেন নি, সুস্থ হয়ে অচিন পরদিনই বাড়ি ফিরে এসেছিল| নাট্য প্রতিযোগীতার ফলাফল? সেটা নিশ্চয়ই আর তোমাদের বলে দিতে হবে না!

নীনা ঘোষ দস্তিদার
খড়্গপুর