'বুঝলি পিন্টু, মিশর সভ্যতা আর হল না।' 'হুমম' ও কিছু বলল না। আমরা দুজন ফুটবল খেলার শেষে মাঠের এক কোনে বসে আছি। খেলার শেষে রোজই থাকি কিছুক্ষন। তবে খেলা যদি জমে যায় বা দু-চারটে গোল হয়, তাহলে অন্যরাও থাকে। আজকে খেলা জমেনি। এমনিতেই ফুটবলটা আমার চেয়ে ও খেলে ভাল। তার ওপর আজকে আমি খেলেছি খুবই বাজে, একটা গোল তো আমার জন্যই খেয়েছি। ও খেলার জন্য চুপ করে রয়েছে না মিশর সভ্যতার জন্য সেটা ঠিক বুঝলাম না। 'আমি সেদিন বাড়িতে অত চেষ্টা করলাম, হলই না'। এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোন রহস্য আছে।'' ও আমার দিকে ফিরে বলল, 'তবে আমরা ইট দিয়ে চেষ্টা করতে পারি' 'ইট না হয় কয়েকটা জোগাড় করে নেব। কিন্তু গাঁথব কি দিয়ে? সিমেন্ট তো আর আমরা পাবনা, আর কেউ দেবেও না। '' 'হুমম', এই বলে ও গম্ভীরভাবে ঘাড় নাড়ল। ''তার মানে এই খেলাটা আর তেমন জমবে না। অন্য কিছু ভাবতে হবে।' 'আচ্ছা, আমরা আবিষ্কারক হলে কেমন হয়? আমি কয়েকদিন ধরে প্রোফেসর শঙ্কুর গল্পের বই পড়ছি। তাই থেকে এই আইডিয়াটা পেয়েছি, বুঝলি উনি না অনেক কিছু আবিষ্কার করেন, সারা পৃথিবী জোড়া নামডাক-' 'আমি তেমন পড়িনি, তা কি কি আবিষ্কার করেন বল দেখি?' পিন্টু চিরকালই গল্পের বই পড়ে কম। এ ব্যাপারে ওর মাস্টার হচ্ছি আমি। বেশ উৎসাহ নিয়ে বলতে শুরু করলাম। কারন ইতিমধ্যে আমি মনে মনে প্রোফেসর শঙ্কুর বিরাট বড় ভক্ত হয়ে উঠেছি। 'ও বাবা, সে অনেক কিছু। রোবট তৈরী করেন। অদৃশ্য হওয়ার ওষুধ, বন্দুক পিস্তল, মহাকাশযান কত কি।'' 'বাহ ভাল তো, কিন্তু আমরা কি আবিষ্কার করব?' 'করব, কিন্তু তার আগে আমাদের একটা ল্যাবরেটরি গড়ে তুলতে হবে। বড় বড় বিজ্ঞানীরা সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে। আমাদের ও সবকিছু নিজেদেরই জোগাড় করে নিতে হবে।' 'ঠিক আছে, কিন্তু কিভাবে শুরু করব ঠিক বুঝতে পারছি না।' 'আরে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা আগে একটা লিস্ট করে নেব কি কি লাগবে আর কি কি আমাদের আছে। তারপরে একটা নোটবই করতে হবে, আর সবকিছু লিখে রাখতে হবে। প্রোফেসর শঙ্কুও সব লিখে রাখেন।' সন্ধ্যে হয়ে আসছিল। আমরা উঠে পড়লাম। নতুন কোন উদ্যোগ নিলে ফূর্তির আর সীমা থাকে না। আজকেও আমরা বেশ লাফাতে লাফাতেই বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ল্যাবরেটরির ফর্দটা করে নিতে হবে। আর কোথায় ল্যাবরেটরি হবে সেটাও ঠিক করে নিতে হবে।