খেলাঘরখেলাঘর

 

ইলিশ

 

সবাই শুয়ে পড়লেও বুম্বার আর ঘুম আসে না – অনেক ক্ষণ এদিক ওদিক করে চুপি চুপি দরজা খুলে এসে ছাতের সিঁড়িতে বসলো। এখন একটা মাত্র পেট্রোমাক্স জ্বলছে তাও আলোটা খুব কমানো ফলে বাইরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার – নদীর দুই পাড়ে জোনাকি পোকারা জ্বলছ নিভছে। মাঝে মাঝে অন্য কোন জন্তু জানোয়ার বোধ হয় নদীতে জল খেতে আসছে – ওদের চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠছে। মাঝিরাও ঘুমিয়ে পড়েছে। বুম্বার কিন্তু একেবারেই ভয় করছে না – আপন মনে অন্ধকারের ভেতর দিয়ে আরো কিছু দেখা যায় কিনা তার চেষ্টাই করে চললো। হঠাৎ মনে হলো ডান দিকে নদীর ধারে দুটো বড় বড় চোখ জ্বল জ্বল করেই আবার হারিয়ে গেলো – একটু পরেই আবার ফিরে এলো। বুম্বা শক্ত হয়ে বসে ওই দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে – এখন আর অন্ধকারে দেখতে অসুবিধে হচ্ছে না। কিছু সময় নদীর ধারে নানা জায়গায় ওই চোখ জোড়া দেখা গেলো যেন কোন জন্তু নদীর ধারে পায়চারি করছে। একটু পরেই ছপ ছপ শব্দ করে কেউ যেন জলে নামলো তারপরই ওই জ্বলজ্বলে চোখ দুটো জলে ভেসে ভেসে এগিয়ে এলো। বুম্বার মনে ঝড়ের বেগে অনেক গুলো চিন্তা এসে গিয়েছে – ওই চোখ দুটো তো মহারাজ ছাড়া আর কারো হতেই পারে না – ওটা কি নৌকার দিকেই আসছে? ও কি করবে? মাঝিদের ডাকবে? তারপর ভাবলো দেখাই যাক না মহারাজ কি করেন – হয়তো বা সাঁতরে ওপাশের গ্রামের দিকে চলেছেন গরু ছাগলের খোঁজে – তাছাড়া কাদের মিঞা বলেছে ওদের নৌকা অনেক উঁচু। আস্তে করে সিঁড়ি থেকে নেমে বুম্বা নৌকার গলুইএর দিকে এগিয়ে গেলো – ওখানে বসির ভাই ঘুমাচ্ছে। দেখে ধীরে ধীরে ওই ভাটার মত জ্বলজ্বলে চোখ দুটোর সাথে মস্ত বড় মাথা গলুইএর কাছে এসে গিয়েছে – কিন্ত ওখানটা তো জল থেকে প্রায় পাঁচ ফুট ওপরে – তাহলে? গলুইএর পাশে রাখা বৈঠাটাকে দু হাতে শক্ত করে ধরে বুম্বা রেডি হয়ে বসলো – হঠাৎ বাঘটা অদ্ভুত কায়দায় জল থেকে লাফিয়ে উঠে নৌকার ধারটা ধরে ফেলেছে আর ওর ওজনে নৌকা সামনের দিকে আরো নিচু হয়ে গিয়েছে – বুম্বার থেকে মাত্র ফুট পাঁচেক দূরে। এই বড় মাথা, থাবার নখ গুলো ইঞ্চি তিনেক করে বেরিয়ে এসেছে – ভাটার মত চোখ দুটো একবার বুম্বাকে দেখছে আর একবার ঘুমন্ত বসির ভাইকে। বুম্বা প্রাণের ভয়ে ‘বসির ভাই - বাঘ’ বলে প্রচন্ড চিৎকার করে গায়ের সমস্ত জোরে বৈঠাটাকে তুলে বাঘটার নাকের ওপর মারলো - -
-     -  -  -  -  -  -  -  -  -  -  -  -  -  -  -  -  -  -  -  -  -  -  -  -
‘এ্যাই বুম্বা, ভোর সন্ধ্যে বেলা ঘুমের মধ্যে এমন গাঁক গাঁক করে চেঁচাচ্ছিস কেন।’
বলে বিথী দৌড়ে এসেছে – পেছন পেছন লতিও হাজির। বুম্বা উঠে বসেছে – সমস্ত গা ঘামে ভেজা। লতিই বললো,
‘ঠিক উলটো পালটা স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছে। হবে না? ভর পেট খিচুড়ির সাথে ওতো গুলো ইলিশ মাছ ভাজা খেয়ে দুপুরে ঘুমিয়েছে – পেট গরম তো হবেই।’

 

 

 

অঞ্জন নাথ
ব্যাঙ্গালোর, কর্নাটক