খেলাঘরখেলাঘর

কুলতলির ময়নামাসি

কুলতলির ময়নামাসি সেদিন উড়ে এল পলাশপুরে। পলাশপুরে গিয়ে পৌঁছোল শালিকদিদির কাছে।
-কী ব্যাপার ময়নামাসি হঠাৎ এলে যে হেথা?- শালিকদিদি বলল।
-কাজে এসেছি বোন, ভীষণ জরুরি কাজ। ছেলেটাতো বড়ো হয়েছে, ইয়ে পাশ করেছে একটা, বে থা তো দিতে হবে।
- ও এ তো খুবই ভালো খবর। তা মেয়ে ঠিক করে দিতে হবে, এই তো?- শালিকদিদি বলল।
ময়নামাসি বলল, তা যা বলেছিস্‌;
-তা তোমার ছেলের কী কী শখ আছে মাসি?
-সে গাইতে জানে, সে নাইতে জানে, সে ধুলোবালি মাখতে জানে। গোরুর পিঠে চড়তে জানে, মানুষ -খোকাদের ঠোকরাতে জানে।
-বাব্বা তবে তো দেখছি ছেলে অনেক কিছু শিখেছে- শালিকদিদি বলল।
-কার ছেলে তা তো দেখতে হবে।- বেশ গর্বের সঙ্গে বলল ময়নামাসি।তারপরই বলল, তা শুধু কথাই বলবি, না কিছু খেতে দিবি?
-কী খাবে বলো।-শালিকদিদি বলল।
-কী রেখেছিস শুনি?
-কেঁচো আছে, বাদামের খোসা আছে, আখের ছোবড়া আছে জ্যান্ত পোকামাকড়ও আছে।
ময়নামাসি বলল, কুলতমিতে আজকাল আমাদের অনেক প্রতিষ্ঠা হয়েছে বুঝলি, আমরা একটু আধটু বড়োলোকও হয়েছি, কাজেই ফলের বিচিই দে, সেটা খাওয়াই ঠিক হবে। পোকামাকড় গরিবেরা খাক, কি বলিস?
শালিকদিদি বলল, তা যা বলেছ। বলেই তিনটি খেজুর-বিচি খেতে দিল ময়নামাসিকে।
চেটেপুটে তাই খেল ময়নামাসি। তার পর বলল, চল্‌ এবারে, মেয়ে দেখতে যেতে হবে।
শালিকদিদি ময়নামাসিকে নিয়ে উড়ে চলল কুসুমপাড়ায়। কুসুমপাড়ায় থাকে শালিকদিদির বন্ধু কুসুমদিদি। তাকে সবাই বলে কুসুমপাড়ার ময়নাদিদি।
কুসুমপাড়ার ময়নাদিদি পলাশপুরের শালিকদিদিকে দেখে তো খুব খুশি।
পলাশপুরের শালিকদিদি বলল, তোর তো একটা মেয়ে আছে?
-হ্যাঁ তা তো আছে।
-ওর জন্য বিয়ের খবর নিয়ে এসেছি।-পলাশপুরের শালিক বলল।
-এ তো খুবই ভালো খবর।- কুসুমপাড়ার ময়নাদিদি বলল।
-এরই জন্য তো ময়নামাসি এসেছে। কুলতুলির ময়নামাসি। বড়ো উচ্চ ঘর ওদের, সাত পুরুষ ধরে ওরা ওখানে আছে, নিজস্ব ঘরবাড়ি। খেত-খামার চারদিকে রয়েছে, খাবারদাবাদের কোন অভাব নেই। ওরই ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চায়।
-বাঃ এ তো খুবই ভালো খবর। তা কিছু মিষ্টিমুখ তো আগে করতে হবে। বলল কুসুমপাড়ার ময়নাদিদি।
-না না তার দরকার নেই। পলাশপুরেই খেয়ে এসেছি- বলল ময়নামাসি।
-তা কি হয়? দুটো আখের ছিবড়ে দিচ্ছি , একটু চেখে দেখুন, একেবারে টাটকা। আজই আমার মেয়ে অনেক কষ্টে বাগান থেকে নিয়ে এসেছে।
তা শেষ পর্যন্ত আখের ছিবড়ে খেতেই হল ময়নামাসি ও পলাশপুরের শালিকদিদিকে।