খেলাঘরখেলাঘর

 ভবিষ্যতের পৃথিবী

বছর ছয়েকের স্যাংপো মা বাবার হাত ধরে লাফাতে লাফাতে চলেছে পার্কে বেড়াতে। আজ রবিবার - মা বাবার ছুটি আর এই দিনটা স্যাংপোর সব থেকে আনন্দের – মা কত কিছু রান্না করে ওর জন্য আর বাবা কত গল্প শোনায় তারপর বিকেলে ওরা তিন জন হাত ধরে বেড়াতে আসে পার্কে। সপ্তাহের বাকি ছয়দিন তো মা বাবার অফিস থাকে বলে একেবারেই সময় পায় না আর স্যাংপোকেও ভোর বেলা উঠে স্কুলের জন্য তৈরি হতে হয় ফলে ওদের দেখা হয় সেই রাত্রে বেলা আর তখন স্যাংপো ঘুমে ঢুলছে – মা খাইয়ে দিতে না দিতেই মার কোলে ঘুমিয়ে পড়ে। রোজ বিকেলেই স্কুলের দিদিমণি ওদের নিয়ে আসেন এই পার্কে খেলার জন্য তবে স্যাংপোর মনে হয় মা বাবার সাথে এলে পার্কটা যেন আরও বেশী ভালো লাগে। পার্কে এসে ওরা নরম ঘাসের কার্পেটেই বসে পড়লো তবে স্যাংপো ঘাসের মধ্যে বার কয়েক গড়াগড়ি দিয়ে মার কোলে মাথা দিয়ে আর বাবার কোলে পা দুটো তুলে দিয়ে আরাম করে শুলো। ‘জানো বাবা, আজ না আমাদের দিদিমণি বলেছিলো চার পাঁচশো বছর আগে মানুষ এই ডোম পৃথিবীতে থাকতো না – ওরা একটা মস্ত বড় পৃথিবীর মাটিতে ঘুরে বেড়াতো – সেটা নাকি লম্বা চওড়াতে হাজার হাজার কিলোমিটার। সেখানে অনেক গাছ পালা, বড় বড় নদী, পাহাড়, জঙ্গল ছিলো। সেই পৃথিবীর ত্রি-মাত্রিক সিনেমাও দেখিয়েছে - কত বিরাট সব বাড়ি – এক একটা মনে হলো আমাদের ডোম থেকেও উঁচু, আর এক একটা পার্ক তো আমাদের এই ডোম থেকেও বড়। খুব সুন্দর ছিলো দেখতে – আমাদের এই ডোমটা কত্তো ছোট আর বাড়ি গুলোও ভীষণ ছোট ছোট। আমরা সেই পৃথিবীতে যেতে পারি না?’ কিঞ্জল হাসলেন, ‘ওই পৃথিবীটা তো হারিয়ে গিয়েছে স্যাংপো – ডুবে গিয়েছিলো সমুদ্রের জলের তলায় – তাই তো আমরা এই ডোম বানিয়ে সমুদ্রের নিচেই থাকি। দাঁড়া, তোকে সেই বিরাট প্লাবন আর বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা গুলো বলি। জানিস তো আমাদের এই ডোম শহরের মত আরো অনেক ডোম শহর আছে জলের নিচে – এই শহর গুলোর সব নম্বর দেওয়া আছে। বল তো আমাদের এই ডোম শহরের নম্বর কত?’ শহরের নম্বর, নিজেদের নম্বর, এই রকম আরো অনেক দরকারি খবর এদের মুখে বোল ফোঁটার সাথে সাথেই একেবারে ঠোঁটের ডগায় – কারণ জন্মের আগেই যে ছোট্ট কম্পিউটার সবার মাথাতে বসিয়ে দেওয়া হয় তাতে এই রকম অনেক দরকারি খবর দেওয়া থাকে ফলে সেগুলো আপনা থেকেই মনে চলে আসে।