স্যাংপো ও কিঞ্জল যখন নিজেদের মধ্যে গল্পে ব্যস্ত তখন শিমরান ভাবছিলেন আজ সকালে আসা মেইলের কথা। বড় কম্পিউটার জানিয়ে দিয়েছে এই ডোম পৃথিবী থেকে ওদের বিদায়ের দিন অবশ্য সেটা আরো পনের বছর পর যখন স্যাংপো নিজের পড়াশুনা শেষ করে কাজ শুরু করবে। জন সংখ্যা ঠিক রাখার জন্য একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর সবাইকেই এই ডোম পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয় আর এই বয়স সীমা বড় কম্পিউটার ঠিক করে ঐ ব্যক্তির এই ডোমে প্রয়োজনীয়তার কথা হিসেব করেই। বেশীর ভাগ সময়ই স্বামী স্ত্রী একই সাথে বিদায় নেন – কিঞ্জলরাও তাই ঠিক করেছেন। সেই বিদায়ের দিনকে উৎসবের মতই পালন করা হয় শহরের কম্যুউনিটি সেন্টারে – সেখানে বিদায়ী লোকের পছন্দের খাবার, গান বাজনার ব্যবস্থা থাকে এবং এটা শহর কর্তৃপক্ষই করেন। দেখতে দেখতে পনের বছর কেটে গিয়েছে – স্যাংপো পড়াশুনা শেষ করে নিজের কাজে যোগ দেবার জন্য তৈরি আর কিঞ্জল ও শিমরনের এই ডোম পৃথিবী থেকে বিদায়ের দিনও এসে গেলো। সেদিন সকালে শিমরন সমস্ত বাড়ি পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখলেন এর পর যারা এখানে থাকবে তাদের সুবিধের জন্য – অবশ্য স্যাংপো ঠিক করেছে মা বাবার স্মৃতির এই বাড়িতে নিজেই চলে আসবে। আজ কিঞ্জল ও শিমরনের জন্য দেওয়া হয়েছে ফুল দিয়ে সাজানো বিশেষ গাড়ি - সেই বিশেষ গাড়িতে কম্যুনিটি হলে আসতে ওদের পছন্দের গান বেজে উঠলো – আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবরা ওদের বরণ করে নিয়ে এলো ফুল দিয়ে সাজানো মঞ্চের উপর - হৈ হৈ করে গল্প ও খাওয়া দাওয়ার মধ্যে দিন ফুরিয়ে সন্ধ্যে ঘনিয়ে এলো সেটা ওরা জানতে পারলেন যখন বেজে উঠলো ওদের বিদায়ের গান – দরজায় এসে দাঁড়ালো শেষ বিদায়ের গাড়ি। সবার সাথে আলিঙ্গন করে স্যাংপোকে আদরের চুমু দিয়ে শিমরন ও কিঞ্জল উঠে এলেন সেই গাড়িতে – সবার দিকে হাত নাড়তে নাড়তে বন্ধ হয়ে গেলো গাড়ির দরজা – শেষ হয়ে গেলো এই ডোম পৃথিবীর সাথে সব সম্পর্ক – রওয়ানা হলেন ওদের শেষ যাত্রায়। গাড়ির ভেতরে মৃদু আলো - সেতারে বাজছে বেহাগ – এক ধারে পাতা ধব ধবে সুন্দর বিছানা – তার পাশে সোফা সেট আর টেবিলে সাজানো ওদের পছন্দের নানা ফল, খাবার ও পানীয়। সোফায় বসে সেই প্রিয় পানীয়ে ধীরে ধীরে চুমুক দিতে দিতে শুরু হলো ওদের ছেলে বেলার গল্প, কত মিষ্টি ঘটনা, স্যাংপোর জন্ম, ওর ছোটবেলার দুরন্তপনা, এ রকম ওদের জীবনের আরো কত ঘটনার গল্প। চোখের পাতা ঘুমে ভারি হয়ে এলে চলে এলেন সেই নরম তুল তুলে বিছানায় – সেখানে কিঞ্জল ও শিমরন ঘুমিয়ে পড়লেন চিরকালের মত। ধীরে ধীরে বিছানা নিচু হয়ে ওদের নামিয়ে দিলো একটা ট্রলিতে যেটা ওদের নিয়ে এলো এক বিরাট রকেটের অনেক ছোট ছোট কুঠরির মধ্যে একটাতে। রকেটের সমস্ত কুঠরি ভরে গেলে সেটা বিদায়ী শহরবাসীদের নিয়ে উড়ে যাবে সূর্যের দিকে।
অঞ্জন নাথ
ব্যাঙ্গালোর, কর্ণাটক