খেলাঘরখেলাঘর





সকাল হতে না হতেই টুবলু এসে হাজির। উত্তেজনার চোটে ও ও নাকি কালকে এক্কেবারে পড়ায় মন বসাতে পারেনি। অঙ্কস্যার এসেছিলেন পড়াতে। তার কাছে দুটো বোকার মত ভুল করে মারও খেয়েছে। যা বুঝলাম তাতে ঘুমও বড় একটা হয়নি।
“প্রোফেসর শঙ্কু? তুই ঠিক শুনেছিস?”
“এক্কেবারে। কে বলতো তিনি?”
“আমার মনে হচ্ছে আমি একটা বইয়ে পড়েছি”
“কি পড়েছিস?”
“উনি মনে হয় একজন বৈজ্ঞানিক।”
“আমারও তাই মনে হয়। কোথাও যেন নামটা শুনেছি”
“কিন্তু তাই বলে ও জানলো কি করে যে তুই পড়তে না বসে ফাঁকি মেরেছিস”
“আরে সেটা আমি কি করে বলব, ওকে জিজ্ঞেস করলে হত না?”

আমাদের আলোচনা হচ্ছিল বাগানের এক কোনে। খানিক বাদে বিন্তিকেও সেদিকে আসতে দেখা গেল। আমি একটু গলাটা পরিষ্কার করে বললাম, “আচ্ছা, কালকে তুই কি করে জানলি যে আমি পড়ায় ফাঁকি দিচ্ছিলাম?”
বিন্তি অম্লান বদনে বলল, “আমাকে ভূতটা এসে খবর দিয়ে গেল যে”
টুবলু বলল, “কি খবর দিল?”
“এই যে তুই অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের কাছে মার খেলি বা পিন্টু পড়তে বসেছে বটে কিন্তু আদপে পড়ছে না”
“বটে, তা ভূতে আজকাল এইসব খবর দিয়ে বেড়াচ্ছে বুঝি? তাদের আর কোন কাজ নেই?”
“কাজ থাকবে না কেন? তবে ভালো করে ডেকে বললে তারা এইসব করে দিয়ে যায়”
“বেশ তো তা আমাদের একবার চশমাটা দেখা না বাপু। তাহলেই তো সব গোল মিটে যায়”
“উঁহু, সে হওয়ার নয়। চশমাটা আমাকে গিয়েই প্রোফেসর শঙ্কুর কাছে ফেরত দিতে হবে। উনি আমাকে বিশ্বাস করে জিনিসটা দিয়েছেন বটে। তার মানে এই নয় যে আমি সব্বাইকে দেখিয়ে বেড়াব। যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি ওনাকে কি বলব?”
আমরা দুজনেই ঘাবড়ে গিয়ে বললাম, “প্রোফেসর শঙ্কুকে তুই চিনিস নাকি?”
“কেন চিনব না? সারা পৃথিবীর লোক ওনাকে চেনে। উনি এত বড় বৈজ্ঞানিক। আবিষ্কারক। কত দেশ বিদেশের লোক তো ভারতে আসেই কেবল ওনার সাথে দেখা করার জন্য”
আমি বললাম, “তা তোর সঙ্গে কোথায় দেখা হল?”
“কোথায় আবার, গিরিডিতে। উনি তো ওখানেই থাকেন। লোকজনের সঙ্গে বেশী মিশতে চান না। নিরিবিলি পছন্দ করেন। সেবার আমরা যখন গেলাম সেদিন উশ্রী নদীর ধারে মর্নিং ওয়াক করার সময় দেখা হয়ে গেল। আলাপ হওয়ার পর উনি এই যন্ত্রটা আমাকে কদিনে জন্য দিলেন।”
এরপর কিছু কথা বলা চলেনা। বিন্তির সঙ্গে আমাদের সন্ধি হয়ে গেল। আমরা দেখলাম আমরাও ওর কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পারছি। এইসব বলে বন্ধু মহলে তাক লাগিয়ে দেওয়ার অনেক সুযোগ আছে। তাছাড়া বিন্তি বলে গেল ওর কাছে নাকি প্রোফেসর শঙ্কু একটা ফর্মুলা দিয়েছেন - সেটা দিয়ে অদৃশ্য হওয়ার ওষুধ তৈরী করা যায়। কয়েকটা কেমিকাল লাগে, তবে ও আমাদের বলে যাবে। তারপর সেটা তৈরী করে নিতে হবে। কয়েকটা দিন হইহই করে কাটল। আর সত্যিই বিন্তি কাগজে করে আমাদের ফর্মুলাটা লিখে দিয়ে গেল।