খেলাঘরখেলাঘর




আমরা দুজনে খেলার মাঠে পিঠে পিঠ টেকিয়ে বসেছিলাম। আজকে মাঠে এসেও খেলিনি।

একটু আগেই বাবাইদাদার কাছে গিয়েছিলাম ফর্মুলাটা নিয়ে। বাবাইদা ডাক্তারি পড়ছে কলকাতায় গিয়ে। আমরা ভাবছিলাম যদি দু একটা করে কেমিকালগুলো এনে দিতে পারে, কিংবা অন্ততঃ যদি উপায়টা বাতলে দিতে পারে। বাবাইদা কাগজটা দেখে আমাদের মুখের দিকে খানিকক্ষন তাকিয়ে তারপর হো হো করে হেসে উঠল। সে হাসি আর থামতেই চায় না। তারপর বললে , “বাবুইয়ের ডিমের সঙ্গে এক্সট্র্যাক্ট অফ গরগনাস? হো হো হো!”
আমরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি দেখে বাবাইদা খুলে বললো, “ওরে গাধা, প্রোফেসর শঙ্কুর বই থেকে টুকে এনেছিস এইসব? উনি কি আর সত্যি বিজ্ঞানী? উনি তো গপ্পের বিজ্ঞানী রে।”
আমি বললাম, “আমার পিসতুতো বোন যে ওনার সঙ্গে দেখা করে এই ফর্মুলা পেয়েছে বলল?”
“ওরে গাধা কি আর সাধে বলি? তোদের স্রেফ বোকা বানিয়েছে একটা পুঁচকে মেয়ে।”

সেই থেকে আমরা দুজনেই বেশ মুষড়ে পড়েছি। টুবলু অনেকক্ষন চুপ করে বসেছিল। এবার হঠাৎ তুড়ি মেরে লাফিয়ে উঠে বললে, “এইবারে বুঝেছি!”
আমি চমকে বললাম, “কি বুঝেছিস রে?”
“আরে সেদিন চমকে গিয়ে আমরা এক রকম ধরেই নিয়েছিলাম যে বিন্তি ভূতের কাছ থেকে জানতে পেরেছে আমরা সেদিন কি করছিলাম। এখন বুঝতে পেরেছি আসলে কি হয়েছে। মনে আছে তুই আমাকে বলেছিলি যে সেদিন কি যেন একটা জানলার সামনে দিয়ে চলে গেল?”
“হ্যাঁ, কিছু একটা হবে, কেন?”
“আরে ওটা বিন্তিই ছিল, নইলে আর জানলো কি করে যে তুই কত পাতায় কি পড়ছিলিস?”
এতক্ষনে ব্যাপারটা মাথায় ঢুকল। তার মানে আগাগোড়াই আমাদের বোকা বানিয়েছে। কিন্তু তাহলে টুবলুর ব্যাপারটা ও জানল কি করে? টুবলুকে জিজ্ঞেস করতে বলল, “আরে ওটা স্রেফ আন্দাজে ঢিল। সেদিন বিকেলেই বলতে বলতে আসছিলাম না আজকে আবার অঙ্ক স্যার আসবেন? আর ও নিশ্চয় সেটা শুনে নিয়েছিল। এমন একটা গল্প আমাদের শোনালো যে জানতোই পড়ায় আমাদের মন বসবে না। তাহলে এটা আন্দাজ করা আর কি এমন মুশকিল যে স্যারের হাতে ধোলাই খেয়েছি। আর তারপর এক ফাঁকে এসে জানালা দিয়ে দেখে গেল তুই কি পড়ছিস।”
আমিও ব্যাপারটা বুঝে ঘাড় নাড়লাম।

চশমাটাও তিনতলার ঘরে পাওয়া গেছে। সেটা নেহাতই একটা পুরনো চশমা। ভূত টুত দূরে থাক, এমনিই কিছু দেখা যায় না। যাইহোক, প্রথমে ভেবেছিলাম একটা কড়া চিঠি লিখে এক হাত নেবো। কিন্তু শেষমেষ টুবলুই বুদ্ধিটা দিল। বলল, “আমরা যে এক্কেবারে বেকুব বনেছি সেটা আবার লিখে বসিস না যেন। বরং এইরকম লেখ যে তোর কাছ থেকে ফর্মুলাটা পেয়ে দারুন লাভ হয়েছে, আমরা অদৃশ্য হয়ে এখানে দারুন মজা করে বেড়াচ্ছি।” সেই মতই চিঠিটা লিখতে শুরু করেছি। যে কোন দিন পোস্ট করে দিলেই হল।


অভ্র পাল
কলকাতা