খেলাঘরখেলাঘর


চক্র ক্লাশ থ্রীতে পড়ে।একটা প্রইভেট ইংরেজী স্কুলে।রোজ ভোরে গাড়ি আসে তাকে স্কুলে নিয়ে যেতে।স্কুলের ইউনিফর্ম পরে বইয়ের ব্যাগ ও জলের বোতল নিয়ে তৈরী থাকে।স্কুলের গাড়ি এসে হর্ন দিলো কি ঘর থেকে বেরিয়ে আসে ও।তড়িঘড়ি করে মা,বাবাকে,টা,টা,করে বাসে চেপে বসে।
সে দিন ও তাই হলো।নিয়ম মত স্কুলে পৌঁছালো।স্কুলের টিফিনে টিফিন বক্স খোলে চক্র।মা তার জন্যে অনেক খাবার দিয়েছেন।তিনটে রুটি,দু রকমের তরকারি,দু রকমের মিষ্টি,আর টিফিন বক্সের ভেতরের ছোট্ট বক্সে ভরা আছে ঘরের তৈরী মিষ্টান্ন!ও ভাবে কি যে করে না মা!এত কিছু সে কি খেতে পারে!এত খাবার দেখে  লচ্ছুর কথা ওর মনে পড়ে যায়।ও যদি থাকত তো খাবার গুলো আর নষ্ট হতো না।
তাড়াতাড়িতে সে দিন বিজন টিফিন বক্স আনতে ভুলে গেছে।টিফিনের সময় পর্যন্ত তার ঘর থেকে কেউ টিফিন বক্স পৌঁছালো না।চক্র বলল,আয় আমরা একসঙ্গে বসে টিফিন খেয়ে নিই।আমার কাছে অনেক খাবার আছে।
বিজন এক দু বার আপত্তি করে শেষে এক সঙ্গে বসে ওরা ভাগাভাগি করে টিফিন খেয়ে নিল।একটু পরেই বিজনের টিফিন নিয়ে ঘরের লোক পৌঁছালো।কি হবে সে টিফিন বক্স!তেমনি ভরা পড়ে রইল।
সে দিন অনিবার্য কোন কারণে স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হোয়ে গেলো।চক্রর পেট ভালো ছিলো না।দু তিন বার মেমকে বলে টয়লেটে গিয়েছে।পেটটা আবার কেমন যেন মোচড়াচ্ছিলো।শরীর কেমন দুর্বল লাগছিল।ছুটির ঘন্টা পড়ার  পর ক্লাশ ছেড়ে সবাই বেরিয়ে গেলো।যাবার আগে দু চারজন ওকে ডেকে গেলো।কিন্তু পেটের ব্যথায় কাতর চক্র বইয়ের ব্যাগ আর জলের বোতল নিয়ে টয়লেট পরিসরের ভিতরে ঢুকল।হাতের বোতল,ব্যাগ বাইরে রেখে টয়লেটের ভিতরে ঢুকে গেলো সে।ডিসেনট্রির মত হোয়ে গেছে তার।মনে হচ্ছিল আরও একটু,আরও একটু বসলে ভালো হতো!বার বার পেটের ভিতরে একটা নিম্ন চাপ অনুভব করছিল।
এমনি আধঘন্টা কেটে গেলো,তাড়াহুড়োতে স্কুলের বাসে চক্র ওঠেনি এটা কেউ লক্ষ্য করল না।বাস ছেড়ে দিলো।চক্রর ঘরের সামনে এসে হর্ন দিলো গাড়ির ড্রাইভার।কেউ নামল না।কেউ জিজ্ঞেস করল না যে চক্র কোথায়!ড্রাইভার মনে করতে পারলো না সকাল বেলা এ ঘরের ছেলেটা বাসে উঠে ছিলো কি না।ছাত্রদের ওঠানো নামানোর লোকটা মনে করল ছেলেটা হয়তো ছুটি নিয়ে গার্জিয়ানের সঙ্গে বাড়ি চলে এসেছে।যেমনটা মাঝে মোধ্যে হোয়ে থাকে।নিয়মিত সময়ের আগে স্কুলের বাস এসে চলেগেল,চক্রর ঘর থেকে কেউ তা লক্ষ্য করল না।
এদিকে স্কুল পাহারাদার,চৌকিদার ওরা  পুরোপুরি এক বেলার ছুটি পেয়ে গেছে।ওরা ক্লাশ ঘরের বাইরে টাইরে ভালো ভাবে দেখে শুনে নিল।স্কুল ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করল।মেন গেটগুলোতে তালা লাগিয়ে ঘরের দিকে চলে গেলো।
চক্র যখন নিজেকে একটু সামলালো,টয়লেট থেকে ও বেরিয়ে এলো।বইয়ের ব্যাগ আর জলের বোতল হাতে তুলে টয়লেট পরিসরের বাইরে বেরিয়ে এলো।

তাপস কিরণ রায় অর্থশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্কুলে শিক্ষকতা করেন বেশ কিছু বছর। পরে আয়কর বিভাগে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি মধ্য প্রদেশের জবলপুর শহরে বাস করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন। ছোটদের এবং বড়দের জন্য লেখা তাঁর অনেকগুলি বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।