বেলা তিনটে বেজে গেলো।চক্র ঘরে আসে নি এখনো।খোঁজ,খোঁজ,খোঁজ,কোথায় চক্র?স্কুলে ফোন লাগানো হলো।স্কুলের ফোন বাজতে থাকলো,কেউ উঠালো না।কেবল স্কুলের অফিস ঘরের ফোনের ঝংকার চক্রকে উতলা করে তুলল।ছুটে এসে ও দেখল স্কুলের অফিস ঘরে ফোন বেজে চলেছে। কিন্তু কি করবে ও?অফিস ঘরেও লাগা ছিল বড় এক তালা! ও অসহায়ের মত কেবল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
চক্রর মা আশপাশের বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলেন--যেখানে চক্র মাঝে মাঝে ঘুরতে যায়।না,কোথাও সে নেই।আশপাশের অলিগলি মাঠ,ঘাট কোথাও ও নেই!
চক্রর বাবা গাড়ি নিয়ে চলে এলেন স্কুলে।না,সমস্ত স্কুল বিল্ডিঙ্গের বাইরেটা তখন খা খা করছে,কোথাও একটা জনপ্রাণীর দেখা নেই।তবু তিনি গাড়ি থামিয়ে নীচে নাবলেন।স্কুলের মস্ত গেটে বড় তালা ঝুলছে দেখলেন।মনে একবার সন্দেহ হলো,এমন তো নয় চক্র স্কুলের ভিতর আটকা পড়ে আছে!পর মূহুর্তে মনে হয়েছে,না,এমন হয় না,বাচ্চাদের স্কুলে এমন ঘটনার নজির নেই বললেই চলে।তবু মেন গেটে গিয়ে তিনি কান পাতলেন।না,কোনো সাড়াশব্দ নেই।দরজায় একবার,দুবার থপ থপ করলেন।না ভেতর থকে কোনো আওয়াজ এলো না!
বেলা পাঁচটা বেজে গেলো।স্কুলের স্টাফের কাছ থেকে চৌকিদারের ঘরের লোকেশন জেনে নিয়ে চক্রর বাবা আর পাশের বাড়ির এক ভদ্রলোক গেলেন চৌকিদারের কুয়াটার্সে।চৌকিদার ছিলো না,ও বাজারে গিয়েছিল।অনেক সময় অপেক্ষার পরও যখন চৌকিদার ফিরল না,তখন ওঁরা সোজা চলে এলেন পুলিশ থানায়।সেখানে চক্রর মিসিং রিপোর্ট করা হলো।
রাত আটটা বেজে গেলো।চক্রর ঘরে কান্নার রোল পড়ে গেলো।মা অঝরে কেঁদে চলেছেন।কান্নার মোধ্যে বলে চলেছেন,আমার ছেলেকে এনে দাও,আমার ছেলে কে এনে দাও গো।বাবা স্তব্ধ হোয়ে দাঁড়িয়ে আছেন,চোখে তার জলের ধারা।চক্র তাঁদের এক মাত্র সন্তান।
চক্র চুপ করে বসে আছে।মাঝখানে সামনের গেটের থেকে ঠুক ঠাক শব্দ এসে ছিলো।ও পাগলের মত টলতে টলতে ছুটে গিয়ে ছিলো।গেটের কাছে পৌঁছাতে তার দেরী হোয়ে গিয়েছিল।ততক্ষণে ওর বাবা স্কুলের গেটে দু তিন বার ধাক্কা দিয়ে চলে গিয়ে ছিলো নিজের কারের কাছে।চক্র শুধু একটা গাড়ির স্টার্ট দেবার শব্দ পেয়েছিল।ভাঙা গলা নিয়ে সে প্রাণপণ চীত্কার করেছিল।কিন্তু কারো কান পর্যন্ত সে চীত্কার পৌঁছায় নি।
ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে এলো।ভীষণ ভয় করছিল চক্রর।সামান্য শব্দ কানে এসে বাধছিলো।হাওয়ার শন শন শব্দ,মশার ঝাঁকেদের ওড়ার শব্দ,আর দূরের লোকালয়ের কথাবার্তার আওয়াজ কানে আসছিল।আর পারছিলো না সে--চীত্কার করতে করতে ওর গলা শুকিয়ে গেলো,ভয় পেতে পেতে ওর শরীরে কেমন জড়তার ভাব এসে গেলো।তার ওপর সারা দিনের না খোয়াতে তার শরীর দুর্বল হোয়ে পড়েছে।আর চলতে পারছে না ও।ব্যাগ আর জলের বোতল পেছনের গেটের কাছে পড়ে রইল।সামনের গেটের কাছে দেওয়ালে হেলান দিয়ে ধুপ করে বসে পড়ল।দু পা সামনে ছড়িয়ে দিয়ে দু হাঁটুর ফাঁকে মাথা গুঁজে চুপচাপ শরীর এলিয়ে পড়ে রইল।