খেলাঘরখেলাঘর

পুজোর চিঠি


(৩)

প্রিয় দাদুভাই,                                                  
আর মাত্র মাসখানেক পূজোর ছুটি হতে।তোমার ঘায়ের কথা শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো।বাবুল মামা তো বিরাট বড় ডাক্তার ,ঠিক সারিয়ে দেবে দেখবে।আর না হলে ঘা-টাকে ঠেকিয়ে রাখতে বোলো,আমি ডাক্তার হলে ঠিক সারিয়ে দেবো তোমার ঐ দুষ্টু পচা ঘা টাকে।আর তো মাত্র কটা বছর ,বলো?আমার না খুব আনন্দ হচ্ছে তোমায় দেখবো বলে।জানো দাদুভাই,এবার আমরা বেশ অন্যরকম ঝুলন করলাম।অন্যবারে তো পল্লবদের বাড়ীর টিনের দরজার পাশের ঘাসের চাঙর কেটে ঝুলঝুরে কাদা মাটি ফেলে দিয়ে উঠোনের তুলসী মঞ্চের পেছন থেকে চাঁছা শ্যাওলা দিয়ে পাহাড় বানাই... ; এবারে না ঠাম্মার একটা সাদা পুরোনো শাড়ী ছিঁড়ে বালতীভর্তি কাদায় চুবিয়ে পাহাড়ের মতো করে বসিয়েছিলাম মাটির তালের মধ্যে গোঁজা কঞ্চির ওপরে।আর সারা দিন ফ্যানের হাওয়ায় শুকিয়ে বিকেল নাগাদ খড়খড়ে পাহাড়ের মতো হয়ে গেলে ওপরে ছিটিয়ে দিলাম চকচকে অভ্রের দানা।কি সুন্দরই না লাগছিলো।মিলন মন্দিরের বড় গেটের সামনের পাথর কুচির ঢিবি থেকে বেছে বেছে তো আগের দিনই খুব কুঁচো পাথরগুলো নিয়ে রেখেছিলাম আর সেগুলো দিয়েই তৈরী হলো আমাদের রাস্তা।রাস্তা দিয়ে হাঁটলো লালবাগের ফকির , পৌষমেলার বাউল আর ছাতা মাথার মাষ্টারমশাই।সবুজ আবীরে মাঠ হলো,সেই মাঠে কৃষ্ণনগরের মাটির চাষা ধান বুনলো।নীল আবীরে হলো পুকুর আর পুকুরে প্লাষ্টিকের হাঁস আর লাল-নী-হলদেটে রাবারের ছুটকো মাছগুলো খেলে বেড়ালো সারা ঝুলন দিনটা।রাস্তায় রাস্তায় প্লাষ্টিকের গাড়ী,মাটির গরুর গাড়ী তো ছিলোই আর ছিলো ধপধপে সাদা তাজমহল।আবার তাজমহলের সামনে যুদ্ধও লেগেছিলো জোর... সেপাই,সান্ত্রী,রাজামশাই,ঘোড়া,হাতি ... সব্বাই হাজির।আর পাহাড়ের খাঁজের মধ্যে লুকোনো টেবিল ল্যাম্পের আলো , কাঁইচি দিয়ে তাক লাগিয়ে কাটা সূর্যের ওপরে ছটা মেরে রোদ্দুর দিচ্ছিলো এই পুরো সাম্রাজ্য।পাহাড়ের নীচটায় ছিলো ঘন জঙ্গল,পার্থেনিয়ামে ফুল আর পাতা লাগানো,আর ফাঁকে ফাঁকে ছিলো বাঘ,সিংহ,শেয়াল,সজারু...;মনে আছে তোমার গেলবারে মালদা থেকে তুমি কিনে দিয়েছিলে জঙ্গুলে প্যাকেটটা, মনস্কামনা মন্দিরের সামনের দোকানটা থেকে?
এখন তো জোড়তোড় ক্লাস চলছে রোজ।ডাকব্যাকের সবুজ ব্যাগটায় রোজকার সিলেবাসে ভরা দিনগুলোকে ভরে চলে আসি স্কুলে, খাঁকি হাফ প্যান্ট আর সাদা হাত কাটা জামা পড়ে।জানো দাদুভাই বাবুয়া বলছিলো আমার নাকি মোচ উঠছে।হঠাত-কলোনীর সুজিত নাকি ওর বাবার রেজার দিয়ে মোচ চেঁচেছে।ওতে নাকি আরো বাড়বে।মা খুব বকছে এসব শুনে আমায়।বলেছে ওর সাথে না মিশতে।আহা ওর কি দোষ বলো?বড় হতে তো সবার ইচ্ছে করে।ওর হয়তো তোমার মতো দাদুভাইই নেই যে ওকে কানে কানে শিখিয়ে দেবে রয়েসয়ে বড় হওয়াই ভালো।জানো দাদুভাই চিন্টু কি করেছে ?কপালে গামছা দিয়ে ঘঁষে ঘঁষে থার্ড আই বের করার চেষ্টা করেছে! বাবা আমাকে বলেছে ওসব কু সংস্কার।বলেছে,আমরা আমাদের দুটো চোখের বাইরে যে চোখটা দিয়ে সবকিছু দেখি সেটা থার্ড আই নয়,সেটা মনের চোখ!মনের চোখ কি গো?আমাকে বুঝিয়ে দিও তো ; শিগগিরি চিঠি দাও।

ইতি তোমার বাপন