আর তারপর থেকেই মনটা ছুটির ছুটে গেছে। কারোর মনেই কষ্ট দেখতে পারে না ছুটি। ঠাম্মা বলেন ছুটির মনটা সমুদ্রের মতো অতল, অন্তহীন, গভীর। সবার জন্যই ছুটির মন কাঁদে। বাড়ির কাজের বুড়ি মা, দুধওয়ালা, বাড়িতে ধূপ বিক্রি করতে আসা বুড়ো লোকটা – সবাইকে দেখেই ছুটির কষ্ট হয়। আজকে ওই মেয়েটা ছুটির মনটা উল্টোপাল্টা করে দিয়েছে। অঙ্ক, ভূগোল, বিজ্ঞান – কোনকিছু্তেই মন লাগছে না তার আর। বাবা, মা চলে গেছেন কখন। কিন্তু দুটো দাগও দেয়নি সে খাতায়। কেন তার এত লাগামছাড়া মন? তার এমন কেন হয়?
নাম-না-জানা একটা কষ্ট ছুটির মনে। মেয়েটার মুখটা তার চোখের সামনে ছবি হয়ে আছে। ছুটি কষ্টটাকে রূপ দিতে পারছিলো না। মেয়েটার মুখটা রামধনুর লাল, নীল, বেগুনি রঙের সঙ্গে মিলেমিশে ঢেউয়ের মতো দুলছিল। আর ঠিক তখনই ছুটির রঙ, তুলি নিয়ে বসার ইচ্ছে হল। ছুটির মন খারাপ হলেই ছুটি আঁকতে ভালোবাসে। সাদা পাতায় জলরঙ ছাড়তেই আস্তে আস্তে বৃষ্টিধোয়া পৃথিবীতে ঘড়বাড়ি, গাছপালা সব কেমন ফুটে উঠতে লাগলো। তারমধ্যেই সাত রঙা রামধনু। ছুটির চোখ থেকে বড়ো বড়ো দুইফোঁটা জল পড়লো সাত রঙা রামধনুর মধ্যে। আস্তে আস্তে বিন্দুদুটো ছড়াতে ছড়াতে ছুটির চোখের সামনেই একটা অস্পষ্ট অবয়ব নিতে থাকলো। ঝাঁকড়া চুলের বড়ো বড়ো চোখের ফ্রক পড়া মেয়েটাকে বেশ চেনা যাচ্ছে। আকাশছোঁয়া রামধনুর একপ্রান্ত মেয়েটার হাতে ধরা। ময়লা জামাকাপড় আর চোখে পড়ে না। রামধনুর রঙে ধুয়ে গিয়েছে তার কাপড়জামা। মুখে একচিলতে হাসি। সাতরঙা রামধনুকে ধরে ফেলেছে যে সে! মনে তাই আর কোনও দুঃখ নেই তার। রামধনু কি সবাই ছুঁতে পারে না সবাই ছুঁতে চায়? ছুটির মনটাও ভালোলাগায় পিড়িং পিড়িং করে উঠলো। হঠাৎই মনে আর কোনও দুঃখ জরইলো না তার আর। এবারে হোমওয়ার্কটা শেষ করে ফেলতে হবে। মা, বাবার আসার সময় হয়ে এলো যে।
ঊর্মিঘোষ-দস্তিদার (দত্তগুপ্ত)
নিউ ইয়র্ক, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
ছবিঃ
কৌস্তুভ রায়
কলকাতা