খেলাঘরখেলাঘর

ক্র্যাশ কোর্স
সাগ্নিক এককথায় রাজি।
দুদিন সারাদিন অদৃশ্য হয়ে সাগ্নিকের সঙ্গে সঙ্গে থাকল ভজহরিদা। রাগ নিয়ে অনেক কিছু শিখিয়ে দিল ওকে। রাগ নানারকমের হয় যেমন ঢিল রাগ, মিল রাগ, ফিল রাগ, কিল রাগ, চিল রাগ ইত্যাদি। কোন রাগ কিভাবে শনাক্ত করবে এবং কিভাবে তা কন্ট্রোল করবে সে সম্বন্ধে একটা হাল্কা ধারণাও দিয়ে দিল।

প্রথমদিন মা সকালে ঘুম থেকে ডাকতেই রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল ও। অমনি অদৃশ্য ভজহরিদা ফিসফিসিয়ে বলল, খিল রাগ, খিল রাগ।
-    মানে?
-    এটা রাগ কন্ট্রোল করার প্রথম পাঠ। ঘুম বা খিদে পেলে বা ক্লান্ত হয়ে গেলে সবারই কম বেশি রাগ হয়ে যায়। রাগ হয়েছে বুঝতে পারলেই মুখে খিল দেবে। মুখ বন্ধ রেখে ভাববে। ভাববে তুমি যা চাইছ সেটা হলে কি ভালো হবে? ধরো, তুমি ঘুম থেকে উঠতে চাইছো না। না উঠলে স্কুলে যেতে পারবে না। তুমি তাই চাও?
একটু ভেবে সাগ্নিক বলল,  স্কুলে না গেলে, পড়াশোনা না করলে আমি বড় হব কি করে?
-    তাহলে লক্ষী ছেলের মতো কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়ো।
স্কুলে ফুটবল খেলতে গিয়ে মন্মথ-র সঙ্গে মারামারি হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। ও ঠিক করে পাসটা বাড়াতে পারেনি বলে মন্মথ মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,
-    দুধ সাবু খেয়ে রাজপুত্র নেমেছেন খেলতে। বলে শট মারছে না তো যেন ফুঁ দিচ্ছে।
আর একটু হলে সত্যি এক ঘা বসিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু ভজহরিদা বলল,
-    ফিল রাগ। ফিল রাগ। মুখে খিল দিয়ে ফিল করো। অনুভব করো। এটা দ্বিতীয় পাঠ। ওর জায়গায় তুমি থাকলে কি করতে? এই সব নিরীহ কথা একদম গায়ে মেখো না। চেষ্টা করো আরো ভালো খেলতে। চেষ্টা করো নিজেকে নিয়ে একই রকম মজা করতে।
ব্যাপারটা বুঝতে সময় লেগেছিল ওর। হাফ টাইমে অনেকক্ষন ধরে ভজহরিদা ওকে বোঝালো। তারপরে কেমন একটা মনের জোর এসে গেলো। সেকেন্ড হাফে খেলতে নেমে মন্মথকে বলল,
-    রাজপুত্র এইবার মাংস আর লুচি খেয়ে খেলতে  নেমেছে।
সেদিন ওদের ব্লু হাউস টিম পাঁচটা গোল করেছিল গ্রীন হাউসকে। তার তিনিটে গোলই দিয়েছিল ও। ওকে নিয়ে কী আনন্দই না করেছিল সবাই । সেদিনের জেতার সব ক্রেডিট ছিল ভজহরিদার।
পরের দিন স্কুল ছুটি। সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা। বৃষ্টি হচ্ছিল ঝিরঝির করে। বাইরে খেলতে যাওয়ার কোন উপায় ছিল না। ভিডিও গেমস খেলার একেবারে আদর্শ দিন। কিন্তু মা কম্পিউটার ছুঁতে দিলনা। ভজহরিদার কথা মতো মায়ের সঙ্গে তর্ক না করে মুখে খিল দিয়ে রইল ও। কিন্তু রাগটা গজগজ করছিল মাথায়। কিছুই ভালো লাগছিল না। চিলেকোঠার ঘরে একা বসে বসে বৃষ্টি দেখছিল আর মন খারাপ করছিল। গাছের ডালে বসা শালিখটার মতো যদি ভিজতে পারতো !! কিন্তু কিছুই হওয়ার নয়।
ভজহরিদা আসতেই অভিযোগ করল, মা আমায় ভিডিও গেমস খেলতে দিচ্ছে না।
-    খুব ভাল করেছে। ঘরে বসে খেলার থেকে মাঠে ঘাটে ছোটাছুটি করলে শরীর মন ভালো থাকবে।
-    কিন্তু এত বৃষ্টিতে বাইরে বাইরে খেলা যায়?
-    ঢিল রাগ, ঢিল রাগ। তৃতীয় পাঠ এটা। যখন বিশেষ কোন কারন খুঁজে পাওয়া যাবে না অথচ কিছুতেই মনটা ভালো লাগবে না তখন ঢিল ছুঁড়বি।
-    এই বৃষ্টিতে কোথায় ঢিল ছুঁড়ব?
-    ঢিল মানে কি সবসময় ঢিল নাকি? নিজের ঘরে যা। একটা দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে অন্য দেওয়ালে বল ছোঁড়। তারপর দেখ রাগ কমে কিনা।
বল ছোঁড়া শুরু করার একটু পরেই ওর মাথায় অনেক প্ল্যান আসতে শুরু করে।
-    ভজহরিদা, তুমি লুডো খেলতে জানো?
পরের এক ঘন্টা লুডো খেলে কোথা দিয়ে যে সময় কেটে গেল! ও এখন অনেকটাই শিখে গেছে কি ভাবে রাগ কন্ট্রোল করতে হয়। ভজহরিদা বলেছে, মাথার সঙ্গে খাতা, পাতা আর ছাতার গভীর সম্পর্ক। কোন উপায়েই রাগ কন্ট্রোল করতে না পারলে রাগের কথা ডায়েরীতে লিখে ফেলতে। তাতে রাগগুলো মাথা থেকে খাতায় চলে যবে। একান্তই লিখতে ইচ্ছে না করলে গাছের কাছে গিয়ে পাতা ছুঁইয়ে ফিসফিসিয়ে বলে দিতে পারে সব। নিমেষে রাগগুলো মাথা থেকে গাছের পাতায় চলে যাবে। বৃষ্টির দিনে ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারে রাস্তায়। শুনতে পারে বৃষ্টির টাপুর টুপুর শব্দ। বৃষ্টির জলে ছাতার সঙ্গে মাথার রাগও সব ধুয়ে মুছে যাবে।
দ্বিতীয় দিনেই ভজহরিদা ঘোষণা করল যে, রাগ ম্যানেজমেন্টের ক্র্যাশ কোর্স শেষ। এখন থেকে ওকে নিজে নিজে রোজ বাড়িতে, স্কুলে, খেলার মাঠে সবসময়ই যা শিখেছে তা অভ্যাস করতে হবে। ও যেহেতু বুদ্ধিমান তাই রাগ কন্ট্রোল করতে ওর কোন অসুবিধে হবে না।