ইউনিট টেষ্টের ফল বেরিয়েছে । একটাতেও নেহার মার্কস ভালো হয়নি এবার । টিচাররাও আপসেট । সেই সাথে নেহাও । বাড়ি ফিরে চুপচাপ খেয়েদেয়ে নিজের ঘরে ঢুকে নেহা ভাবল বই খুলে বসে যাবে । কিন্তু ডেস্কটপের আবেদন তাকে টেনে নিয়ে গেল মাউসের দিকে । হাত সুড়সুড় করে উঠল । জ্বলে উঠল নীল আলো । সমুদ্রের ঢেউয়ের ওয়ালপেপার । অন করল ওয়াইফাই মোডেম । ফেসবুকে পৌঁছেই সেই অবারিত বন্ধুত্বের হাতছানি । কি ভাল লাগছে নেহার সেই মূহুর্ত্তে। সব জাগতিক দুঃখকেও ভুলে থাকা যায় । একে একে জ্বলে উঠেছে সকলের সবুজ আলোর বিন্দু । স্তুতি, তিথি, বন্দনা, শর্মিলা, আর সেই মহিলা যার সাথে আগের দিন রাতেও অনেক কথা হয়েছে , যার প্রোফাইল নাম "নিমপাতা"
নিমপাতা: হ্যালো নেহা! স্কুল থেকে ফিরলে?
নেহা : হ্যাঁ
নিমপাতা: কেমন মার্কস পেলে টেষ্টে?
নেহা : ভালো নয় ।
নিমপাতা : কেন? তুমি তো ভালো মেয়ে, মা'কে কত ভালোবাস !
নেহা : কিন্তু মায়ের কথা তো শুনিনা আজকাল । তাই তো আমার এত খারাপ হয়েছে এবার
নিমপাতা : ঠিক আছে । এবার থেকে মা যা চায় তাই কোরো , তোমার ভালো হবে দেখো ।
নেহা : আসলে আমি বুঝে উঠতে পারিনা কতক্ষণ সময় পড়ার টেবিলে দেব আর কতক্ষণ কম্পিউটারে । আর মা আমার টাইম ম্যানেজমেন্ট করে দিলেও রেগে যাই মায়ের ওপর ।
নিমপাতা : ঠিক আছে এবার থেকে মায়ের সব কথা শুনে চলো, সব ঠিক ঠাক হয়ে যাবে ।
নেহা : তুমি ঠিক বলছ তো নিমপাতা?
নিমপাতা : যাও গিয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে একটিবার বলো যে মা, আমি আগের মত লক্ষী হয়ে যাব, তোমার কথা শুনে চলব তাহলেই মা আর রাগ করবে না ।
নেহা দৌড়ে পাশের ঘরে গিয়ে মা, মা করে ডাকতে গেল কিন্তু মাকে দেখতে পেল না । খুব মন খারাপ আজ তার । বারান্দায় গিয়ে দ্যাখে মা বসে আছে পেছন ফিরে...জড়িয়ে গলাটা ধরে আদর করতে গিয়ে দেখতে পেল মায়ের কোলে ছোট্ট নোটবুক কম্পিউটার আর যথারীতি মা তখনো "নিমপাতা" হয়ে ফেসবুকের সবুজ ঘরে আলো জ্বেলে রেখেছে তার আদরের নেহার কথা শুনবে বলে ।
ইন্দিরা মুখার্জি
ভবানীপুর, কলকাতা
ছবিঃ
কৌস্তুভ রায়
কলকাতা