খেলাঘরখেলাঘর




রিটায়ার করার পর সকলেই কিছু না কিছু করে। পটলবাবু ঠিক করলেন যে তিনি বিজ্ঞানী হবেন। ছাত্রজীবনে বিজ্ঞানসাধনা করতে চেয়েছিলেন। তখন কেউ পাত্তা দেয়নি। সকলেই চিরকাল তাঁকে অবজ্ঞা করে এসেছে, তাই এইবেলা একটা জবাব না দিলেই নয়। ঠিক করলেন রীতিমত গবেষণাগার গড়ে আবিষ্কার টাবিষ্কার করে সব্বাইকে তাক লাগিয়ে দেবেন।

পটলবাবু যে এরকম মতলব ফাঁদছেন, এই ব্যাপারটাই কেউ আঁচ করে উঠতে পারেনি। ছেলেমেয়েরা তো নয়ই, নিদেনপক্ষে বউও না।  এমনকি অফিসের বা পাড়ার বন্ধু বান্ধবরাও না। করবে কি করে? কেউ তাঁকে কোনদিন সায়েন্স ম্যাগাজিন পড়তে, খবরের কাগজে বিজ্ঞানের পাতা নিয়ে নড়াচড়া করতে বা নিদেনপক্ষে টিভির চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে ডিসকভারি কিংবা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে এসে থমকে যেতে দেখেনি। সবাই জানে পটলবাবু আর পাঁচটা সুখী, গৃহস্থ লোকের মতই। তাঁর মধ্যে যে সাংঘাতিক বিজ্ঞানস্পৃহা লুকিয়ে আছে তা বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই।

তো এই পটলবাবু রিটায়ার করলেন। পরদিন সকালে বাল্যকালের বন্ধু গোবিন্দবাবু এসে বললেন, “ওরে, এবার ঘরে বসে কি করবি? কাল থেকে চল মর্নিং ওয়াক করি।” পটলবাবু খুব একটা উচ্চবাচ্য করলেন না।

“কেন রে? মর্নিং ওয়াকটা খারাপ কিসে? ও বুঝেছি। সকালবেলায় ঘুম থেকে ওঠার ভয়? ওতে কোন অসুবিধে নেই, আমি ফোন করে ডেকে দেবোখন।”

পটলবাবু একটু গলা পরিষ্কার করে বললেন - “না মানে ঠিক তা নয়। ভয় পাবো কেন? আসলে এই তো সবে রিটায়ার করলাম। তাড়াহুড়োর কি আছে? কয়েকটা দিন যাক, না হয়-”

“না না, তাড়াহুড়োর দরকার নেই মানে? আমি বলছি অবশ্যই আছে। একশো বার আছে। একবার বাড়িতে বসে আরামের জীবনে অভ্যেস হয়ে গেলে তোর কি অবস্থা দাঁড়াবে ভাবতে পেরেছিস? আমার মতে তোর একটা দিনও দেরী করা চলবে না”

পটলবাবু কিছু বললেন না। চুপ করেই রইলেন। ভাবলেন গোবিন্দ চিরকালই হম্বিতম্বি করে সব ব্যাপারে। ও রিটায়ার করেছে দুমাস আগে। এতদিনে সব ঠিক ঠাক করে ফেলেছে। গোবিন্দবাবু বলে চললেন, “আর হ্যাঁ, শুধু হাঁটতে গেলেই চলবে না। লাফিং ক্লাবে যেতে হবে, ব্যাডমিন্টন খেলতে যেতে হবে। তারপরে লাইব্রেরীর মিটিং এ যেতে হবে।

পটলবাবু মাথা নেড়ে হুঁ বললেন বটে, কিন্তু ভেতর ভেতর তিনি বেশ বুঝতে পারছিলেন যে এই খপ্পরে পড়লে তাঁর বিজ্ঞানসাধনার ভরাডুবি হবে। সারাদিন হাঁটাহাঁটি, খেলাধুলো, আড্ডা এইসব করলে আর কোন সময় পাওয়া যাবে গুরুত্তপূর্ণ চিন্তার জন্য? নাঃ, ভূতোর কথায় সায় দিলে একদমই চলবে না। গোবিন্দবাবু দুটো শিঙ্গাড়া আর চা সাবাড় করে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে পড়লেন আর বলে গেলেন থ্রি কোয়ার্টারস সাদা প্যান্ট আর গেঞ্জি যোগাড় করে রাখতে। পটলবাবু ভুরু কুঁচকে খানিক ভাবলেন। তারপর বউকে ডেকে বললেন - “হ্যাঁ গো, তুমি বলছিলে না অনেকদিন নাতিকে দেখা হয় না। তা যাও না কয়েকটা দিন বেড়িয়ে এস? আমি টিকিট কেটে দিচ্ছি।”