সে দিন ছুটির দিন ছিলো,রবিবার।তখন রাত দশটা হবে। রাজাদের বস্তিঘরগুলিতে কিভাবে যেন আগুন লেগে গেলো। আটদশ ঘর একের পর এক দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো.চারি দিকে চীত্কার চেঁচামেচি-- আগুন,আগুন,করে সবাই ছুটোছুটি করতে লাগলো।বস্তির লোকেদের কান্নার রোল পড়ে গেলো।
হইহট্টগোল,কান্না চেঁচামেচিতে রানীর ঘুম ভেঙে গেলো। ধড়ফড় করে সে উঠে বসলো। দেখল মা,বাবা,কেউ তার পাশে নেই। ও ভয় পেয়ে চীত্কার করল।ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে এলো।মা,বাবাকে দেখলো ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন।নীচে জ্বলে যাচ্ছে রাজাদের ঘরগুলি!
মা,বাবার কাছে তাড়াতাড়ি ছুটে গেলো রানী। সে চীত্কার করে কেঁদে উঠলো,আমার বন্ধু,আমার বন্ধু কই!
নীচে তখন বস্তির সব ঘর আগুনে ভস্মিভূত হোয়ে গেছে।
রানী প্রচন্ড চীত্কার করে কেঁদে বলে উঠলো,আমার বন্ধু কই!আমার বন্ধু কই?সিঁড়ি দিয়ে তড়তড় করে নীচে নেমে যেতে লাগলো। বাবা,মা'র শত বাধা ওকে যেন বাধ মানাতে পারছে না। রানী চীত্কার করে একই কথা বলে চলেছে,আমার বন্ধু,আমার বন্ধু কই!
জোর করে বাবা,মা তাকে আটকে রাখলেন । তাঁদের মনও ভালো নেই।রানীর বন্ধু,রাজার চিন্তা ওদের মনকেও বিষন্ন করে তুলেছে।
রাত শেষে ঘুমিয়ে পড়ল সবাই। ভোরবেলা ঘুম ভাঙ্গলো সবার। রাতের দুঃস্বপ্নের ঘোর রানীর তখনও কাটে নি। মুখ চোখ তার শুকিয়ে গেছে।
বেলা দশটার পরে দীনু খবর নিয়ে এলো,ঝুপড়ি ঘরের ছেলেটার মা,বাবা,কাল রাতে পুড়ে মারা গেছে। ছেলেটা কি ভাবে যেন বেঁচে গেছে!
রানী জোরে কেঁদে উঠলো,রাজা,আমার রাজা কোথায় আছে বলো?
দীনু বলে,হ্যাঁ,রাজা নাম ছেলেটার,ও বেঁচে আছে।
রানীর মা,বাবা খুব দুঃখ পেলেন। মেয়ের দুঃখে ওঁরা বেশ চিন্তিত হলেন। সত্যি বন্ধুকে তাদের মেয়ে খুব ভালোবাসে।রানীর বাবা কিছু সময় ভেবে বলে উঠলেন,দিনু একটা কাজ করতে পারবে?
--কি?বলুন না বাবু!বিনত দীনু বলে ওঠে।
--একবার রাজা ছেলেটাকে এনে আমাদের দেখাতে পারবে? বাবা ধীর স্বরে বলে উঠলেন।
--বলেন যদি,দেখতে পারি,আনতে পারি কি না!দীনু বলে।
ঠিক দুপুর বেলা,দীনু রানীর বন্ধু রাজাকে কোলে নিয়ে হাজির হল।তখন কাঁদছিল রাজা,মুখ চোখ কেমন লাল লাল তার।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছিল।
রানীর মুখে হাসি ফুটে উঠলো,দৌড়ে সে রাজার কাছে এসে দাঁড়ালো।
সুন্দর ছেলে রাজা।শরীরে কোথাও ভিখারীর ছেলে বলে লেখা নেই।রানীকে দেখা মাত্র কান্নার মধ্যেই সে কেমন হেসে উঠলো!
রানীর মা,বাবার দু জনের মনে একই কথা মনে হচ্ছিল,ভিখারীর অনাথ ছেলেটা বেশ সুন্দর।তাদের তো কোনো পুত্র সন্তান নেই।এই অনাথ ছেলেটিকে যদি ছেলে বলে মেনে নেওয়া যায়!ছেলের মত স্নেহ ভালোবাসা দেওয়া যায়!কেমন হয় তা হলে?
এমনি সময় দীনু দুঃখে কাতর হয়ে বলে ওঠে,ওর আর কেউ নেই গো,ও একা হয়ে গেলো,বেচারা!
রানীর বাবা যেন আর থাকতে পারলেন না,সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন,আমরা আছি দীনু,আজ থেকে ও আমাদের এখানে থাকবে।
রানীর মা অবাধ খুশিতে কেঁদে ফেললেন। রানীর বাবাকে বলে উঠলেন,আমার মনের কথাটা তুমি বলে দিলে গো!
রানী তো খুব খুশি,উচ্ছল আনন্দে সে ডেকে উঠলো,বন্ধু!
রাজা তাকালো রানীর দিকে,তারপর তুতলিয়ে বলে উঠলো,ব ন ধু উ...!
তাপসকিরণ রায়.
জবলপুর , মধ্য প্রদেশ
ছবিঃ
কৌস্তুভ রায়
কলকাতা