সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
কাগ নয়ঃ লীলা মজুমদার

লীলা মজুমদারের লেখার ধরনটা এমনই, মনেই হবে না তুমি গল্পগুলো বইয়েপড়ছ, মনে হবে মোড়ায় বসে তিনি গল্পগুলোবলছেন আর বন্ধুরা সব তাঁকে ঘিরে গোল হয়ে বসে হাঁ করে গল্প শুনছ। ছোটদের জন্য তাঁর লেখা গল্পগুলোয় গল্পের মজা আর তা থেকে কিছু শেখার আনন্দ এমনভাবে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে যে তুমি আলাদা করে বুঝতেই পারবে না গল্পের ছলে তোমায় জীবনের কোনও নতুন পাঠ দেওয়া হল কিনা। কদিন পরে যখন গল্পটার কথা আবার মনে পড়বে, তখন নিজেই স্পষ্টভাবেবুঝতে পারবে কি অমূল্য শিক্ষা পেয়েছ গল্পটা থেকে।

এরকমই একখানা বই 'কাগ নয়'। ছোট্ট ছোট্ট কুড়িটা গল্প রয়েছে, প্রায় সবকটা গল্পেই ছড়িয়ে রয়েছে জীবজন্তু পশুপাখিদের সঙ্গে মানুষের, বিশেষ করে ছোটদের সম্পর্কের রসায়ন, আর রয়েছে আমাদের রোজকার জীবনের বড় বড় না পাওয়ার দুঃখগুলোকে হারিয়ে দিয়েছোট ছোট পাওয়ার আনন্দকে সঙ্গে করে কেমন করে জীবনকে জিতিয়ে দিতে হয়, তার ভারি সুন্দর সুন্দর উদাহরণ।

পায়ে তামার ঘুণ্টি বাঁধাহারিয়ে যাওয়া সবুজ পায়রা মুনি কেমন করে বকুদের বাড়িতে আবার ফিরে এল, সায়েবদের ধরে আনা সবুজ হরিয়াল, যার কিনা বুক ধুকপুক করছে এখনও, তার বাঁধন কেটে আকাশে উড়িয়ে দিল কে, পায়ের আঙুলগুলো নিচের দিকে মোড়া বলে যে তানিকে সবাই হ্যাটা করে, খেলতে নেয় না, সে ফতুয়ার পকেটে করে কালো চিতার ছানা নিয়ে ঘুরছে কেন, কুমুর পোষা মোরগ কুঁকড়োকে তো শেয়ালে নিলো, তারপর কি সে শেয়ালদের ওপর বদলা নিলো, নাকি অন্য কিছু? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে 'কাগ নয়'-এর গল্পগুলো পড়তে পড়তে।

সেইসঙ্গে জানতে পারবে পুজোয় নতুন জামাটামা কিচ্ছু না হলেও কেমন করে সবাই মিলে হইহই করে আকাশের গায়ে রামধনু আঁকতে বেরিয়ে পড়া যায়, চারপাশে থইথই জল বন্যার মাঝেও একচিলতে ঘরে আট-দশজন মিলে মাথা গুঁজে কেমন করে আশায় দিন গোনা যায়, সেসব কথাও।

পকেটমারি করে গুটিকয় আতুর পশুপাখিকে পালছে নখছ্যাঁচা আঙুলওয়ালা বুড়ো, শিরদাঁড়া ভাঙা সাপকে শীতের রাতে ওম দেবে বলে তার গলা জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে ঝানু চোর চানু, ছোট্ট মেয়ের সারল্যে মনের কালি ধুয়ে চোরাই জিনিস ফেরত দিয়ে মায়ের কাছে ফিরে যাচ্ছে জল-মানুষ, হাতি-মা আর মানুষ-মা সব শত্রুতা ভুলে একে অন্যের ছানাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করছে, এমন অনেক রত্ন লুকিয়ে আছে এই বইয়ের পাতায় পাতায়।

এছাড়া আছে লেখিকার দেশের বাড়ির গ্রাম মসূয়ার গল্প আর তাঁর শৈশবের শিলং পাহাড়ের দিনগুলোর কিছু স্মৃতিকথা, বাঘ থেকে বেড়াল, সঅঅব পাওয়া যাবে সেই গল্পের ঝুলিতে।

এই বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন দেবাশীষ দেব। প্রতিটি গল্পের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে কালির আঁচড়ে শিল্পী ভারি ছিমছাম অথচ অর্থবহ ছবিগুলি ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পগুলো যেমন সরলভাবে জীবনের নানা পাঠ শিখিয়ে চলে, অলংকরণও তেমনই সহজ আর সুন্দর।

 এহেন একখানা বইকে নিজের সংগ্রহে কে না রাখতে চায়? সংগ্রহ করে ফেলো ‘কাগ নয়’ - তুমি তো এক নতুন ঐশ্বর্যের সন্ধান পাবেই, বড়দেরও বারবার পড়ে ফেলতে ইচ্ছে করবে এ বই।

 

বইঃ কাগ নয়
রচনাঃ লীলা মজুমদার
প্রকাশকঃ আনন্দ পাবলিশার্স
দামঃএকশো টাকা

ভূতপূর্ব ইঞ্জিনিয়ার, বর্তমানে সাংসারিক কাজের মাঝে সু্যোগ পেলেই পড়া আর লেখার আনন্দে মাতার চেষ্টায় থাকেন। সেই গোত্রের মানুষ, যারা আর কিছু না পেলে ঠোঙ্গায় ছাপা খবরও মন দিয়ে পড়েন। সারাদিনের অনেকটা সময় কাটে মেয়ে কুটুনের সঙ্গে; তার কীর্তিকলাপ মাঝেমধ্যে লিখতে চেষ্টা করেন;বর্তমানে ধানবাদের বাসিন্দা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা