খেলাঘরখেলাঘর

FacebookMySpaceTwitterDiggDeliciousStumbleuponGoogle BookmarksRedditNewsvineTechnoratiLinkedin

দুইদিন আগে স্বয়ং বিশ্বকর্মা এসেছিলেন। সেই দেবলোক থেকে ধরনীতে আসার পথের যা অবস্থা, তা দেখে তিনি এতই দুঃখিত হয়েছেন, যে পুজোর দিনটা প্রায় সারাদিন মেঘ বৃষ্টি এইসবে ভরিয়ে দিলেন। মন ভারি বিশ্বকর্মার, তাই আকাশও মুখ গোমড়া করে রইল; সূয্যিঠাকুর মুখ লুকালেন মেঘের আড়ালে। ঘুড়ি লাটাই পড়ে রইল ঘরের কোণে।

প্রসাদের ফলের কুচি চিবাতে চিবাতে এই গপ্পো আমাকে শোনাচ্ছিল ইচ্ছামতী। হ্যাঁ, ঠিকই বলেছি, ইচ্ছামতী! দেখতে দেখতে সে প্রায় পাঁচ বছরের হয়ে গেল, একটু বড় হয়েছে এখন, তাই আমাকে আর তাকে গল্প শোনাতে হয় না; উলটে সেই আমাকে শোনায় নানা ভাবনায় মোড়া গল্প। এই যেমন কিছুদিন আগে উত্তরাখন্ডে যে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে গেল, সেই নিয়ে সে কি বলেছে জান? বলেছে, মা দুর্গার মর্ত্যে আসার জন্য দোলাটাকে ঝাড়া মোছা হচ্ছিল। সেটাকে ধুতে গিয়ে বেশি জল ঢেলে ফেলেছে, আর সেই জলই নাকি ভয়ানক বৃষ্টি হয়ে ঝরে গেছে পর পর কয়েকদিন।

ছোটদের কল্পণায় তো কত কিছুই হতে পারে। কিন্তু বড়রাও যে সুবিধামত সেই পথেই হাঁটে। এই যেমন, উত্তরাখন্ডের এত বড় দুর্যোগের পরে, অনেকেই তো এটাকে ঈশ্বরের খেয়াল বলে সব দায় ত্যাগ করতে চেয়েছেন। কিন্তু ঈশ্বরের ওপর দায় চাপিয়ে আমরা আমাদের সব দোষ এড়িয়ে যাব কি করে? ঈশ্বর হয়ত সত্যিই রুষ্ট হয়েছিলেন, কিন্তু কেন হয়েছিলেন? হয়েছিলেন আমাদের অন্যায় দেখে। কি অন্যায়, জানতে হলে পড়ে দেখ এবারের প্রচ্ছদকাহিনী - ভূস্খলন।

এবারের ইচ্ছামতী একটু আলাদা। সমস্ত নিয়মিত বিভাগ গুলিতো আছেই।তার সাথে ইচ্ছামতীর পাতায় রয়েছে অনেক নতুন বন্ধুদের লেখা এবং আঁকা ছবি। বিশেষ করে নজর রেখ ইচ্ছেমতন বিভাগে। সূদুর মুম্বইতে বসে, শুধুমাত্র নিজেদের ইচ্ছায়, নিজেদের মাতৃভাষাকে ভালবেসে শিখছে সেখানকার অনেক কিশোর-কিশোরী। তাদের উৎসাহিত করছেন তাদের আশেপাশের বয়োজ্যেষ্ঠের দল। নিয়মিত পড়াশোনার বাইরে গিয়ে, বাংলা ভাষা শিখে, বাংলায় কবিতা আর গল্প লিখে পাঠিয়েছে মুম্বই থেকে ইচ্ছামতীর চার বন্ধু। আর আরো দুই বন্ধু এইবারের ইচ্ছামতীকে সাজিয়ে তুলতে এঁকে দিয়েছে অনেক ছবি। এদের সবার সম্পর্কে জানতে হবে উলটে পালটে দেখতেই হবে ইচ্ছামতীর সব ক'টা পাতা।

আগামি ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ইচ্ছামতী পাঁচ বছর পূর্ণ করবে! সেই আনন্দেই লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ইচ্ছামতী। জন্মদিনে কি কি আনন্দ করবে, সেই সব পরিকল্পনা করতেই কেটে যাচ্ছে তার দিন। চাই তার অনেক কিছু। দেখতে হবে তার কোন কোন আবদার মেটানো যায়। যা লম্বা তার লিস্টি- সেই লম্বা লিস্টি বানাতে বানাতে হাত থেকে বেরিয়ে গেল অনেকটা সময়, তাই এবার বর্ষার শেষে আর পুজোর আগে এল বর্ষা-শরৎ যুগ্ম সংখ্যা ২০১৩। তোমার কেমন লাগল এই সংখ্যা, জানিও কিন্তু আমাদের।

রেগেই থাকুন, আর যতই শাসন করুন না কেন, আশ্বিন মাস পড়ে গেছে, মাঝে মধ্যে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়লেও , পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে ঝকঝকে নীলকান্তমণির মত আকাশ, সেখানে পেঁজা তুলোর মত সাদা মেঘ, সোনালি রোদ্দুর; নদীর ধারে ফুটেছে কাশের দল, সন্ধ্যেবেলা মায়াময় সুবাস ছড়াচ্ছে ছোট্ট ছোট্ট শিউলির দল। সেজে উঠেছে প্রকৃতি। মা'কে তো এবার আসতেই হবে, সে দোলাতেই হোক, বা পায়ে হেঁটে। আর মাত্র কটা দিন...

মা দুগ্‌গার জন্য, তোমার সাথে হাত ধরে অপেক্ষা করুক ইচ্ছামতী।

ভাল থেক।

চাঁদের বুড়ি
২রা আশ্বিন, ১৪২০
১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ছবি সৌজন্যেঃ
উদয় শঙ্কর সরকার
অনুভব সোম
ফার্স্ট পোস্ট