খেলাঘরখেলাঘর

FacebookMySpaceTwitterDiggDeliciousStumbleuponGoogle BookmarksRedditNewsvineTechnoratiLinkedin
মেঘ

আমার বাড়ির আশপাশ থেকে কাগজে-কলমে গ্রীষ্ম গেছে অনেকদিন। সূয্যিমামার রাগী রাগী ভাবটা একটু  যেন কমেছিল।পথের পাশের কদম গাছটা আবার ভরে উঠেছিল ফুলে। বাগানের কোণে কামিনী গাছ ছেয়ে গেছিল ছোট ছোট সাদা সুগন্ধী ফুলে। কাঠফাটা রোদ্দুর আর ঝলসানো গরমের হাত থেকে নিস্তার পেয়েছিল ধরিত্রী মায়ের সন্তানেরা। টিপ টিপ, টুপ টাপ করে এসে গেছিল বর্ষা। মোটামুটি ঠিক সময়েই এসেছিল। মাঝে মাঝে গুরু গুরু গর্জন করে আকাশ ঢেকে দিচ্ছিল ধূসর রঙা মেঘের দল - দেখে মনে হচ্ছে যেন যুদ্ধে চলেছে ঐরাবতের দল। মাঝে মাঝে সারাদিন ধরে বৃষ্টি পড়েই চলেছিল। কিন্তু শ্রাবণ মাস পড়ে যাওয়া সত্বেও, গত বেশ কিছুদিন ধরে আবার যেন ছুটি নিয়েছে বর্ষা -আবার তার দেখাই পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছর বর্ষা ঠিক মত হয়নি, অনেক জায়গাতেই খরা হয়েছিল। এবছর আবার সেরকম কিছু হবে নাকি? কিন্তু অতিবৃষ্টিতে অনেক জায়গাতে চাষের ফসল যে ডুবে গেছে। কোথাও কোথাও হয়ত বন্যাও হয়ে গেছে। কি হবে,কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।

তোমার বাড়ির আশেপাশে কিরকম বৃষ্টি পড়ছে? অনেক , অনেক, নাকি অল্প- স্বল্প? বৃষ্টিতে ভিজেছ একদিনও? নাকি মায়ের কথা শুনে শুধু বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখেছ কিরকম করে বৃষ্টিতে খেলে বেড়াচ্ছে পাড়ার কুকুরছানাগুলো? অথবা ঘোর বৃষ্টিতে ভেজা চুপচুপে কাকগুলো যখন তোমার বারান্দার রেলিং এ এসে বসেছে, তখন মনে মনে ভেবেছ- না বেরিয়ে ভালই হয়েছে বাবা...এরকম ভেজাটা মোটেও ভাল ব্যাপার নয়...আমি বলি কি - রোজ না হলেও, এক আধ দিন বৃষ্টিতে ভেজাটা খুব একটা মন্দ ব্যাপার নয় । খোলা ছাদে  বৃষ্টিতে ভিজলে মনে হবে যেন একটা বিশাল শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে স্নান করছ। যদি একবারও এরকম না করে থাক, তাহলে এইবার একবার নাহয় করেই দেখ না!

ঋতুচক্রের হিসাবে সময়টা যেহেতু বর্ষাকাল, তাই নিয়মিত বৃষ্টি পড়ুক আর নাই বা পড়ুক, বর্ষার আভাস পেয়েই হটাত করে মাটি ফুঁড়ে উঠেছে নতুন ঘাস, ছোট্ট ছোট্ট চারাগাছ। রথের দিনে নতুন গাছ কিনে বাগানে বা বারান্দার কোণের টবে পুঁতেছেন অনেকেই। তুমি হয়ত জান, এই যে আজকাল অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, এর মূল কারণ হচ্ছে আমরা মানুষেরা, বসতি গড়ে তোলার নেশায় ইচ্ছামত কেটে ফেলছি গাছপালা, নষ্ট করছি বনভূমি। গাছ, সে ছোটই হোক বা বড়, যে মানুষের কত উপকার করে, সে নিয়ে কথা বলতে গেলে শেষ হবে না। এক কথায় বলতে গেলে, গাছ মানুষের সবথেকে উপকারী বন্ধু। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত গাছের যত্ন নেওয়া, নতুন গাছ পোঁতা, আর পৃথিবীকে আরো সজীব শীতল করে তোলা। এই ভাবনা নিয়েই বর্ষাকালে অনেক জায়গা বৃক্ষরোপণ উতসব করা হয়, বনমহোতসব করা হয়। তুমি কি এইরকম কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছ কোন দিন?

গাছ

এই প্রসঙ্গেই বলি, জান তো, বৃক্ষরোপণ উতসব, হলকর্ষণ উতসব করতে আমাদের নতুন ভাবে উতসাহিত করেছিলেন কবিগুরু রবি ঠাকুর। শান্তিনিকেতনের খোলা প্রান্তরে , লাল মাটি আর সবুজ গাছপালার মাঝখানে, তিনি তাঁর ছাত্রছাত্রীদের উতসাহিত করতেন প্রতি বছর বর্ষাকালে এইসব উতসব করতে। ছোট্ট ছোট্ট গাছ বন্ধুদের উদ্দেশ্যে তিনি লিখেছিলেন -

আয় আমাদের অঙ্গনে ,
অতিথি বালক তরুদল ,
মানবের স্নেহসঙ্গ নে ,
চল্‌ , আমাদের ঘরে চল্‌ ।

যদি তোমারও বন্ধু হয় একটা ছোট্ট গাছ, যে কিনা তোমার সাথে সাথেই বেড়ে উঠবে ! সে থাকবে তোমার বারান্দার এক কোণে একটা টবে, তাকে তুমি জল দেবে, সার দেবে, সূর্যের আলো পাবার ব্যবস্থা করে দেবে, তার বদলে সে তোমাকে দেবে সুন্দর ফুল, সবুজ পাতা আর প্রচুর বিশুদ্ধ অক্সিজেন। কেমন হবে তাহলে? ভেবে দেখ একবার।

এখন, আকাশে যখন মাঝেমধ্যে দেখা যাচ্ছে ধূসর মেঘের ঘনঘটা, বৃষ্টিও এসে গেছে, পথে ঘাটে মাঝে মধ্যে জমে যাচ্ছে জল, বাগান ভরে গেছে সুগন্ধী ফুলে, গাছপালা হয়ে উঠেছে সজীব সবুজ, তাহলে ইচ্ছামতীর বর্ষা সংখ্যাই বা না এসে থাকে কি করে? তাই এসে গেল ইচ্ছামতীর বর্ষা ২০১১ সংখ্যা - বৃষ্টি ভেজা অনেক অ-নে-ক গল্প, কবিতা আর নিয়মিত বিভাগগুলিকে নিয়ে। গাছ আর মানুষের সম্পর্ক নিয়ে এত কথা হল, তাই বলি, এই বিষয়েই লেখা গল্প 'পিন্টু ও একটি গাছ', আর পরশমণি বিভাগে 'গাছেদের রান্নাবান্না' অবশ্যই পড়ে ফেল। এবার জানা-অজানা বিভাগে থাকছে তিনটি বিভিন্ন স্বাদের তথ্য সমৃদ্ধ লেখা। আরো অনেক কিছু আছে। আমি আর কেন খুলে বলব কি কি আছে, তুমিই নাহয় সব পাতা উলটে পালটে দেখ না! আর দেরি না করে বসে পড়, আর পড়ে ফেল ঝটপট তোমার প্রিয় পত্রিকা।

বর্ষার আনন্দ

ঝমঝম বৃষ্টিকে সঙ্গী করে ইচ্ছামতীর সাথে, ভেসে চল গল্প-আড্ডার জমজমাটি দুনিয়ায়।

ভাল থেক ।

চাঁদের বুড়ি
মঙ্গলবার,
১৬ই শ্রাবণ, ১৪১৮
২রা আগস্ট, ২০১১