সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
৫০শে পা দিল সাউন্ড অফ মিউসিক

পাহাড়ঘেরা অস্ট্রিয়ার কথা মনে পরলেই আজও এক নিমেষেই যার কথা মনে পরে তা হল- হ্যাঁ, রবার্ট ওয়াইসের ছবি 'সাউণ্ড অব মিউসিক' । ১৯৬৫ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিকে মিউসিকাল জনার এর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে ধরা হয় । রবার্ট ওয়াইস এই ছবির পরিচালকই শুধু ছিলেন না, ছিলেন প্রযোজক ও। রিচার্ড রজার আর অস্কার হ্যামারস্টেনের সুরে সাউন্ড অফ মিউজিক যেন অন্য মাত্রা পায় । এই ছবিতে ক্যাপ্টেন গেয়র্গ ভন ট্র্যাপের ভূমিকায় ক্রিস্টফার প্লামার আর তাঁর ছেলেমেয়েদের গভর্নেসের ভূমিকায় জুলি অ্যান্ড্রিউজের অভিনয়ের কথা আজও সবার মুখে মুখে ঘোরে। তখনকার সবথেকে জনপ্রিয় ছবি 'গন উইথ দা উইন্ড' ও জনপ্রিয়তার নিরিখে 'সাউণ্ড অব মিউসিক' এর কাছে হার মানে । মুক্তির পর থেকেই রাশি রাশি পুরষ্কার ও সম্মান পাওয়া এ ছবিটি বারে বারেই বিশ্বের সেরা ফিল্মের তালিকাগুলির মধ্যে নিজের জায়গা করে নিয়েছে।

দঁড়াও, তোমাদের ছবির গল্পটা ছোট্ট করে বলে নিই । গল্পের পটভূমি অস্ট্রিয়ার ছবির মত শহর সাল্‌জ্‌বার্গ। সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশেপাশে। এক্কেবারে পাখির মতন প্রাণচঞ্চল মেয়ে মারিয়া । সে সন্ন্যাসিনী হবে ঠিক করেছে। কিন্তু সাল্‌জ্‌বার্গের বদ্ধ কনভেন্ট-এ তার মন টেঁকে না । তাই ওকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় অস্ট্রিয়ার প্রাক্তন নৌ আধিকারিক ক্যাপ্টেন ভন ট্র্যাপের ছোট্ট ছোট্ট সাত ছেলেমেয়ের দেখাশোনার কাজে । আস্তে আস্তে মারিয়া ওদের ভালবেসে ফেলে আর সেই সাত দস্যিও ভালবেসে ফেলে মারিয়াকে। মারিয়ার সাথে গান গেয়ে, আনন্দ করে ওরা আবার প্রাণখুলে বাঁচতে শেখে । এক সময়ে ক্যাপ্টেন আর মারিয়া নিজেদের অজান্তেই একে অপরকে ভালবেসে ফেলেন । নানা ধরণের টানাপোড়েন কাটিয়ে উঠে ওরা বিয়ে করে্ন । নতুন করে শুরু হয় ওদের জীবন । সবই যখন ঠিক চলছিলো ঠিক তখনই এক নতুন দিকে মোড় নেয় ছবির গল্প । জার্মানির নাৎসিবাহিনী আস্তে আস্তে গোটা অস্ট্রিয়ার দখল নিতে থাকে । আর ভন ট্র্যাপকে তারা বাধ্য করে নিজেরই দেশ অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য । ক্যাপ্টেন ভন ট্র্যাপ কিছুতেই নিজের দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে রাজি হলেন না। তাই ঠিক হয় যে সপরিবারে তিনি রাতের অন্ধকারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন । কিন্তু শেষরক্ষা হয়না । সবাই ধরা পরে নাৎসিদের হাতে । তবুও বুদ্ধি খাটিয়ে , কিছু মানুষের সাহায্যে, ভন ট্র্যাপ পরিবার পায়ে হেঁটে পাহাড় অতিক্রম করে চলে যায় সুইজারল্যান্ডে।

ক্যাপ্টেন ভন ট্র্যাপের পরিবারের সাথে পরিচিত হচ্ছে মারিয়া
ধীরে ধীরে বাচ্চারা ভালবেসে ফেলে মারিয়াকে
খোলা প্রান্তরে সবাই মিলে গান করে
হাসি-আনন্দে ভরে ওঠে জীবন
জার্মানি দখল নিতে থাকে অস্ট্রিয়ার
ভন ট্র্যাপ পরিবার পেশাদার সঙ্গীতদল রূপে দেখা দেয়
নাৎসী বাহিনি পিছু ছাড়েনা তাদের
ক্যাপ্টেন ভল ট্র্যাপ পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়ে যেতে সক্ষম হন

গান মজা হুল্লোড়ে ভরপুর ছবিটা কিন্তু মোটেই সাদামাটা না । একটা পরিবারের মধ্যে দিয়ে যেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের গোটা অস্ট্রিয়ার এবং আশেপাশের দেশগুলির রাজনৈতিক ছবিটা আমরা দেখতে পাই । আর নিজেদের অজান্তেই আমাদের মনে জন্ম নেয় যুদ্ধের বিরুদ্ধ মনোভাব; 'স্বাধীনতা' শব্দের নানা অর্থ নতুন করে বুঝতে পারি।

এই ছবির গল্প কিন্তু পুরোপুরি কল্পিত নয়। ক্যাপ্টেন ভন ট্র্যাপ , মারিয়া ভন ট্র্যাপ , এবং তাঁদের ছেলেমেয়েরা কিন্তু রক্তমাংসের চরিত্র। মারিয়া ভন ট্র্যাপের তত্বাবধানে ভন ট্র্যাপ পরিবার হয়ে উঠেছিল এক পেশাদার গায়ক দল। তারা এক সময়ে ইওরোপের বিভিন্ন দেশে এবং আমেরিকাতে সঙ্গীতের অনুষ্ঠান পরিবেশন করত। 'সাইন্ড অফ মিউসিক' ছবিটির গল্পের অনুপ্রেরণা হল মারিয়া ভন ট্রাপের লেখা বই ' দ্য স্টোরি অফ দ্য ট্র্যাপ ফ্যামিলি সিঙ্গার্‌স্‌' ।যদিও, ফিল্ম রূপে গল্পটাকে বলার তাঁদের জীবনের কিছু ঘটনাকে রদবদল করে দেখানো হয়েছে। মারিয়া ভন ট্র্যাপ এবং ট্র্যাপ ফ্যামিলি সিঙ্গার্‌স্‌ -এর সম্পর্কে বহু জানা-অজানা তথ্য ছড়িয়ে আছে ইন্টারনেট-এ , তাই ইচ্ছা হলেই পড়ে দেখতে পার সেইসব ঘটনার কথা।

এখনও যদি ছবিটা না দেখে থাক, একটা ছুটির দিন দেখে ঝটপট দেখে নাও সাউণ্ড অব মিউসিক । ছবির গান, সুন্দর সুন্দর সুর, মনভোলানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে তোমাদের ভাল লাগবেই । এখানেই শেষ না ছবিটা দেখতে দেখতে কখন যে আমরা মারিয়া, ভন ট্র্যাপ, লিসেল, ফেড্রিকদের সাথে একাত্ম হয়ে যাই বুঝতেই পারিনা । এই ছবির গান 'ডো রে মি' বা 'সাম অফ মাই ফেভারিট থিংগ্‌স্‌' বিশ্বজুড়ে ইংরেজি ভাষী ছোট-বড় সব্বারই খুব পছন্দের গান।

তাই তো মুক্তির পঞ্চাশ বছর পরও একফোঁটাও কদর কমেনি সাউণ্ড অব মিউসিক এর । বরং সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষতও সালসবারগ-এ হইহই করে পালন করা হচ্ছে সাউণ্ড অব মিউসিক এর সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ । ওই যে ওই থিয়েটার তার কথা মনে আছে ? যেখানে দাঁড়িয়ে ভন ট্র্যাপের পরিবার শেষ গান গেয়েছিল ? হ্যাঁ ওই থিয়েটার তার নাম হল ফেলসেন্রাইতস্কুলা । ওই ফেলসেন্রাইতস্কুলা থিয়েটারে সাল্‌জ্‌বার্গ-এর ল্যান্ডসথিয়েটার সংস্থা এই বছর ১৭ই অক্টোবরে এক বর্ণময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে । যেখানে সাউন্ড অফ মিউজিকের বেশকিছু নির্বাচিত অংশ পরিবেশিত হবে ।

তাছাড়াও অন্যান্য চমকও কিন্তু রাখা হচ্ছে ওই অনুষ্ঠানটিতে । এছাড়াও সাল্‌জ্‌বার্গ-এ ২৬শে সেপ্টেম্বর থেকে ৬ই ডিসেম্বর অবধি 'সাউন্ড অব মিউজিক মিউসিক্যাল' নামে এক সাংগীতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ।

এছাড়াও বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থা 'সাউন্ড অফ মিউজিক ট্যুর' এর ও আয়োজন করেছে । যার মাধ্যমে ভ্রমনার্থীদের ছবির বিভিন্ন শ্যুটিং লোকেশানে নিয়ে যাওয়া হবে । নিয়ে যাওয়া হবে সেই জায়গাগুলোতে যেখানে আসল ভন ট্র্যাপ পরিবার বসবাস করত ।

আরও আছে । সাল্‌জ্‌বার্গের ম্যারিওনেট থিয়েটারে ভন ট্র্যাপ পরিবারকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আয়োজন করা হয়েছে এক পাপেট শো বা পুতুল নাচের অনুষ্ঠানের ।

সাল্‌জ্‌বার্গের স্টারব্রাও রেস্তরাঁ ও কিন্তু পিছিয়ে নেই । তারা তাদের রেস্তরাঁতেই 'সাউন্ড অব সাল্‌জ্‌বার্গ' নামে এক ডিনার শো আয়োজন করেছে ।এই বছরে মে মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এই শো ।

পুজোর ছুটিতে যদি ইউরোপে ভ্রমণের প্ল্যান থাকে তো একটু সময় বের করে টুক করে ঘুরে আসবে নাকি অস্ট্রিয়া ??


ছবিঃ ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট

দীপায়ন সাহা মাল্টিমিডিয়া ও অ্যানিমেশন নিয়ে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছেন। ইতিমধ্যেই দীপায়ন বেশ কিছু ছোট ফিল্ম, মিউজিক ভিডিও এবং বিজ্ঞাপনের জন্য নির্দেশক, সম্পাদক এবং সিনেমাটোগ্রাফরের ভূমিকায় কাজ করেছেন।

More articles from this author

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা