সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

একটু সকাল সকালই বেরোতে হয়, যাতে দশটার মধ্যে শ্রীরঙ্গপত্তনম পৌঁছে যাওয়া যায়। ব্যাঙ্গালোর থেকে মাইসোর রোড ধরে গেলে, আগের শ্রীরঙ্গপত্তনম আসে, তার খানিকটা পর মাইসোর শহর। ড্রাইভার আমার পরিচিত ছিল, তার সঙ্গে কথা বলে আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম, সক্কাল সক্কাল বেরোতে হবে। সেই মতই সে চলে এলো, একদম সকাল সাতটা... কি কি দেখার আছে তার লিস্ট, ছাতা, কেক-বিস্কিট-এর মত কিছু শুকনো খাবার, আর কিছু এটাসেটা একটা ব্যাগে ভরে দুগ্‌গা দুগ্‌গা বলে একদম সাতটা পনেরোর মধ্যেই আমরা শুরু করলাম আমাদের মাইসোর-যাত্রা। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, “ওহে, দশটা না হোক... অন্ততঃ সাড়ে দশটার মধ্যে পৌঁছতে পারব তো? রান আউট হব না তো?” সে আমার উদ্বেগকে হেসে উড়িয়ে দিয়ে কেবল বলল, “পরোয়া নেই সাব... একদম রাইট টাইম মে পহোচা দে গা” আমারও বেশ আশ্বস্ত লাগল, ভোর বেলা ওঠার জন্য তখনও চোখে ঘুম লেগে, ব্যাক সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বললাম, “তো ফির ব্রেকফাস্ট করনা হো, তো মুঝে বুলা লে না।” সেই যে চোখ বন্ধ করলাম, প্রথমে ঝিমুনি তারপর গভীর ঘুম... যখন খুললাম তখন গাড়ি মাইসোর রোডে চলছে... জানলা দিয়ে হু হু করে হাওয়া বইছে, আর বৃষ্টির হালকা ছাঁট... ব্যাঙ্গালোর কে পেছনে ফেলে এসেছি অনেক ক্ষণ... সামনে রামনগর (ওরা বলে রামানাগারা), মাইসোর যাওয়ার পথে ব্যাঙ্গালোর শহরের বাইরে প্রথম টাউন, বা মফঃস্বল।

ওই রামনগরের রাস্তায় আসতেই নড়েচড়ে বসলাম আবার, চোখ-মুখ মুছে চারপাশ দেখতে লাগলাম। মহেশ, মানে গাড়ির ড্রাইভার, রেয়ার ভিউতে মিররে আমাকে উঠে বসতে দেখে, সেই মিররের দিকে তাকিয়েই বলল, “সাব... ব্রেকফাস্ট হোনা?” আমি চারপাশ দেখে, চশমাটা চোখে লাগিয়ে বললুম, “হুম”। কিন্তু কোথায় কি, রাস্তার দু’ধারে একটার পর একটা দোকান যায়... তার মধ্যে ক’টা দক্ষিণ ভারতীয় জলখাবারের দোকানও পড়ল... কিন্তু বাবুর মন ভরে না। সে গাড়ির স্পিড কমিয়ে একটার পর একটা দোকান পেরিয়ে এগিয়ে চলে। শেষে অধৈর্য হয়ে বললাম, “একি মহেশ... একটা দোকানের সামনে পার্ক করো... রামনগর তো পার হয়ে যাবে এগোতে এগোতে!” সে ঠোঁট উলটে বলল, “আচ্চা নর্থ ইণ্ডিয়ান খানা ইধার নেই মিলতা সাব... ” এতক্ষণে বুঝলাম কেস টা কি! বেচারার দোষ নেই। এইখানে বাঙালি ট্যুরিস্ট, অথবা উত্তর ভারতীয় পরিবার বেড়াতে এলে, এই খাওয়া নিয়ে সত্যিই বেশ ধানাইপানাই করে। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, লোকজন ঠাট্টা করে বলে ‘বাঙালির মাছ ভাত না হলে চলে না’। কলকাতা ছাড়ার সময় বাড়ি থেকেও শুনতে হয়েছে ‘ও’খানকার খাবার... রোজ এভাবে চলবে কি করে... খাবি কি?” যেন, এইখানকার মানুষ এই খাবার খেয়ে কেউ বেঁচে নেই। এইসব শুনে কলকাতা ছাড়ার সময় থেকেই আমার জেদ চেপে গেছিল, বাইরে যেখানে থাকি সেখানকার খাবারই খাবো... “বাঙালি খাবার না পেলে আমার কি হবে!” - এই আদিখ্যেতাকে প্রশ্রয় দেবই না। মজার কথা, এইখানের খাবার অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর, তেলজল কম... কোনও বেয়াড়া উপদ্রব করে না পেটের ভেতর। আর কোথাও বেরোলে, আমি সেই জায়গার খাবারই খাই, শুধু পরিষ্কার হোটেল হলেই আমি খুশি। মহেশকে একটা হালকা দাবড়ানি দিয়ে বললাম, “দূর! ম্যায় সব খাতা হুঁ... তুম উস হোটেল কে সামনে সাইড করো!” ওই রামনগরেই একটা ছোটখাটো পরিষ্কার হোটেলে, অনিয়ন উত্থাপাম বলে একরকম খাবার খেয়ে পেট ভরিয়ে নিলাম। উত্থাপাম হ’ল, আমাদের এখানকার সেঁকা পরোটারই মত, কিন্তু আটা বা ময়দা’র বদলে, একরকম চালগুঁড়ো দিয়ে তৈরী হয়ে, তার ওপর অনিয়ন, মানে আ্ধ-ভাজা পেঁয়াজ ছড়িয়ে দেওয়া। কখন আবার দুপুরের খাওয়া হবে ঠিক নেই, ভাল কোথাও ব্রেকফাস্ট করতে পারলে, পেট ভরে খাওয়াই নিয়ম... এরকম দূরে কোথাও বেড়াতে বেরোলে এই নিয়মটা তুমিও মাথায় রেখো।
পুরোপুরি কলকাতার মানুষ হলেও, জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের নিবাস এখন ব্যাঙ্গালোর বা ব্যাঙ্গালুরু। কলকাতারই কলেজ থেকে বি টেক পাশ করে এখন একটি বহুজাতিক সংস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মী। বাংলা সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা থেকেই মাঝে মধ্যে একটু লেখা আর সময় সুযোগ হ'লে ব্যাগ গুছিয়ে কাছে-দূরে কোথাও বেরিয়ে পড়া, এই নিয়েই জয়দীপ। সেই সব বেড়াতে যাওয়ার নানা রকম অভিজ্ঞতা ছোটদের কাছে বলার ইচ্ছে বহুদিন। সেই ইচ্ছাপূরণ করতেই ইচ্ছামতীর ছোট্ট বন্ধুদের জন্য কলম ধরা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা